ফিফার বিশেষ কোর্স করতে আমি এখন গোয়ায়। তবে জানতে খুব আগ্রহী ছিলাম ইস্টবেঙ্গল কোচ কে হবেন। হাজার হোক আমার মোহনবাগানের চির প্রতিদ্বন্ধী টিমের কোচ বলে কথা!
গোয়াতে বসেই জানতে পারলাম বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের নাম সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। কোনও ভাঙা চুক্তি হয়নি। পুরো এক বছরের জন্য। এটা শোনার পর থেকে একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে, এটা ভারতীয় কোচেদেরই জয়।
আমি কোনও বিতর্কে ঢুকতে চাই না। বিদেশি কোচ নিয়েও কোনও মন্তব্যও করব না। এমনকী এটাও মনে করি না, আমার মতো ছোট দলে খেলা ফুটবলারের কোচ হিসেবে সাফল্যের জন্য লাল-হলুদ কর্তারা স্বদেশি কোচের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে কলকাতার দুই প্রধানের দায়িত্বে একই সঙ্গে দুই বাঙালি কোচ—এমন ঘটনা ময়দানে বহু দিন বাদে ঘটল বলেই মনে হচ্ছে। পাশাপাশি এটা ভেবেও খুব আনন্দ হচ্ছে, যার সঙ্গে আমি একটা সময়ে একই ক্লাবে অনুশীলন করেছি, ম্যাচ খেলেছি, সে-ই আমার পাশের ক্লাবের প্রতিদ্বন্ধী কোচ।
আমাদের দু’জনের মধ্যে অদ্ভুত একটা হৃদ্যতা রয়েছে। ও আমার দাদা কাম বন্ধু। দু’জনেই খোকনদার কাছে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে সাদার্ন স্পোর্টসে প্র্যাকটিস করে বড় হয়েছি। নিজেদের ফুটবল ভাবনা সেই ছোট থেকেই একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। এখনও দেখা হলে দু’জনে ফুটবল নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিই। এএফসি এবং ফিফার কোর্স নিয়ে আলোচনা করি। কোথা দিয়ে যে টাইম কেটে যায়, বুঝতেও পারি না। মোহনবাগানের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ছ’মাস অবশ্য সেই আড্ডাতে কিছুটা হলেও ছেদ পড়েছে।
বিশুদা আর আমার বাড়ি খুব কাছাকাছি। চেতলা ব্রিজের এ পার আর ও পার। তবে মাঠের নব্বই মিনিটের প্রতিদ্বন্ধিতা একেবারেই আলাদা। দু’জনেই পেশাদার কোচ। সমর্থকদের খুশি করার জন্য, আমি তো সব সময়ই চাইব, সব ডার্বিতে বিশুদাকে হারাতে। চ্যাম্পিয়ন হতে। একই রকম ভাবে বিশুদা-ও আমাকে হারাতে চাইবে। তবে ওটা মাঠের লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে। বন্ধুত্বটা অন্য জায়গায়।
একটা কথা আজ খুব অবাক হয়ে ভাবছিলাম, বিশুদা যা আগে আগে করেছে, সব কিছুই আমি করেছি। তবে পড়ে। সে ফুটবলার জীবনেই হোক বা কোচিং জীবনে। বিশুদা যখন খিদিরপুর খেলছে, তখনও আমি খোকনদার কাছে প্র্যাকটিস করছি। কিন্তু পড়ে আমি ক্লাব ফুটবল খেলেছি। আবার বিশুদা আমার আগে মহমেডান, মোহনবাগান, ইউনাইটেড স্পোর্টসে কোচিং করিয়েছে। আমিও পড়ে তিন ক্লাবে কোচিং করিয়েছি এবং করাচ্ছি। বিশুদা কখনওই বড় ক্লাবের মোহে আটকে ছিল না। পোর্ট, জর্জ টেলিগ্রাফ— ছোট ক্লাবগুলাতেও সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করিয়েছে। আমিও ছোট ক্লাবে কোচিং করাতে দ্বিতীয় বার ভাবি না। আই লিগ না পেলেও বিশুদা ভাল কোচ।
একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা দুই তরুণ ফুটবলার আজ ভারতের সেরা দুই দলের কোচ। বলা ভাল, আই লিগের সবচেয়ে উত্তেজক ম্যাচে দুই টিমের কোচ হিসেবে আলাদা রিজার্ভ বেঞ্চে বসব। ব্রিজের এ পার আর ও পারের দূরত্বের মতো নব্বই মিনিটের শত্রুতাটাও বড় অল্প সময়ের। বাকিটা আমরা আজীবন বন্ধু। ছিলাম, থাকবও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy