‘রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী’ সঞ্জয় মঞ্জরেকর। বুধবার শহরের এক স্টুডিওয়। -কৌশিক সরকার
ওয়াসিম আক্রমের বাউন্সার?
সামলেছেন।
সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ব্যাটিং পার্টনারশিপ?
বছরের পর বছর সামলেছেন। নির্দ্বিধায়।
কমেন্ট্রি বক্সে সুনীল গাওস্কর বা মাইকেল হোল্ডিং?
সামলেছেন তাঁদেরও।
আর রবীন্দ্রসঙ্গীত?
প্রশ্নটা শুনে প্রথমে যেন একটু ব্যাকফুটে। তার পর মুচকি হেসে বললেন, ‘‘নো, ফার্স্ট টাইম।’’
ভদ্রলোকের নাম সঞ্জয় মঞ্জরেকর।
নামের পাশে ‘প্রাক্তন’ ক্রিকেটারের তকমাটা থাকলেও, বর্তমানে ক্রিকেট কমেন্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। বাড়িতে বা ঘরোয়া আড্ডায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গান বহু দিন ধরে, কিন্তু এবার ‘সাহস’ করে রেকর্ড করছেন আস্ত একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালবাম। সব ঠিকঠাক চললে, পুজোর আগেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অ্যালবাম।
শহরে এসেছেন ভারত-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের কমেন্ট্রির কাজে। কিন্তু তারই ফাঁকে বুধবার তিনি হাজির মধ্য কলকাতায় উষা উত্থুপের স্টুডিয়োয়। কানে হেডসেট লাগিয়ে গেয়ে চলেছেন একের পর এক গান। কখনও ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’ আবার কখনও ‘পাগলা হাওয়া’।
উল্টো দিকে বসে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেন। যিনি এই মুহূর্তে সঞ্জয়ের ‘টিচার’। কখনও তাঁর সুর ঠিক করিয়ে দিচ্ছেন, তো কখনও উচ্চারণ। ‘‘আমি বাড়িতে নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেও কোনও দিন ভাবিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম করব, এটা একটা নতুন ইনিংস,’’ আনন্দবাজারকে বলছিলেন সঞ্জয়।
বাঙালি মননে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্বটা বোঝেন, এবং সেই জন্যই সামান্য ত্রুটিও রাখতে রাজি নন। ‘‘একটু এ দিক ও দিক হলেই সমস্যা। লোকে ভাল গান শুনতে চায়, আর আমার সেটাই লক্ষ্য। আমি বাংলা জানি না বলে ভুল গাইব এটা তো হতে পারে না,’’ নিজের ‘দুঃসাহসিক’ প্রজেক্ট নিয়ে বলছিলেন সঞ্জয়।
ছোটবেলা থেকে কিশোরকুমারের অন্ধ ভক্ত। এক সময় ভারতীয় ড্রেসিংরুমেও সঞ্জয় জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর গানের জন্য। ক্রিকেট ছাড়ার পর, ক্রিকেট কোচিং কিংবা প্রশাসনে না এসে, সঞ্জয় বেছে নিয়েছিলেন গান আর ক্রিকেট কমেন্ট্রিকে।
অবশ্য এর কৃতিত্বটা সঞ্জয় দিচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানি বন্ধু রামিজ রাজাকে। ‘‘কমেন্ট্রি করার ফাঁকে, আমাকে কিশোরকুমারের গান শোনাত রামিজ। এবং, তখনই ভাবলাম, গান-বাজনাটাকে সিরিয়াসলি নেওয়া যায়,’’ মৃদু হেসে বলছিলেন প্রাক্তন এই ব্যাটসম্যান।
গত বছর একটি বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাক করেছিলেন, কিন্তু মাস কয়েক আগে শ্রাবণীর অনুরোধে রাজি হন একটা পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম করতে।
‘‘মাস ছ’য়েক আগে যখন ওর সঙ্গে কথা বলি, তখনই রাজি হয়ে যায় সঞ্জয়,’’ বলছিলেন শ্রাবণী। একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘প্রচণ্ড ভাল ছাত্র। ওর মতো মানুষের এ রকম ডেডিকেশন ভাবা যায় না। পারফেকশনটাই ওর কাছে শেষ কথা।’’
সঞ্জয় অবশ্য নিজের গানের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে। সুর সামান্য সরে যাওয়ায় বিরক্ত হলেন একটু। অ্যারেঞ্জার সৌরভ চক্রবর্তীকে অনুরোধ করলেন আর একবার টেক নিতে।
‘‘আমার আসলে কোনও কিছুই পছন্দ হয় না। শুধু মনে হয়, এই বুঝি তালটা কেটে গেল। যতক্ষণ না ঠিক লাগছে, টেক দিয়ে যেতেও রাজি আছি,’’ ট্যাবে ‘একলা চলো রে’-র কথায় চোখ বোলাতে বোলাতে বলছিলেন।
বন্ধুদের আড্ডা হোক বা পাড়ার জলসা, সঞ্জয় স্টেজে ওঠা মানেই কিশোরকুমারের গান। নিজের অ্যালবামেও যেন কিশোর-শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রাক্তন এই ক্রিকেটারের। ‘‘মজার ব্যাপার হল, এই সব ক’টা গান কিশোরও গেয়েছেন। এ বার আমি গাইছি। জানেন, ওঁর গানগুলো শুনেই আমি প্র্যাক্টিস করেছি,’’ বলছিলেন সঞ্জয়।
রেকর্ডিংয়ের মাঝে কয়েক জন বান্ধবীকে নিয়ে হাজির উষা উত্থুপ স্বয়ং। পুরনো বন্ধুকে উইশ করতে। কিছুক্ষণ আড্ডার পর আবার রেকর্ডিংয়ে ফিরলেন সঞ্জয়। হাতে সময় কম যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy