Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

দেখেছিলাম শাপমুক্তির উল্লাস

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মোহনবাগানের শেষ প্রহরী। যুবভারতীর সেই জয় সেরা প্রাপ্তি শিল্টন পাল-এর।ছোটবেলা থেকেই শুনেছি পঁচাত্তর সালে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে মোহনবাগানের ৫-০ বিপর্যস্ত হওয়ার কথা। সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা কিছুতেই সেই হারের যন্ত্রণা ভুলতে পারতেন না।

অপ্রতিরোধ্য: ২৫ অক্টোবর ২০০৯। ইস্টবেঙ্গল ৩ মোহনবাগান ৫। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হ্যাটট্রিকের পরে নাইজিরীয় তারকা এডে চিডির উচ্ছ্বাস। ফাইল চিত্র

অপ্রতিরোধ্য: ২৫ অক্টোবর ২০০৯। ইস্টবেঙ্গল ৩ মোহনবাগান ৫। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হ্যাটট্রিকের পরে নাইজিরীয় তারকা এডে চিডির উচ্ছ্বাস। ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:৩৩
Share: Save:

রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি কখনও মাঠে নামি না। ফুটবলার হিসেবে সব সময় আমার লক্ষ্য থাকে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া। ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়া। তা সত্ত্বেও রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আমার নাম।
২৫ অক্টোবর ২০০৯। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আই লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে ৫-৩ হারিয়েছিলাম আমরা। হ্যাটট্রিক-সহ চার গোল একাই করেছিল এডে চিডি। ও সে দিন অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিল। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারেরা আটকাতেই পারছিল না। এখনও উজ্জ্বল গোলের পরে সমারসল্ট দিয়ে চিডির সেই উৎসবের ভঙ্গি। আগেই বলেছি, আমার কাছে স্কোর লাইনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দলের জয়। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মোহনবাগান সমর্থকের কাছে সেটা ছিল শাপমুক্তির ম্যাচ।
ছোটবেলা থেকেই শুনেছি পঁচাত্তর সালে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে মোহনবাগানের ৫-০ বিপর্যস্ত হওয়ার কথা। সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা কিছুতেই সেই হারের যন্ত্রণা ভুলতে পারতেন না। ডার্বি এলেই বলতেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলকে হারালেই শুধু হবে না। ওদের পাঁচ গোল দিতে হবে। আইএফএ শিল্ডে বিপর্যয়ের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না।’’ ৩৪ বছর পরে অবশেষে স্বস্তি। যুবভারতীতে সে দিন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা আনন্দে যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। আনন্দে কেউ নাচছেন। কারও আবার দু’চোখ বেয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। কেউ কেউ সবুজ-মেরুন পতাকা নিয়ে রাস্তায় দৌড়চ্ছিলেন। যুবভারতী থেকে যখন বেরোচ্ছি, তখনও উৎসব চলছে। যেন আমরা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছি!
ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে জয়ের উৎসবে আমরাও মেতে উঠেছিলাম। তবে তা ড্রেসিংরুমের ভিতরে। মোহনবাগানের কোচ তখন ছিলেন করিম বেনশরিফা। ফুটবলারদের সঙ্গে তিনিও নেচেছিলেন। সে এক অসাধারণ দৃশ্য।
রবিবার সেই যুবভারতীতেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আরও একটা আই লিগের ডার্বি খেলতে নামব আমরা। ম্যাচের ফল নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করে দিয়েছেন। ডার্বিতে এগিয়ে রাখছেন মোহনবাগানকে। কারণ, মহম্মদ আল আমনাকে ছেড়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এনরিকে এসকুয়েদার চোট। আমি কিন্তু এঁদের সঙ্গে একেবারেই একমত নই। প্রতিপক্ষকে হাল্কা ভাবে নিলেই ধাক্কা খেতে হবে। তা ছাড়া এই ম্যাচের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। আমার কাছে এই মুহূর্তে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
সব ফুটবলারের মতো আমিও ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম ডার্বিতে খেলার। কেউ চায় না এই ম্যাচটায় মাঠের বাইরে বা রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে। আমিও ব্যতিক্রম নই। তাই জীবনের প্রথম ডার্বির আগে যে উত্তেজনা হয়েছিল, এখনও তা হয়। হয়তো জীবনের শেষ ডার্বির আগেও এ-রকম উত্তেজনা থাকবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE