Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

সঙ্গার দুর্ভাগ্য যে ব্র্যাডম্যানকে ভেঙেও রেকর্ড বইয়ে দেখাচ্ছে না

আশি বছর বয়স হয়ে গেল তাঁর। এখনও ক্লান্তিহীন। ওভাল মাঠের পাশে এসিএল কেবলের অফিসে পাওয়া গেল তাঁকে। পঞ্চান্ন বছরের বেশি এখানেই চাকরি করছেন। রিটায়ারমেন্ট বলে কিছু নেই পার্সি অভয়শেখর-এর। গোটা বিশ্বে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ভ্রাম্যমাণ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর তিনি। তিরিশ বছর হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে। তিরিশ বছর পতাকা ছাড়া।

সঙ্গকারা বিদায়ের বিশেষ জার্সি নিয়ে পার্সি। বুধবার। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য।

সঙ্গকারা বিদায়ের বিশেষ জার্সি নিয়ে পার্সি। বুধবার। ছবি গৌতম ভট্টাচার্য।

গৌতম ভট্টাচার্য
কলম্বো শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

আশি বছর বয়স হয়ে গেল তাঁর। এখনও ক্লান্তিহীন। ওভাল মাঠের পাশে এসিএল কেবলের অফিসে পাওয়া গেল তাঁকে। পঞ্চান্ন বছরের বেশি এখানেই চাকরি করছেন। রিটায়ারমেন্ট বলে কিছু নেই পার্সি অভয়শেখর-এর। গোটা বিশ্বে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ভ্রাম্যমাণ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর তিনি। তিরিশ বছর হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে। তিরিশ বছর পতাকা ছাড়া। বৃহস্পতিবার থেকে ফের মাঠে যাবেন নতুন তৈরি ‘সঙ্গা থ্যাঙ্ক ইউ’ জার্সি পরে। আর নতুন কিছু ক্রিকেট ছড়ার স্টক নিয়ে।

সঙ্গকারার বিশেষত্ব: কুমারের একটা আলাদা ক্লাস আছে। এমনিতে আবেগপ্রবণ ছেলে কিন্তু সেটা বাইরে প্রকাশ করে না। নিজেকে ক্যারি করে খুব ভাল। আমি ওর সব ক’টা ডাবল হান্ড্রেড মাঠে বসে দেখেছি। বেচারি দুর্ভাগ্যবান। তাসমানিয়া টেস্টে ও ১৯৪ করার পর রুডি কোয়েটজেন ওকে বাজে আউট দেন। পরে উনি এসে সঙ্গার কাছে ক্ষমা চান। ক্ষমা চেয়ে আর কী হবে! একটা ডাবল তো তুমি কেড়ে নিলে বাবা। আর একটা ডাবল হান্ড্রেডও এ ভাবে আম্পায়ার খেয়েছে। বেচারি বাস্তবে তো ব্র্যাডম্যানের ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙেছে। কিন্তু রেকর্ড বইয়ে দেখাচ্ছে না।

সঙ্গার ব্যাটিং: যে ভাবে ও রানটা ধাপে ধাপে বাড়াতে থাকে আমি তার খুব গুণগ্রাহী। শুধু পঞ্চাশ করে ফেলার পর ওর একটা প্রবণতা আছে দুমদাম চালিয়ে দেওয়ার। ওই সময়টা ওকে একটু তক্কে তক্কে থাকতে হয়। আমি ছড়া কাটতে থাকি। ও আবার ঠিক হয়ে যায়।

সঙ্গকারা ডোন্ট বি ডঙ্গকারা

ডোন্ট বি এ হিমকারা

আই লাভ ইউ

বিকজ ইউ আর অলঙ্করা

ওহে সঙ্গকারা, বিপজ্জনক হয়েও না।

আত্মহত্যা করতে যেও না।

আমি তোমায় ভালবাসি

কারণ তুমি আমাদের অলঙ্কার।

সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্রিকেট ছড়া: ডেভিড বুন ব্যাট করতে যাওয়ার সময় ওর সামনে দিয়ে ছড়া কাটতে কাটতে গিয়েছিলাম।

ডেভিড বুন

ইউ তাসমানিয়ান গুন

কাম ব্যাক সুন

গেট আউট বিফোর নুন।

ঠিক তা-ই হল। বুন গেল আর এল। এর পর অস্ট্রেলিয়ান টিম থেকে বলে দিল, এই লোকটা বুনের কাছাকাছি গেলে রক্তারক্তির জন্য টিম দায়ী থাকবে না। বুন তবু সুযোগ পেয়ে আমায় মারতে এসেছিল। দৌড়ে পালাই। আজহারকেও তো ওর প্রথম শ্রীলঙ্কা সফরে ব্যাট করতে যাওয়ার আগে বলেছিলাম, তুই রান পাবি না। ও গোটা সিরিজ জুড়ে রান পায়নি। তার পর অভিযোগ জানায় যে, আমি নাকি ব্ল্যাক ম্যাজিক করছি (হা হা)।


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

ফেভারিট পাঁচ শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার: মহাদেব সতশিবম— হয়তো সরকারি টেস্ট খেলেননি কিন্তু ওঁর মতো ক্যাপ্টেন শ্রীলঙ্কা কম দেখেছে। ব্র্যাডম্যানের টিমের বিরুদ্ধে উনি ওভালে শ্রীলঙ্কা টিমকে লিড করেছিলেন। আমার বয়স তখন বারো। তবু ওই কম বয়সেও মনে হয়েছে যে, ব্র্যাডম্যান বলে উনি মোটেও নুয়ে পড়েননি।

অর্জুন রণতুঙ্গা— শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে লড়াই কাকে বলে অর্জুনই শিখিয়েছে। ও না থাকলে মুরলীর ১৯৯৫-এর পর আর ক্রিকেট খেলাই হত না।

মুরলীধরন— সেরা ম্যাচ জেতানো বোলার। কত যে জিতিয়েছে কোনও ইয়ত্তা নেই।

অরবিন্দ ডি’সিলভা— খুব উঁচু মানের ব্যাটসম্যান। ওর ব্যাটিংয়ের সময় ফ্ল্যাগ নিয়ে যে কত দৌড়েছি হিসেব নেই।

কুমার সঙ্গকারা— মাহেলাকে রাখতে পারলাম না। প্রথম পাঁচে জয়সূর্যকেও না। শুধু এটা থেকেই বোঝা যায় কুমারের জায়গাটা কোথায়। ও আর এক জন, যে বিশ্ব দরবারে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটকে আরও গৌরবান্বিত করেছে।

সঙ্গার শেষ টেস্ট: আমার বিশ্বাস ও দারুণ খেলবে। এই পি সারা ওভালটা আমাদের প্রিয় মাঠ। এখানেই তো তিরিশ বছর আগে কপিল দেবের ভারতকে আমরা হারিয়েছিলাম। ওটাই ছিল ক্রিকেটে আমাদের প্রথম জয়। সরকার এত খুশি হয়েছিল যে, জেতার পর জাতীয় ছুটি ঘোষণা হয়েছিল। এ বারও মন বলছে ভাল কিছুর মধ্যে দিয়েই সঙ্গা যাবে। আমি পতাকা আর নতুন টি-শার্ট পরে ওর সঙ্গে থাকব। যখন ও মাঠ থেকে বেরিয়ে আসবে শেষ বারের মতো সেই সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE