Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রোনাল্ডোর দুই পৃথিবী

কোথাও স্নেহশীল পিতা, কোথাও দলবদলের বিতর্ক

দুই পৃথিবীকে তিনি একদম গুলিয়ে ফেলেন না। বেশ কিছু দিন আগে ইংল্যান্ডের এক বিখ্যাত দৈনিক সাক্ষাৎকার নিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। সিআর সেভেনকে তখন বলতে শোনা গিয়েছিল, “পরিবার আমার কাছে, পরিবারের জায়গায়। ফুটবল, ফুটবলের জায়গায়। তবে পরিবার সবার আগে। আমার ছেলে যেমন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

‘ড্যাডি’স ডে আউট!’ ছবি: টুইটার

‘ড্যাডি’স ডে আউট!’ ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০১
Share: Save:

দুই পৃথিবীকে তিনি একদম গুলিয়ে ফেলেন না।

বেশ কিছু দিন আগে ইংল্যান্ডের এক বিখ্যাত দৈনিক সাক্ষাৎকার নিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। সিআর সেভেনকে তখন বলতে শোনা গিয়েছিল, “পরিবার আমার কাছে, পরিবারের জায়গায়। ফুটবল, ফুটবলের জায়গায়। তবে পরিবার সবার আগে। আমার ছেলে যেমন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

পর্তুগিজ মহাতারকা ওটা যে কথার কথা সে দিন বলেননি, তার প্রমাণ ওই দৈনিকই সর্বপ্রথম আজ পেল। দেখল, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো সিনিয়রের হাত ধরে স্কুল যাচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো জুনিয়র। চার বছরের খুদের ব্যাকপ্যাক হাতে, ছেলেকেও স্পোর্টসওয়্যার পরিয়ে মজার জোক্স বলতে-বলতে স্কুলের গেট পেরোচ্ছেন সিআর সেভেন। হাসছেন। রাস্তা পেরোনোর সময় আবার মুখচোখে টেনশন। গাড়ি আসছে কি না, দেখতে হবে।

সপ্তাহের প্রথম দিনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ‘সুপার ড্যাড’। শুধু পিতা। যিনি প্রথমে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছলেন, পরে অনুশীলনে গেলেন।

সপ্তাহের প্রথম দিনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো টিভিতে। কাগজে। বিতর্কে। রোনাল্ডো নাকি রিয়াল ছাড়ছেন!

রোনাল্ডোর সন্তানের মা কে, আজ পর্যন্ত কোথাও বলেননি রোনাল্ডো। মিডিয়া শত চেষ্টাতেও জানতে পারেনি।

রোনাল্ডো আগামী মরসুমে কোথায় যাচ্ছেন, তা-ও নিশ্চিত করে জানা গেল না। রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফিওরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে তাঁর মতান্তর। ‘রোনাল্ডো রিয়ালে ভাল নেই’ বলে দি মারিয়ার খোঁচা দেওয়া। তাঁকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব দেওয়া নিয়ে জল্পনা। কিন্তু এত ইঙ্গিত পাওয়ার পরেও নিশ্চিত হওয়া গেল না, আগামী মরসুমে সত্যিই রেড ডেভিলসের জার্সি সিআর সেভেনের গায়ে উঠছে কি না।

শুধু রোনাল্ডো কেন? তাঁর বান্ধবীও সোমবার গোটা দিন ধরে ভুগিয়ে গেলেন মিডিয়াকে। কেউ কেউ অত্যুৎসাহী হয়ে এ দিন ইরিনা শায়েকের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। রোনাল্ডোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বয়স চার, জুনিয়র রোনাল্ডোর বয়সও চার। কিন্তু দেখা গেল জুনিয়র রোনাল্ডো যখন স্কুলের গেট পেরিয়ে ঢুকছে, রুশ সুপারমডেল তখন নিউ ইয়র্কে ব্যস্ত। রাতের দিকে ফুটবল বিশ্ব যখন রোনাল্ডোর ম্যান ইউ যাওয়া নিয়ে উত্তেজিত, তখন ইরিনা বলে বসলেন, ম্যাঞ্চেস্টার নয়। তাঁর পছন্দ প্যারিস। “প্যারিস আমার খুব পছন্দের। ওখানকার মানুষও। আমি কি তা হলে ক্রিশ্চিয়ানোকে প্যারিস সাঁ জাঁ-য় খেলতে বলব?”

এবং বিশ্ব আবার বজ্রাহত।

রোনাল্ডোর পেশার পৃথিবীতে ঝড়টা উঠল দি মারিয়া মুখ খোলার পর। আর্জেন্তিনীয় তারকাকে রিয়ালের ছেড়ে দেওয়া মোটেও পছন্দ হয়নি রোনাল্ডোর। ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করেছিলেন দি মারিয়াকে রাখতে। কিন্তু পেরেজ শোনেননি। চূড়ান্ত হতাশ রোনাল্ডো বলে দিয়েছিলেন, রিয়াল আর ভাল খেলবে কী করে, তিনি জানেন না। অবস্থা বুঝে দি মারিয়া এ দিন আবার বলে দেন, “আমি জানি রোনাল্ডো রিয়ালে ভাল নেই। কত দিন ওখানে টিকবে, সন্দেহ আছে।”

আগুনে তাতে আরও ঘি যোগ হয়েছে। কারণ রিয়াল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতান্তরের পরপরই রোনাল্ডোর মুখে আচমকাই ম্যাঞ্চেস্টার-প্রীতির কথা শোনা গিয়েছিল। যেখানে তিনি ম্যাঞ্চেস্টারকে পুরনো ‘ঘর’ বলেছিলেন, বলেছিলেন তিনি সেখানে এক দিন ফিরে যাবেন। বলেছিলেন, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তাঁর হদয়ে! দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে, রোনাল্ডোকে পেতে বিশাল অঙ্ক নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে ম্যাঞ্চেস্টার। এ বার নয়, কারণ এ বার ম্যাঞ্চেস্টার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলছে না। খুব সম্ভবত পরের বার। লোনে নেওয়া রাদামেল ফালকাওকে তারা পরের বছর দিয়ে দেবে রিয়ালকে। বদলে রোনাল্ডোকে নেবে, বিশাল অঙ্ক দিয়ে। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, দি মারিয়া বা ফালকাও ম্যাঞ্চেস্টারে গিয়ে যে অর্থ পাচ্ছেন, ব্যালন ডি’অর জেতা ফুটবলার রিয়ালে তার চেয়ে কম পাচ্ছেন!


ঘরের মাঠে আলবেনিয়ার কাছে হার। মাথা হেঁট রোনাল্ডো-হীন পর্তুগালের। ছবি: এএফপি

কিন্তু রিয়াল ছাড়বে তো? একটা রোনাল্ডো থাকা না থাকায় কী হয়, বিশ্বকাপ থেকেই পর্তুগাল টের পাচ্ছে। ইউরো কোয়ালিফায়ারে আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে রোনাল্ডো চোটের কারণে নামতে পারলেন না, পর্তুগালও ০-১ হেরে গেল। পর্তুগাল কোচ পাওলো বেন্তোকে যার পর যাচ্ছেতাই গালাগাল খেতে হয়েছে সমর্থকদের। রোনাল্ডোকে ছেড়ে দিলে যদি পর্তুগালের দশা হয়, পেরেজকেও খেতে হবে না কে বলতে পারে?

রোনাল্ডো ম্যাঞ্চেস্টার যাচ্ছেন, তাই এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ঠিক যেমন জুনিয়র রোনাল্ডোর স্কুলে যাওয়ার দিনেও কেউ জানতে পারল না তার মাতৃপরিচয়।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আসলে ব্যক্তিগত আর পেশাদার পৃথিবী গুলোন না যেমন, তেমন একটা ব্যাপার ‘কমন’-ও রেখে দেন।

দু’টো পৃথিবীই গোপন রাখতে তিনি বড় ভালবাসেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE