Advertisement
E-Paper

ছেলে ও তার দলের জন্য নবরাত্রির উপোস পৃথ্বীর বাবার

জীবনের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পরে এ বার হায়দরাবাদে দ্বিতীয় টেস্টেও আর এক মাইলফলকের সামনে ১৮ বছরের বিস্ময় তারকা।

রাজীব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৭
চর্চায়: বাবার সঙ্গে পৃথ্বী। ফাইল চিত্র

চর্চায়: বাবার সঙ্গে পৃথ্বী। ফাইল চিত্র

স্বপ্নপূরণের টেস্ট ম্যাচ ও রূপকথার অভিষেকের পরে তিনি এখন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা। মুম্বইয়ের শহরতলির বস্তি থেকে রাজকোটে ভারতীয় দলের ‘টেস্ট ক্যাপ’ পাওয়া পর্যন্ত পৃথ্বী শ-র জীবনযুদ্ধের কাহিনি সিনেমার পর্দায় বা ছোটদের পাঠ্যবইয়ে হয়তো উঠে আসবে কখনও। কিন্তু নায়ক পৃথ্বী ছাড়াও এই কাহিনির যদি কোনও সহনায়ক থেকে থাকেন, তা হলে তিনি অবশ্যই তাঁর বাবা পঙ্কজ শ।

জীবনের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পরে এ বার হায়দরাবাদে দ্বিতীয় টেস্টেও আর এক মাইলফলকের সামনে ১৮ বছরের বিস্ময় তারকা। জীবনের প্রথম দুই টেস্টেই সেঞ্চুরির নায়কদের ক্লাবে তিনি মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের পাশে জায়গা করে নিতে পারবেন কি না, তা দেখার অপেক্ষায় যখন সারা দেশ, তখন পঙ্কজ তাঁর ছেলের জন্য করছেন নবরাত্রির উপোস। ন’দিনের এই কঠিন নিয়ম পালন নিশ্চয়ই ছেলের সাফল্য কামনায়? ‘‘অবশ্যই। তবে এই ব্রত পালন শুধু আমার ছেলের জন্য নয়, দলের প্রত্যেকের শুভ কামনা করেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আমি’’, বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বই থেকে ফোনে এ কথা বলেন সেই গর্বিত বাবা, যাঁর ছেলে জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পর অকপটে বলেছিলেন, ‘‘এই সেঞ্চুরি বাবাকে উৎসর্গ করতে চাই। উনি আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এখনও করেন।’’ পৃথ্বী বোধহয় এতটুকুও ভুল বলেননি।

ভোর সাড়ে তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে ছেলের জন্য খাবার বানাতে আর পৃথ্বীকে ঘুম থেকে তুলে তৈরি করতে লেগে যেত ঘণ্টাখানেক। ভোর সাড়ে চারটেয় বিরার থেকে বেরিয়ে ট্রেনে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বান্দ্রার এমআইজি মাঠে ছেলেকে রোজ অনুশীলনে পৌঁছে দেওয়াটা ছিল তাঁর দৈনিক রুটিন।

ছোট্ট ছেলেটা যাতে ট্রেনের ভিড়ের চাপে চোট না পেয়ে যায়, তাই তাকে কাঁধে চাপিয়ে ট্রেনে উঠতেন এই লড়াকু বাবা। সারা দিন গাছের তলায় বসে হয় ছেলের অনুশীলন দেখা, নয় স্থানীয় বাজারে গিয়ে তার জন্য শস্তায় ক্রিকেট সরঞ্জামের খোঁজ করাই ছিল সারা দিন তাঁর কাজ।

অনুশীলন শেষে স্কুল। তার পরে সেই দীর্ঘ পথ পেরিয়েই আবার ঘরে ফেরা ও রুটি-সবজি বা কোনও কোনও দিন আন্ডা-ঘোটালা (ডিমের তরকারি) বানিয়ে দু’জনে মিলে খাওয়া আর রাত সাড়ে ন’টার মধ্যে শুয়ে পড়া। বছরের পর বছর এটাই ছিল বাবা ও ছেলের দিনপঞ্জী। যার ফল আজকের এই পৃথ্বী শ।

কঠিন লড়াইয়ের গল্প নিজের মুখে শোনাতে চান না পঙ্কজ। সংবাদমাধ্যম থেকে সাধারণত দূরেই থাকেন তিনি। তাই সে দিন ছেলের সেঞ্চুরির পরে নিজের মোবাইল বন্ধ করে রেখে মুম্বইয়ের বাড়ি থেকেও উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকরা কেউ তাঁর নাগাল পাননি। বুধবার রাতে হায়দরাবাদে টেস্ট শুরুর আগে হঠাৎ ফোনে তাঁকে পেয়ে যাওয়ার পর সে দিনের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে পঙ্কজ বলেন, ‘‘সে দিন আমার শরীর ভাল ছিল না বলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। বাড়িতে একা থাকি। শরীর খারাপ হলে কে-ই বা দেখবে? তাই বাড়িতে ছিলাম না। তবে আমি ওর খেলা দেখতে কোথাও যাইও না। টিভিতেও দেখি না সাধারণত।’’

পৃথ্বীর এই রূপকথার অভিষেক ও সেঞ্চুরি তাঁকে উৎসর্গ করা নিয়ে কম কথার মানুষ পঙ্কজ বলেন, ‘‘ওর মধ্যে এই প্রতিভা দেখেছিলাম বলেই তো ওকে নিয়ে এত লড়াই করেছি। জানতাম ও টেস্ট খেলবে। পুরোটাই ওর কৃতিত্ব। বাবা হিসেবে আমি কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। ও আমাকে ভীষণ ভালবাসে বলেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে আমার কথা বলেছে। ছেলে সফল হলে কোন বাবার না ভাল লাগে?’’

ছেলেকে বড় ক্রিকেটার গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা নিয়ে সুরত ও বডোদরায় জামা-কাপড়ের চালু ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন পঙ্কজ। তার আগে ব্যবসা থেকে যা সঞ্চয় হয়েছিল, তা দিয়েই ছেলেকে বড় ক্রিকেটার গড়ে তুলবেন, এই সংকল্প নিয়ে। সেই নিয়ে অবশ্য বেশি কিছু বলতে চান না তিনি। শুধু বলেন, ‘‘ছেলের প্রতি আস্থা ছিল বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।’’

নতুন এক মাইলফলকের সামনে পৃথ্বী। জীবনের দ্বিতীয় টেস্টেও সেঞ্চুরি করে আজহার, সৌরভদের ছুঁতে পারেন তিনি। তবে তাঁর বাবার চাই আরও কিছু। তাঁর ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক বললেন, ‘‘শুধু দ্বিতীয় টেস্ট কেন, আমি তো চাই পৃথ্বী প্রতি টেস্টেই সেঞ্চুরি করুক, দলকে জেতাক। বাকিটা গণপতিবাপ্পার ইচ্ছে।’’

Cricket Test India West Indies Prithvi Shaw
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy