Advertisement
E-Paper

সঞ্জয়ের শাস্তি শাপে বর হল বাগানের

ফেডারেশনের নির্দেশে দলের রিজার্ভ বেঞ্চে বসার অনুমতি ছিল না তাঁর। তবে গ্যালারিতে বসায় কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু গ্যালারিতেও ছিলেন না তিনি! এমনকী ম্যাচের নব্বই মিনিট বারাসত স্টেডিয়ামের আশেপাশেও সশরীরে দেখা মেলেনি!

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪১
ম্যাচের দুই নায়ক সনি ও কাতসুমিকে নিয়ে বিজয়োৎসব।রবিবার বারাসতে।-সুদীপ ঘোষ

ম্যাচের দুই নায়ক সনি ও কাতসুমিকে নিয়ে বিজয়োৎসব।রবিবার বারাসতে।-সুদীপ ঘোষ

মোহনবাগান-২ : মুম্বই এফসি-০

(কাতসুমি, সনি)

ফেডারেশনের নির্দেশে দলের রিজার্ভ বেঞ্চে বসার অনুমতি ছিল না তাঁর। তবে গ্যালারিতে বসায় কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু গ্যালারিতেও ছিলেন না তিনি! এমনকী ম্যাচের নব্বই মিনিট বারাসত স্টেডিয়ামের আশেপাশেও সশরীরে দেখা মেলেনি!

তা সত্ত্বেও রবিবার প্রতিপক্ষ টিমের উপর গোটা ম্যাচে প্রবল চাপ তৈরি করে রেখেছিলেন সঞ্জয় সেন। তাও একজন সঞ্জয় নন, হাজার হাজার সঞ্জয়!

হোক না সেগুলো মুখোশ। কিন্তু তার আড়ালে মিলিত যে শব্দব্রহ্ম পুরো নব্বই মিনিট কার্যকর ছিল, সেটা খালিদ জামিলের মুম্বই দলের উপর চাপ বাড়াতে কম ছিল না। প্রায় দশ হাজার মোহনবাগান সমর্থক তাঁদের প্রিয় দলের কোচ সঞ্জয়ের মুখোশ পরে এ দিন সবুজ-মেরুনের আই লিগ ম্যাচ দেখতে হাজির ছিলেন মাঠে। সঞ্জয়ের প্রতি ফেডারেশনের ‘অন্যায়’ শাস্তির প্রতিবাদে। ভারতীয় ফুটবলে যা নজিরবিহীন। আর সেটাই খেলার শুরু থেকেই স্পষ্ট তাতিয়ে তুলেছিল বাগান ফুটবলারদের। ফলও পাওয়া গিয়েছে হাতেনাতেই। মুম্বই এফসিকে দু’অর্ধের দু’গোলে হারিয়ে শুধু আই লিগে শীর্ষস্থান ধরে রাখাই নয়, ১১ ম্যাচের পর লিগ টেবলে সবচেয়ে কাছে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি (৩) আর ইস্টবেঙ্গলের (৫) থেকে পয়েন্টের ব্যবধানও বাড়িয়ে রাখল সনি-কাতসুমিদের বাগান। ম্যাচের পর সতর্ক সনি অবশ্য বললেন, ‘‘আরও তিনটে ম্যাচ জিততে হবে।’’ আর কোচ সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘আমাদের বাকি পাঁচটা ম্যাচের চারটে জিতলে বলতে পারব, চ্যাম্পিয়ন হচ্ছি।’’

ফেডারেশনের নিয়মে ম্যাচ চলাকালীন নির্বাসিত কোচের মাঠে বা ড্রেসিংরুমে ঢোকার অনুমতি নেই। তাই কাছাকাছি টিভিতে খেলা দেখেই যতটা সম্ভব পরামর্শ সহকারী শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে পাঠাচ্ছিলেন বাগান কোচ সঞ্জয়। খেলার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে শঙ্কর বললেনও, ‘‘সঞ্জয়দা বেঞ্চে ছিলেন না তো কী। আমাকে সব রকম সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। পরামর্শ দিয়েছেন। ম্যাচের পর শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।’’

হেড কোচের পরামর্শ মেনেই খেলা তিরিশ মিনিট গড়ানোর আগেই অনূর্ধ্ব-২২ ফুটবলার মণীশ ভার্গবকে তুলে নিয়ে কাতসুমিকে নামান এ দিন বাগানের সহকারী কোচ। আর তার পরেই জাপানি বোমার আছড়ে পড়া মুম্বইয়ের উপর। কাতসুমি ১-০ করার পর বাগান আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক সুযোগ তৈরি হতে থাকে সনি-জেজের সৌজন্যে। সেই চেষ্টা বৃথাও যায়নি। প্রায় পঁচিশ গজ দূর থেকে সনির ফ্রি-কিক যখন গোলে ঢুকছে, তখনই দূরের আকাশে আতসবাজির আলো ঝলসে উঠল। হয়তো কোনও বিয়েবাড়ির। তবে সনির বিদ্যুৎ শটের গোলের সঙ্গে যেন প্রতীকী হয়ে গেল সেই আতসবাজির বিদ্যুৎ-আলো! বাগানের হাইতি স্ট্রাইকারের ফ্রিকিক গোলে মুগ্ধ এক সময় ইস্টবেঙ্গল-মহমেডানে খেলা স্ট্রাইকার রামন বিজয়ন। খেলা দেখতে এসে বললেন, ‘‘সনিই পুরো মোহনবাগানকে পাল্টে দিয়েছে। ওর মতো একজন ফুটবলার টিমে থাকা মানে সেই দলের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হয়ে ওঠা।’’ বাগানের এ দিনের বিপক্ষ কোচ খালিদ জামিলও স্বীকার করলেন সেটা। সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবলে সেরা বিদেশি সনি-ই।’’

মুম্বই ফুটবলাররা সনিদের আটকাতে কম চেষ্টা করেননি। কখনও গায়ের জোরে, মেরেধরে, কখনও বুটের জঙ্গল তৈরি করে। তাতেও আটকানো যায়নি। তাঁদের কোচের প্রতি ফেডারেশনের ‘অবিচারের’ জবাব ফেডারেশনের সেরা টুর্নামেন্টে দিতে এতটাই মরিয়া ছিলেন প্রীতম-কিংশুক-প্রণয়রা। আই লিগ, এএফসি কাপ মিলিয়ে টানা হোম-অ্যাওয়ে খেলার ক্লান্তি কোথায়? বরং শরীরী ভাষায় অদ্ভুত এক জেদ! ম্যাচের পর সনি বলেও দিলেন, ‘‘এই জয়টা আমাদের কোচের জন্য। আমার গোল আর আমাদের জয় দু’টোই কোচকে উৎসর্গ করলাম।’’

অ্যাপিল কমিটি কবে সভা ডাকবে, কবে সঞ্জয়ের শাস্তি কমবে, বা আদৌ কমবে কি না, সেটা ফেডারেশন কর্তারাই জানেন! তবে সঞ্জয়ের শাস্তি যে বাগানের কাছে শাপে বর হয়েছে, সেটা মুম্বই ম্যাচের পর বোধহয় লিখে ফেলা যায়।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, লুসিয়ানো, কিংশুক, প্রবীর, মণীশ (কাতসুমি), লেনি, প্রণয় (বিক্রমজিৎ), সনি, জেজে, গ্লেন (শৌভিক)।

mohun bagan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy