Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘ফ্যাশন’ কোচের পাতা ফাঁদে হতশ্রী ইস্টবেঙ্গল

বার্নার্ড মেন্ডি যেন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন! র‌্যান্টি মার্টিন্স টিমের লোডশেডিংয়ে বড়জোর মোমবাতি। দুই উইং সঞ্জু প্রধান আর বিকাশ জাইরু পাহাড় চড়তে গিয়ে দিশাহারা। আগুনে লাল-হলুদ রং বিবর্ণ। মশাল নিভে গিয়েছে! তিলক ময়দানের সর্বত্র শুধুই সবুজের ওড়াউড়ি। সালগাওকর জার্সির রং যে অনন্ত সবুজ।

হাওকিপের গোলের শটে ধরাশায়ী লাল-হলুদ ডিফেন্স। ভাস্কোয় মঙ্গলবার।ছবি: উৎপল সরকার।

হাওকিপের গোলের শটে ধরাশায়ী লাল-হলুদ ডিফেন্স। ভাস্কোয় মঙ্গলবার।ছবি: উৎপল সরকার।

রতন চক্রবর্তী
ভাস্কো শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

সালগাওকর-৩ (হাওকিপ-২, কেলভিন-পেনাল্টি)

ইস্টবেঙ্গল-১ (র‌্যান্টি)

বার্নার্ড মেন্ডি যেন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন! র‌্যান্টি মার্টিন্স টিমের লোডশেডিংয়ে বড়জোর মোমবাতি। দুই উইং সঞ্জু প্রধান আর বিকাশ জাইরু পাহাড় চড়তে গিয়ে দিশাহারা। আগুনে লাল-হলুদ রং বিবর্ণ। মশাল নিভে গিয়েছে! তিলক ময়দানের সর্বত্র শুধুই সবুজের ওড়াউড়ি। সালগাওকর জার্সির রং যে অনন্ত সবুজ।

তবু র‌্যান্টি যখন ১-১ করলেন, তখন প্রতিপক্ষ বেঞ্চে বসে থাকা ডারেল ডাফিকে দেখলাম সামনে রাখা জলের বোতলে লাথি মারতে। ম্যাচ শেষে অবশ্য নাচলেন স্কটিশ স্ট্রাইকার। সতীর্থ হাওকিপ, জ্যাকিচন্দদের সঙ্গে। হতাশ, স্তব্ধ ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুম থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ‘‘পুরো টিমই ফ্লপ। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে খারাপ ম্যাচ খেললাম। কেন, তার ব্যাখ্যা আমার কাছেও নেই। হয়তো এখানে তিন দিন আগেই মোহনবাগানের সঙ্গে সালগাওকরের পারফরম্যান্স দেখে সবাই আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। অথচ বারবার বলেছিলাম, সব দিন এক রকম হয় না।’’ লাল-হলুদ কোচের গলা বুঁজে এল। নিকটাত্মীয়ের আচমকা বিয়োগে কারও যেমন হয়, সেই রকম মুখ করে যোগ করলেন, ‘‘ঈশ্বর আমাদের আই লিগ জেতার সুযোগ দিয়েছিলেন এ বার। আমরাই সেটা হারিয়ে ফেলছি। অনেক পিছিয়ে পড়লাম।’’ রাতে বাগান ড্র করার পর অবশ্য তাঁর গলায় কিঞ্চিৎ স্বস্তি। ‘‘মনে হচ্ছে একটু অক্সিজেন পেলাম।’’

কুঁচকির চোটে সালগাওকর ‘সিংহ’ ডাফি বেরিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাচ শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই। কোচ সন্তোষ কাশ্যপের দেখা গেল কপালে হাত, সেই সময় ১-০ এগিয়ে থেকেও। গ্যালারিতে যে হাজার তিনেক গোয়ান সমর্থক এসেছিলেন তাঁদের বিদ্রুপের ‘হুস-হুস’ শব্দও থেমে গিয়েছে সেই মুহূর্তে। সন্তোষ নিজেও হয়তো বুঝতে পারেননি লিগে এত দিন তাঁকে ডোবানো হাওকিপ-জ্যাকিচন্দরা এই পরিস্থিতিতে বারুদ হয়ে উঠবেন। যা পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে কিনা মশালধারীদেরই!

ভারতীয় ফুটবলে সন্তোষকে বলা হয় ‘ফ্যাশন’ কোচ। মনের আনন্দে টিম সাজান। তিনি এ দিন দল নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেছিলেন তাতে শুরুতেই সবার চোখ কপালে ওঠার জোগা়ড়। রীতিমতো ‘গ্লাসনস্ত’। আগের ম্যাচের টিমের অর্ধেকই বদল! আর কী আশ্চর্য! রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে প্রথম দলে ঢোকা হাওকিপই প্রথম গোলটা করে গেলেন। আবার গোয়ার ক্লাব যে পেনাল্টি পেল সেটা জ্যাকিচন্দের জন্য। সামাদ নিজেদের বক্সে ল্যাং মারেন মণিপুরী মিডিওকে। সন্তোষের আরও সুবিধে হয়ে যায়, মাঝমাঠে তাঁর ফাঁদে মেন্ডি-সঞ্জুরা পা দেওয়ায়। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে সব সময় মাঝমাঠে এগিয়ে ছিল সালগাওকর। সবচেয়ে বড় কথা, লাল-হলুদের দুই সেন্ট্রাল মিডিও মেন্ডি আর মেহতাব বেশি বয়সি ফুটবলার। গোয়ার গরম এবং তীব্র আর্দ্রতা দুই তারকাই সামাল দিতে পারলেন না।

অসংখ্য মিস পাস। কেবল বিরক্তিকর লং বলে গোলের চেষ্টা। এলোমেলো লক্ষ্যহীন দৌড়— আই লিগের এই ম্যাচটাকে আরও ফ্যাকাশে করে দিল। অবনমনের শঙ্কায় থাকা টিমের সঙ্গে খেতাবের লড়াইয়ে থাকা টিমের খেলা, তাতেও মরণপণ যুদ্ধ দেখা গেল না একবারও। বলার মতো শুধু দু’দলের দু’টো গোল সেভ। আর শেহনাজের লাল কার্ডে দলের আরও বিপদে পড়া। শেষ ১২ মিনিট ইস্টবেঙ্গল খেলল দশ জনে।

সালগাওকরের কাছে বিশ্রী হারের পর বিশ্বজিতের টিমের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। এর পর আরও দু’টো অ্যাওয়ে ম্যাচ আছে লাল-হলুদের। তার পর ডার্বি। এটাও আজ বোঝা গিয়েছে, মেন্ডি আর যাই হোন, রোজ রোজ ম্যাচ জেতানোর মতো ফুটবলার নন। এ দিন খেলার শেষ দিকে তাঁকে স্ট্রাইকার করে দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। র‌্যান্টির পাশে। সেই প্ল্যান বি-ও পুরো ফ্লপ। টিমটাও যেন পুরো ফিট নয়।

আরও এক বার আরব সাগরে ইস্টবেঙ্গলের ট্রফি জয়ের স্বপ্ন ডুবল কি না সেটা সময় বলবে। তবে এটা লেখাই যায়, স্বপ্নকে তাড়া করার মতো রসদ, সাহস, দু’টোর কোনওটাই নেই বিশ্বজিতের দলে।

ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারেটো, সামাদ (শেহনাজ), অর্ণব, বেলো (খাবরা), নারায়ণ, সঞ্জু, মেহতাব (কেভিন), মেন্ডি, বিকাশ, রফিক, র‌্যান্টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salgaocar FC eastbengal I-league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE