Advertisement
E-Paper

রাসেল রাত ভুলিয়ে দিল নারিন-রহস্য

মাসখানেক আগে মধ্যরাতের ইডেন কেঁপে উঠেছিল একটা গানের সদম্ভ প্রতিধ্বনিতে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টি জিতে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানের অনুরণনে।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:৩৬

কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৬৪-৩
কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব ১৫৭-৯

মাসখানেক আগে মধ্যরাতের ইডেন কেঁপে উঠেছিল একটা গানের সদম্ভ প্রতিধ্বনিতে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টি জিতে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘চ্যাম্পিয়ন’ গানের অনুরণনে।

মাসখানেক পরের ইডেন, এ দিনও প্রায় মধ্যরাত। আর কল্পনা করে নেওয়া যায়, আজও ইডেনের কোণে-কোণে নিঃশব্দে ধ্বনিত হচ্ছে ওই গানটা। শব্দগুলো একটু এ দিক-ও দিক করে নেওয়া হয়েছে, এই যা।

ক্রিস গেইল, ডারেন স্যামি, ডোয়েন ব্র্যাভো নয়। এই গানটা এ রকম:

রবিন ইজ এ চ্যাম্পিয়ন!

গোতি ইজ এ চ্যাম্পিয়ন!

পাঠান ইজ আ চ্যাম্পিয়ন!

পি-সি ইজ এ চ্যাম্পিয়ন!

রাসেল ইজ এ চ্যাম্পিয়ন!

না, বুধবারের ইডেনে কোনও কাপ জয়ের যুদ্ধ ছিল না। ছিল আইপিএলের একটা ম্যাচ। তা-ও প্লে-অফ নয়, গ্রুপ পর্বের। এই ম্যাচের ফলাফলের উপর নাইটদের প্লে-অফ যাত্রা নির্ভর করে ছিল না। কিন্তু নির্ভর করে ছিল অন্য কিছু। যার গুরুত্ব পয়েন্ট দিয়ে বিচার করা যাবে না, আবার উপেক্ষা করাটাও হবে ঘোর বোকামি।

বুধবার ছিল কেকেআরের হোম ম্যাচ পর্বের দ্বিতীয় ইনিংস। যে ম্যাচ জিতে এই পর্ব শুরু করাটা কত গুরুত্বপূর্ণ, নাইট সংসারের নবতম সদস্যও জানেন। আর এই ম্যাচ শেষবেলায় উত্তেজনার যে মারাত্মক রোলারকোস্টারে চেপে বসেছিল, তাতে আজকের জয়টা ম্যাচ-পয়েন্ট নয়, আত্মবিশ্বাসের পয়েন্ট বাড়িয়ে রাখার জন্য নাইটদের ভীষণ, ভীষণ দরকার ছিল।

আর কী জয়টাই না ছিনিয়ে নিল কেকেআর! শাহরুখ খানের সিনেমার মশলাদার স্ক্রিপ্ট বললেও তো কম বলা হবে। আইপিএল নাইনটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটানোর পর আজই নিদ্রাভঙ্গ হল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। ম্যাক্সওয়েল থেকে ম্যাড ম্যাক্স হয়ে উঠলেন বিস্ফোরক অস্ট্রেলীয় আর কিংগস ইলেভেন পঞ্জাবকে তিনি নিয়ে গেলেন জয়ের খুব কাছে। ৪২ বলে ৬৮, আধ-ডজন বাউন্ডারি আর চারটে ওভার বাউন্ডারি মেরে ম্যাক্সওয়েল যখন ডাগআউটে ফিরলেন, পঞ্জাবের দরকার ২৬ বলে ৪৫। টি-টোয়েন্টির পৃথিবীতে যা জলভাত। আঠারো নম্বর ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে নেমেই পরপর দুটো ছক্কা মেরে যেন সেটা বুঝিয়েও দিলেন অক্ষর পটেল।

কিং সাইজ ফুটবল। ছেলে আব্রামের সঙ্গে শাহরুখ।

দু’ওভারে দরকার ২২, ইডেনে এ বার প্রথম ম্যাচ দেখতে আসা শাহরুখ খানের যে মুখ জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল তাকে মুখ নয়, টেনশনের মানচিত্র বলা ভাল!

মর্নি মর্কেলের উনিশ নম্বর ওভারে উঠল দশ, শেষ ওভারে চাই বারো, বল হাতে ফিরলেন রাসেল। আর ওই চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে যে ওভারটা বল করলেন, তার প্রতিটা ডেলিভারি সোনায় বাঁধিয়ে নাইট-মিউজিয়ামে রেখে দেওয়া যায়। প্রথম বলে মাত্র এক রান, দু’নম্বর বলটা করে ফলো-থ্রু শেষ করতে না করতে বিদ্যুতগতিতে নন-স্ট্রাইকার অক্ষর পটেলকে রান আউট। ঠিক পরের বলে রান আউট পঞ্জাবের আরও এক ব্যাটসম্যান। এক বলের ব্যবধানে রাসেল তুলে নিলেন ওভারের তিন নম্বর এবং নিজের চতুর্থ উইকেট। চূড়ান্ত অনিশ্চিত ম্যাচের চিত্রনাট্য শেষে টিমকে, টিম মালিককে উপহার দিলেন উল্লাসের ক্লাইম্যাক্স।

ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে রাসেল বলছিলেন, এই চাপটাই নাকি তাঁর বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ ঘটায়। সবার শেষে ব্যাট করে উঠে আবার সবার আগে বল করতে নামতে হবে— এটা নাকি তাঁর কাছে পরম উপভোগ্য! বলছিলেন, ম্যাচের সেরার পুরস্কার দিতে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরা শাহরুখ খানই তাঁর সবচেয়ে বড় মোটিভেটর।

বুধবার রাতটা যদি ‘রাসেল দ্য সুপারম্যানের’ হয়ে থাকে, তো সন্ধেটা ছিল নিঃসন্দেহে ব্যাটম্যান এবং রবিনের। মানে, গৌতম গম্ভীর আর রবিন উথাপ্পার। এ বারের আইপিএলে নাইট ওপেনিং জুটির এটাই (১০১) সর্বোচ্চ রান। শেষ দিকে সন্দীপ শর্মাদের কৃপণ বোলিংয়ের সামনে যে নাইট ব্যাটিং থমকে গেল, তাতে গোতি-রবিনের ওই জুটির গুরুত্ব যেন আরও বেশি দেখাচ্ছে ম্যাচ শেষে।

গৌতম গম্ভীর তাঁর আইপিএল হাফসেঞ্চুরির ঝুলিতে আরও একটা পঞ্চাশ রানের ইনিংস ভরলেন। কিন্তু নাইট অধিনায়ক ব্যাটম্যানের চেয়ে তাঁর ডেপুটি রবিন এ দিন বেশি আকর্ষক, বেশি অনায়াস ক্রিকেট খেলছিলেন। ৪৯ বলে উথাপ্পার ৭০ রানে ছিল ছ’টা বাউন্ডারি, দুটো ছয়। ম্যাচের শেষটা যদি লেখা থাকে ধূর্ত রাসেলের নামে, আলোচ্য বিষয় যদি হয় ক্যারিবিয়ানের অবিশ্বাস্য বোলিং, তা হলে ম্যাচের শুরুটা তাঁর, রবিন উথাপ্পার। যাঁর ব্যাটিং এখন শিল্প-শক্তির অপূর্ব মোহনা।

রবিন-রাসেল জোড়া কালবৈশাখীর জেরে নাইট সংসারে বুধবার রাতটা খুব আনন্দের, খুব স্বস্তির। কিন্তু এর মধ্যেও একটা কাঁটা থেকে যাচ্ছে। ছোট নয়, বেশ বড়সড়ই।

কাঁটার নাম সুনীল নারিন!

কেকেআর-স্টাইল। রাসেল-ইউসুফদের। বুধবার ইডেনে। ছবি-উৎপল সরকার

টসের সময় গৌতম গম্ভীর শুধু বলে গিয়েছিলেন, নারিনের জায়গায় ব্র্যাড হগকে খেলানো হচ্ছে। ম্যাচ চলাকালীন কেকেআরের এক কর্তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, নারিন ইদানীং সে ভাবে ফর্মে নেই। তাই বসানো হয়েছে। কিন্তু ম্যাচ শেষে আন্দ্রে রাসেল যা বলে গেলেন, তাতে খচখচানিটা আবার ফিরে আসবে। রাসেল যে বলে গেলেন, নারিনের ডান হাতে চোট! কবে ম্যাচ ফিট হবেন, পরের ম্যাচে খেলবেন কি না, নিশ্চিত নয়। কিন্তু তা হলে সত্যিটা কী? চোট? নাকি বসানো হয়েছে? বসানো যদি হয়, তা হলে কিন্তু এটাই প্রথম।

নারিন যে কারণেই না খেলুন, খারাপ খবর নিঃসন্দেহে। কিন্তু নাইট সংসার কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো কি? বুধবারের জয়ের পরে বলতেই হবে, না। আর কেকেআর নীতি তো বলে, এই টিমে ব্যক্তিবিশেষের অনেক আগে সমষ্টি। তা সে ব্যক্তির নাম যতই সুনীল নারিন হোক না কেন!

Russell Sunil Narine ipl 2016 MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy