Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অভিনব বাস্কেটবল লিগ

বঞ্চনার জবাব পাবে এনবিএ, শপথ সতনামের

দু’হাত দূরে বসা বিশাল চেহারার ছেলেটা একবার মুখটা তুলে তাকালেন। তার পরে বিষাদময় দু’টো চোখ নামিয়ে বলে চললেন, ‘‘এনবিএ-তে আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলাম।

লড়াই: ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সতনাম। বুধবার মুম্বইয়ে। নিজস্ব চিত্র

লড়াই: ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সতনাম। বুধবার মুম্বইয়ে। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:৩৬
Share: Save:

কখনও স্বপ্ন দেখানোর পালা। কখনও স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। আর সব কিছু ছাপিয়ে এক অধরা লক্ষ্যের পিছনে ছুটে চলার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

সাত ফুট দু’ইঞ্চির, একশো কেজির বেশি ওজনের শরীরটা একটু আগেই বাস্কেটবল কোর্টে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। তখনও দেখে বোঝা যায়নি, কতটা যন্ত্রণা বুকে নিয়ে হাসি মুখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছিলেন সতনাম সিংহ। এনবিএ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বাস্কেটল লিগ) খেলা প্রথম ভারতীয় ব‌ংশোদ্ভূত বাস্কেটবলার।

কিন্তু আপনার কষ্টটা কোথায়? আপনি তো সতনাম সিংহ, ভারতীয় বাস্কেটবলে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মানুষ। যাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র পর্যন্ত বানানো হয়েছে!

দু’হাত দূরে বসা বিশাল চেহারার ছেলেটা একবার মুখটা তুলে তাকালেন। তার পরে বিষাদময় দু’টো চোখ নামিয়ে বলে চললেন, ‘‘এনবিএ-তে আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলাম। ২০১৫ সালে ডালাস ম্যাভেরিকস আমাকে দলে নেয়। তখন আমার মতো সুখী আর কেউ ছিল না। মনে হত, ভারত থেকে যা কেউ করে দেখাতে পারেনি, সেটা আমি করেছি। দেশের সম্মান আমাকে রাখতেই হবে। প্রথম দিকে সব ঠিক ছিল। কিন্তু তার পরেই সব বদলে গেল।’’

কী ঘটেছিল আপনার সঙ্গে? সতনাম বলে চললেন, ‘‘আমাকে হঠাৎ বসিয়ে রাখা শুরু হল। ম্যাচে একেবারেই নামানো হত না। সতীর্থরা কেউ সাহায্য করেনি। সবাই আমার থেকে আট-দশ বছরের সিনিয়র ছিল। ওরা এমন ভাব করত, যেন আমাকে একটু সাহায্য করলে ওরা পিছিয়ে যাবে। মাসের পর মাস ধরে ব্যাপারটা চলতে লাগল। তার পর আর সহ্য করতে পারিনি।’’

কী করলেন আপনি? জবাব দেওয়ার আগে সতনাম সামনের বাস্কেটবল কোর্টটার দিকে একটু তাকালেন। মুম্বইয়ের দাদারের স্কুল কম্পাউন্ডের এই কোর্টে বুধবারের দুপুরে একটু আগেই অভিনব একটা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। অলিম্পিক্সের কথা মাথায় রেখে এই প্রথম ভারতে চালু হচ্ছে ৩x৩ (প্রতি দলে তিন জন করে খেলোয়াড়) পেশাদার বাস্কেটবল লিগ। এই ৩x৩ বাস্কেটবল এ বার অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পেয়েছে। ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্সে দেখা যাবে এই নতুন ফর্ম্যাটের বাস্কেটবল। আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল সংস্থার (ফিবা) অনুমোদিত এই ১২ দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ জুন-জুলাইয়ে হবে ছ’টি শহরে। যার মধ্যে কলকাতাও আছে। কলকাতার যে দলের নামকরণ হয়েছে ‘কলকাতা ওয়ারিয়র্স’। লিগ কমিশনার রোহিত বকশি বলছিলেন, ‘‘বাস্কেটবলের এই ফর্ম্যাটে কিন্তু ভারতের সফল হওয়ার দারুণ সম্ভাবনা আছে। আমরা এই লিগ থেকে ভাল খেলোয়াড় ঠিক তুলে আনব।’’ তাঁর চোখ স্বপ্নময়।

কিন্তু সামনে বসে থাকা বাইশ বছরের ছেলেটার চোখে যে তখন স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। কী হল! বললেন না কী করলেন তখন? যেন হুঁশ ফিরে পেলেন সতনাম। ‘‘আমি ঠিক করি, অনেক হয়েছে। এ ভাবে বেঞ্চে বসে থেকে থেকে নিজেকে শেষ করে দিতে পারব না। আমার খেলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তখনই ফিরে আসার
সিদ্ধান্ত নিই।’’

যে ঘটনা ঘটতে পারে, এমনটা সম্ভবত কেউই ভাবতে পারেননি। ২০০৫ সালের পরে সতনামই ছিলেন বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড়, যিনি কলেজ বাস্কেটবল, অন্য কোনও পেশাদার লিগ বা এনবিএ ডি লিগে না খেলে সরাসরি এনবিএ-তে সুযোগ পান। বছর তিনেক ধরে বাস্কেটবলের শ্রেষ্ঠ ময়দানে তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু লড়াই ছেড়ে চলে এলেন কেন? ‘‘উপায় ছিল না,’’ বলছিলেন সতনাম, ‘‘আর কিছু দিন ওখানে থাকলে আমি বাস্কেটবল খেলাটাই ভুলে যেতাম। ফিরে এসে নিজেকে নতুন ভাবে তৈরি করতে পারছি। দেশের হয়ে খেলছি। রাজ্যের হয়ে খেলছি।’’

তা হলে এনবিএ এখন আপনার জীবনে অতীত? হঠাৎ চোখ থেকে যন্ত্রণা মুছে গেল। পঞ্জাবের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এক দিন যে লড়াই করে মার্কিন মুলুকে জায়গা করে নিয়েছিলেন, সেই ইস্পাতকঠিন মনের ছেলেটাকে দেখা গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। ‘‘না, এনবিএ-তে আমি একদিন ঠিক ফিরে যাব। আমাকে ওরা ডেকে নিতে বাধ্য হবে। আর আমি যদি না পারি, তা হলে আমার ছেলে পারবে। ছেলে না পারলে পরিবারের অন্য কেউ। পারবেই। আর সে দিনই আমি জবাবটা দিতে পারব এনবিএ-কে।’’

ভুল বুঝেছিলাম। সতনম সিংহ এখনও লড়াই ছাড়েননি। ছাড়বেনও না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Satnam Singh Bhamara Basketball India NBA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE