Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সহবাগের পথে রোহিত হয়তো টেস্টে ওপেনার

অ্যান্টিগায় সেঞ্চুরির আগে দু’বছর ধরে টেস্টে কোনও তিন অঙ্কের রান পাননি রাহানে। দ্রুত সমর্থন হারাচ্ছিলেন তিনি। অধিনায়ক বিরাট কোহালি পাশে না-দাঁড়ালে টেস্ট জীবনই অনিশ্চয়তার খাদে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।

অপেক্ষা: টেস্টে কি ওপেনার রোহিতকে দেখা যাবে? ফাইল চিত্র

অপেক্ষা: টেস্টে কি ওপেনার রোহিতকে দেখা যাবে? ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৪০
Share: Save:

টেস্ট জীবনকে বাঁচানোর জন্য রোহিত শর্মাকে হয়তো বীরেন্দ্র সহবাগের পথই অনুসরণ করতে হবে। সৌরভ-সচিন-রাহুল-লক্ষ্মণের যুগে সহবাগকে মিডল অর্ডার ছেড়ে ওপেনারের বেশভূষা নিতে হয়েছিল। সেই পরিবর্তন সুপারহিট হয়ে ঝড় তুলে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটে। অধিনায়ক সৌরভের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ওপেনার হওয়া সহবাগ টেস্ট ব্যাটিংকেই পাল্টে দিয়ে গিয়েছিলেন।

এ বার হয়তো চেতেশ্বর পুজারা, বিরাট কোহালি, অজিঙ্ক রাহানেদের ভিড়ে রোহিতকে ওয়ান ডে-র মতো টেস্টেও ওপেন করার কথা ভাবতে হবে। বিশ্বকাপে পাঁচটা সেঞ্চুরি করে আসার পরে রোহিতকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দু’টি টেস্টেই বসে থাকতে হয়েছে। সুযোগ পেয়ে ছয় নম্বর ব্যাটসম্যানের দরজায় তালাচাবি লাগিয়ে দিয়েছেন বিহারী। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ হোয়াইটওয়াশ করা সিরিজে ভারতীয় দলের হয়ে সব চেয়ে বেশি রান করা দুই ব্যাটসম্যানের নাম হনুমা বিহারী এবং অজিঙ্ক রাহানে। চার ইনিংসে বিহারী করেছেন ২৮৯। গড় ৯৬.৩৩। অজিঙ্কের চার ইনিংসে সংগ্রহ ২৭১ রান। গড় ৯০.৩৩। টেস্ট সিরিজে মাত্র দু’টি সেঞ্চুরি হয়েছে। যা এসেছে হনুমা এবং অজিঙ্কের ব্যাট থেকে। কে বলবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে এই দুই ব্যাটসম্যানের মাথার উপরেই ঘুরছিল কালো মেঘ!

অ্যান্টিগায় সেঞ্চুরির আগে দু’বছর ধরে টেস্টে কোনও তিন অঙ্কের রান পাননি রাহানে। দ্রুত সমর্থন হারাচ্ছিলেন তিনি। অধিনায়ক বিরাট কোহালি পাশে না-দাঁড়ালে টেস্ট জীবনই অনিশ্চয়তার খাদে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। রাহানের কাছে ক্যারিবিয়ান সফর ছিল এসপার-ওসপার সিরিজ। রান করে নিজের অবস্থানই শুধু পাকা করেননি, অধিনায়কের মুখরক্ষাও করেছেন। আর হনুমাকে খেলানো হয় এমন একটা পরিস্থিতিতে যখন দেশের ক্রিকেট মহলে গরিষ্ঠ অংশের দাবি ছিল, বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে আসা রোহিতকে ছয় নম্বরে খেলাও।

কোহালির দলে একটা মারাত্মক ঘাটতি সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সৌরভদের সেই দলে উপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অনেকে বল করতে পারতেন। যেমন সৌরভ নিজে হামেশাই তৃতীয় পেসারের কাজ দারুণ ভাবে করে দিয়েছেন। সচিন, সহবাগ যথেষ্ট ভাল বল করতে পারতেন। এমনকি, রাহুল দ্রাবিড়ও একটা সময়ে বল করেছেন। কিন্তু কোহালির এই দলে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র বল করতে পারেন বিহারী। যদিও বিশুদ্ধবাদীরা এখনই তাঁর ব্যাটিং ভঙ্গি বা টেকনিককে লেটার মার্কস দিতে নারাজ। এঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্যাট কামিন্সদের সামনে বিহারীকে খুব সাবলীল দেখায়নি। বাউন্সার বৃষ্টির সামনে ব্যাটের চেয়ে হেলমেট বেশি ব্যবহার করছিলেন। এমনও বলা হচ্ছে যে, বর্তমান এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে রান করা দেখে কোনও উপসংহারে না-পৌঁছনোই ভাল।

হায়দরাবাদ থেকে এলেও বিহারী কোনও ভিভিএস লক্ষ্মণ নন। লক্ষ্মণের শিল্প নেই তাঁর ব্যাটিংয়ে। কিন্তু পূর্বসূরির শৃঙ্খলা এবং সাহস আছে। এর সঙ্গে অফস্পিনার হিসেবে কয়েক ওভার হাত ঘোরাতে পারা। সব মিলিয়ে পরিশ্রমী বিহারী আপাতত গ্রহণযোগ্য ‘প্যাকেজ’। বরং ভারতীয় ক্রিকেট জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে কে এল রাহুলকে নিয়ে। বারবার তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন এবং বারবার তাঁকে খেলিয়েই যাওয়া হচ্ছে। ক্রিকেট মহলে রসিকতা চালু হয়ে গিয়েছে যে, রাহুল যা রান করছেন, তার চেয়ে শরীরে ট্যাটুর সংখ্যা বেশি। এই সিরিজে দুই ওপেনারেরই ফর্ম শোচনীয়। মায়াঙ্ক আগরওয়ালের ব্যাটিং গড় ২০। রাহুলের ২৫। মায়াঙ্ককে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া ভাবা হচ্ছে। তাই তিনি আরও সুযোগ পাবেন। কিন্তু রাহুলকে নিয়ে এটা প্রমাণিত যে, গাওস্কর-বিনু মাঁকড়-পঙ্কজ রায়দের দেশে তৈরি হওয়া ওপেনারদের মরুভূমিতে তিনি আসলে মরীচিকাই মাত্র।

রাহুলকে নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের জেরেই রোহিত-প্রকল্প চালু হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কোহালিদের এর পরের টেস্ট সিরিজ দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। সেখানে মায়াঙ্কের সঙ্গে রোহিতকে ওপেনে ভাবা হলে অবাক হওয়ার থাকবে না। কেউ কেউ সদ্যসমাপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই রোহিতকে ওপেন করানোর পক্ষে ছিলেন। রাহুলকে শেষ সুযোগ দেওয়ার কথা ওঠে। সেই শেষ সুযোগের এ বার অন্তত ‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরিয়ে যাওয়া উচিত।

ওয়াকিবহাল মহলে কারও কারও মনে হচ্ছে, মিডল অর্ডারের দরজা যে আর ‘চিচিং ফাঁক’ বললেই খুলবে না, রোহিত নিজেও বুঝেছেন। তাই ওপেন করার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে দল পরিচালন সমিতি থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হতে পারে বলেই খবর। প্রয়োজনে তাঁকে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচে ওপেনার হিসেবে খেলিয়ে নেওয়া হতে পারে।

বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রোহিত শেষ পর্যন্ত সহবাগ হবেন, নাকি ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের কাশেম?

সময়ই বলবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE