সিডনিতে সাইনা।
হায়দরাবাদে এ দেশের দুই আইকন ক্রীড়াকন্যার সুবিশাল অত্যাধুনিক বাড়ি গাড়িতে দশ মিনিটের দূরত্বে। দু’জনের বয়সের তফাতও সে রকম— মাত্র তিন বছরের। দু’জনের নাম ইংরেজি-বাংলা দু’ভাষাতেই তাড়াতাড়ি লিখতে গেলে ভুল হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা। এতটাই মিল! আবার সাইনা-সানিয়ার মধ্যে অমিলও প্রচুর। দু’জনেই নিজেদের ইভেন্টে বিশ্বের এক নম্বর হওয়া সত্ত্বেও। সাইনা নেহওয়াল সানিয়া মির্জার আগে ব্যাডমিন্টনে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে শীর্যস্থানে পৌঁছলেও এখন আটে নেমে গিয়েছেন। সেখানে টেনিসে সানিয়া ডাবলসে বর্তমান এক নম্বর। তাঁর দাবি এককথায় মেনে নিয়ে অলিম্পিক্সে তাঁকে পছন্দের মিক্সড ডাবলস পার্টনার দিয়ে দিতে হয় ফেডারেশনকে। সাইনা চার বছর আগের লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পেলেও এ বার রিওতে কত দূর এগোবেন তা নিয়েই সন্দিহান দেশের ব্যাডমিন্টন মহল।
এহেন আবহে রবিবার সাইনা নেহওয়াল যেন সমস্ত আশঙ্কার কালো মেঘ এক টানে সরিয়ে দিয়ে উজ্জ্বল আশার আলোয় বেরিয়ে এলেন। গোড়ালির চোট পুরো সেরেছে কি না? লম্বা র্যালি করার পুরো দম আছে কি না? বড় ম্যাচে পিছিয়ে পড়লে পাল্টা উঠে দাঁড়ানোর মতো মানসিক শক্তি ধরেন কি না? অলিম্পিক্সের মাত্র মাস দেড়েক আগে তাঁকে নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন সাইনা। সিডনিতে অস্ট্রেলীয় ওপেন সুপার সিরিজ ফাইনালে প্রচণ্ড চাপের মুখে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। টুর্নামেন্টটা বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের বৃহত্তম সার্কিট প্রিমিয়ার সুপার সিরিজ না হতে পারে। কিন্তু সাইনার সাফল্যের তাৎপর্য তাতে এতটুকু কমার নয়। কারণ, কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালে তিনি সিডনিতে হারিয়েছেন দুই প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তাইল্যান্ডের ইন্তানন আর চিনের ইহান-কে। ফাইনালে ফের এক চিনা প্রতিদ্বন্দ্বী সুন ইউ-কে হারিয়ে এক বছরেরও বেশি পরে সুপার সিরিজ খেতাব সাইনার ট্রফি ক্যাবিনেটে ঢুকছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর ক্যারোলিনা মারিন হয়তো সিডনিতে ছিলেন না, কিন্তু ইহান তো বিশ্বের দুই নম্বর। একটা সময় মেয়েদের ব্যাডমিন্টনে শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে ‘সাইনা ভার্সাস চায়না’ বলা হত, তাতে হায়দরাবাদি তারকার সবচেয়ে বেশি হারের নজির ইহানের বিরুদ্ধেই। সেই মহাকাঁটাকে সেমিফাইনালে উপড়ে ফেলার পরে ফাইনালে আর একটা স্মরণীয় লড়াই জিতলেন। এক ঘণ্টারও বেশি কোর্টে ঘাম ঝরিয়ে তিনটে ম্যারাথন গেম শেষে জয় ১১-২১, ২১-১৪, ২১-১৯। শুধু প্রথম গেম হারাই নয়, ম্যাচে অন্তত পাঁচ বার পিছনে থেকে এসে সাইনা ধরেছেন সুন-কে। চূড়ান্ত গেমের অন্তিম পর্যন্ত চলা যুদ্ধে জিতেছেন প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক থেকে। ম্যাচ পয়েন্ট জেতেন টানা তিনটে স্ম্যাশে।
যার পরে সিডনি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘ক’টা স্ম্যাশ আর ও ফেরাবে? রিওর ঠিক আগে এ ভাবে সুপার সিরিজ জেতাটা আমাকে দারুণ চাঙ্গা করবে। সেমিফাইনাল-ফাইনালে পরপর দু’জন চিনা প্রতিপক্ষকে হারানোটাও বিরাট আত্মবিশ্বাস জোগাবে আমাকে। ইহানকে আমি কিন্তু কমই হারাতে পেরেছি। আমাকে এখন দু’টো জিনিসের উপর খুব নজর রাখতে হবে। ফিটনেস আর এই ফর্ম। সাবধান থাকতে হবে যাতে আর কোনও চোট না পাই। আর জেতার অভ্যাসটা ধরে রাখতে হবে। পুরো ফিট থাকলে রিওতে ভাল করব, আমি নিশ্চিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy