Advertisement
E-Paper

‘এস’ সন্ত্রাস ফিরিয়ে ইতিহাসে ঢুকতে চাইছেন শিল্টনরা

নামের আদ্যাক্ষর ‘এস’ দিয়ে শুরু হওয়া অধিনায়কদের সাফল্য আপনার ক্লাবে সবথেকে বেশি, জানেন? প্রশ্ন শুনে চমকে যান মোহনবাগানের অধিনায়ক শিল্টন পাল। তারপর হাসতে হাসতে বলে দেন, ‘‘মনে আছে মরসুমের শুরুতে আমাকে অধিনায়ক করার সময় এক কর্তা এটা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি পরিশ্রম করে সাফল্য পাওয়ায় বিশ্বাসী। তা হলেও বলছি, অনেক কিছুর সঙ্গে এটাও কিন্তু বেঙ্গালুরুতে ট্রফি জিততে যাওয়ার আগে আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’’

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০৩:২৫
পরীক্ষা শিল্টনের। বাগান প্র্যাকটিসে শিল্টনের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।

পরীক্ষা শিল্টনের। বাগান প্র্যাকটিসে শিল্টনের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।

নামের আদ্যাক্ষর ‘এস’ দিয়ে শুরু হওয়া অধিনায়কদের সাফল্য আপনার ক্লাবে সবথেকে বেশি, জানেন?

প্রশ্ন শুনে চমকে যান মোহনবাগানের অধিনায়ক শিল্টন পাল। তারপর হাসতে হাসতে বলে দেন, ‘‘মনে আছে মরসুমের শুরুতে আমাকে অধিনায়ক করার সময় এক কর্তা এটা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি পরিশ্রম করে সাফল্য পাওয়ায় বিশ্বাসী। তা হলেও বলছি, অনেক কিছুর সঙ্গে এটাও কিন্তু বেঙ্গালুরুতে ট্রফি জিততে যাওয়ার আগে আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’’

মিথ হতে পারে। হতে পারে কাকতালীয় ঘটনা। কিন্ত শতবর্ষ পেরনো ক্লাবের পরিসংখ্যান বলছে, বাগানের বেশিরভাগ চমকপ্রদ সাফল্য এবং ট্রফি সবথেকে বেশি বার উঠেছে ‘এস’ শব্দের অধিনায়কদের হাতেই।

সেটা কেমন?

শৈলেন মান্না— ছয় বছর টানা অধিনায়ক হয়ে দেশের সব ট্রফি জিতেছেন।

সুবিমল (চুনী) গোস্বামী— টানা পাঁচ বার অধিনায়ক হয়ে এগারোটা ট্রফি জিতেছেন। দু’বার করে জিতেছেন অনেক ট্রফি। শুধু জেতেননি রোভার্স কাপ।

সুব্রত ভট্টাচার্য— সতেরো বছর খেলে ৫২ টা ট্রফি। ফেড কাপ, ত্রিমুকুট-সহ দেশের কোনও ট্রফি তাঁর অধরা নয়। তাঁর ফুটবলার জীবনে আই লিগ ছিল না। কিন্তু কোচ হিসেবে ‘বাবলু’ জিতেছেন আই লিগ।

সত্যজিৎ চট্রোপাধ্যায়— বাগানের হয়ে পনেরো বছর খেলে ৪০ ট্রফি। ফেড কাপ তো আছেই, বেঙ্গালুরুতে এ বারের টিমের ম্যানেজার হয়ে খেতাব জিততে আসা সত্য নিজেই জিতেছেন বাগানের পাওয়া তিনটে আই লিগের দু’টোই।

না, ক্লাবের ইতিহাসে এঁদের সাফল্যের ধারেকাছে কেউ নেই।

আর এ বারের অধিনায়ক শিল্টন পাল— গত ন’বছরে ওই চার ‘এস’ এর মতো প্রায় ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছেন। ফেড কাপ সহ লিগ, শিল্ড সব জিতেছেন। কিন্তু পাননি শুধু আই লিগ। ছয় বছর আগে তীরে এসেও নৌকোয় ওঠেনি আই লিগ।

তেরো বছর পর বাগান কিপার কি সেই অধরা খেতাব জিতে মিথ-এর সঙ্গী হবেন? চোটের কারণে মরসুমে বারবার ছিটকে গিয়েও শুধু জেদ আর কঠোর-কঠিন অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে আসা বাগান কিপারের জবাব, ‘‘যাঁদের সঙ্গে আমার নামের তুলনা হচ্ছে তাঁরা অনেক মহান। তবে বলতে পারি রবিবারের রাতটা যদি আমাদের হয় তা হলে একটা স্বপ্ন সফল হবে। পাঁচ বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব।’’

বেঙ্গালুরুতে কাপ ফাইনাল খেলতে নামার আগে সবুজ-মেরুন শিবিরে সনি-বোয়ার সঙ্গে কিন্তু বাড়তি ভরসা জোগাচ্ছে শিল্টনের নামের শুরুর অক্ষরটা। ফেসবুক ভরে যাচ্ছে মিথের আবেগে। অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত সগর্বে বলছিলেন, ‘‘লুকোব না। শিল্টনের নামের প্রথম অক্ষরটা কিন্তু আমাদের ভরসা জোগাচ্ছে। সই করিয়ে ওকে অধিনায়ক করার সময় এটা মাথায় রেখেছিলাম আমরা।’’ যা শুনে বাগানের কিংবদন্তি চুনী গোস্বামীর মন্তব্য, ‘‘কেন জানি না মনটা কেমন খচখচ করছে। আমার কাছে এই মিথটা কাকতালীয়। কিন্তু চাই ওটা অন্তত এ বার থাকুক। চাই শিল্টনের হাতে কাপটা উঠুক।’’

বাগানে ‘এস’-র মাহাত্ম্য আর মিথ আটকাতে অবশ্য রবিবার নতুন গান বাঁধছে সুনীল ছেত্রী-শন রুনিদের ক্লাব। টিম যেখানে যায় সেখানেই হাজির হন ‘ওয়েস্ট ব্লক এ’ নামের বেঙ্গালুরুর ফ্যানস ক্লাবের সদস্যরা। বুধবার রাতে হংকং থেকে এএফসি কাপ খেলে ফেরায় এ দিন অ্যাশলে ওয়েস্টউডের টিমের কোনও অনুশীলন ছিল না। কিন্তু ভারতে বছরের সবথেকে আকর্ষণীয় ফুটবল-যুদ্ধ দেখতে মাঠে যাওয়ার আগে তাঁদের সমর্থকরা বিশ্রাম নেননি। বৃহস্পতিবার রাতে বেঙ্গালুরু ফুটবল স্টেডিয়ামের পাশের একটি বাড়িতে চলছে নতুন গানের রিহার্সাল। লিরিকটা বেশ মজার। বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘‘প্রথম বছরে আই লিগ-ফেড কাপ, ইতিহাসে আমরা। এ বারও হবে ইতিহাস।’’ এর পাশাপাশি শন রুনি, সুনীল-রবিনদের নাম নিয়েও চলছিল গানের মহড়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আই টি-র শহরে পনেরো হাজারের স্টেডিয়ামের টিকিট অনেকটাই শেষ। কিন্তু বেঙ্গালুরু সমর্থকদের বৃন্দগান আটকাতে কত জন গাইতে আসবেন, ‘‘….আমাদের খুঁজলে পাবে সোনায় মোড়া ইতিহাসে।’’

কলকাতায় শুনে এসেছিলাম বাগান সমর্থকরা না কি কিনে নিয়েছেন মাঠের অর্ধেক টিকিট! কিন্তু বেঙ্গালুরুর কর্তারা জানাচ্ছেন, মোহনবাগান ব্লকের পাঁচশোর মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। সেটাই বা কম কিসে! কিন্তু যেটা আরও শোনা যাচ্ছে তা হল, এখানকার অনেক প্রবাসী চাকুরে বঙ্গসন্তান টিকিট কেটে রেখেছেন অন্য গ্যালারির।

ক্রিকেটের শহর বলে পরিচিত বেঙ্গালুরুতে এমনিতে ঢুকলে বোঝা যাচ্ছে না শহরের একটা টিম দেশের ফুটবলে জন্মলগ্নেই জোড়া আই লিগ জেতার ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে। হোর্ডিং, ব্যানার দেখলাম না কোথাও। আসলে যা হচ্ছে সব কম্পিউটার মাউসে। ক্লাবের ওয়েবসাইটে। ফেসবুক পেজে। ফ্যানস ক্লাবের সদস্যদের গোপন উদ্যোগে।

মুখে কিছু না বললেও ‘এস’ এর মিথ সঙ্গে করে নিয়ে শিল্টন পালও তো নামবেন রবিবার। গোপনে তিনিও তো চাইছেন ইতিহাসে ঢুকে পড়তে।

শঙ্কর নাগ দাসের ক্যামেরাবন্দি প্র্যাকটিসরত মোহনবাগান

benguluru Mohunbagan silton pal sailen manna i league
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy