টিভির সামনে ঋদ্ধিমানের মামাবাড়ির সকলে। —নিজস্ব চিত্র।
ফুটবলের ‘ডার্বি’ ঘিরে উন্মাদনাকে কিছুক্ষণের জন্য ভুলে ঘরের ছেলের ‘কামব্যাক’-এর উচ্ছ্বাসে ভাসল শিলিগুড়ি। শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল সওয়া ৩টে পর্যন্ত শহরের নানা প্রান্তের ছবি সে কথাই বলছে। সৌজন্য, ঋদ্ধিমান সাহা ওরফে পাপালির দুরন্ত ১০৬ নট আউট। ‘শাহজাদা অব শিলিগুড়ি’র বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি হাঁকানোর সেই দৃশ্যটা টাটকা দেখবেন বলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের টিকিটের লাইন ছেড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের যুব আবাসের ঘরে টিভিতর সামনে ভিড় করেছিলেন অত্যুৎসাহী অর্ঘ্য বর্মন, বরুণ চৌধুরীর মতো অনেক ইস্টবেঙ্গলপ্রেমী। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলেন মোহনবাগানের কট্টর সমর্থক বিপ্লব বসু, দেবাশিস রায়চৌধুরীর মতো একদল যুবকও।
যে মুহূর্তে পাপালির ব্যাট বলটা উঁচুতে তুলে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিল, তখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকদের একযোগে হাততালিতে স্টেডিয়ামের ঘরে কান পাতা দায়! ওঁরা প্রায় সমস্বরে বললেন, ‘‘ফুটবল, ডার্বির ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। মনে রাখতে হবে, পাপালি আমাদের ঘরের ছেলে। ওঁর জবরদস্ত কামব্যাক ছিল সময়ের অপেক্ষা। আমরা স্বস্তি পেলাম।’’
হালকা টেনশনে ছিলেন পাপালির পরিজন থেকে নেতা-মন্ত্রী-কবি-সাহিত্যিক, সকলেই। যেমন পাপালির মামা পার্থপ্রতিম গোস্বামী জানালেন তাঁরা পরিবারের সকলে মিলেই খেলা দেখেছেন। সেখানে ঋদ্ধির দাদা অনির্বাণও সপরিবারের ভাইয়ের বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরিটা উপভোগ করেছেন। পার্থবাবু বললেন, ‘‘গোড়ার দিকে খানিক টেনশন ছিল। তবে ক্রিজে কিছুক্ষণ থাকার পরেই ওঁর স্টাইল দেখে মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে গেল। বুঝলাম, আজ ওঁকে সহজে ক্রিজ থেকে সরানো যাবে না। নট আউট থেকে গেল। দারুণ এনজয় করলাম।’’ শক্তিগড়ের বাসিন্দা সাহিত্যিক বিপুল দাস ঋদ্ধিকে একেবারে ছোট দেখেছেন। বিপুলবাবু বলেন, ‘‘ঋদ্ধিমানের জন্য এখন তো গোটা দেশই গর্বিত। তবে আমার পাড়ার ছেলে বলে বাড়তি আনন্দ হচ্ছে। উইকেটকিপিংয়ের সঙ্গে ব্যাটসম্যান হিসেবে উত্তরোত্তর নিজের জাত চিনিয়ে দিচ্ছে ও। রঞ্জিতেও ভাল খেলেছে। সব ঠিকঠাক চললে আরও অনেক সাফল্য পাবে ও।’’
ঋদ্ধিমানের বাড়ি পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই। সেই সুবাদে ঋদ্ধিকে ছোটবেলা থেকে দেশের ক্রিকেট-তারকা হয়ে উঠতে দেখেছেন গৌতমবাবু। তিনি বললেন, ‘‘অসুস্থতার কারণে টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে ক্যামব্যাক ম্যাচটা চ্যালেঞ্জের ছিল। ঠান্ডা মাথায় চাপ সামলে অসাধারণ একটা সেঞ্চুরি করেছে। ওঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি।’’ শিলিগুড়ির মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের আবার যে কোনও ‘কামব্যাক’ ম্যাচ হলেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ে। তিনি বললেন, ‘‘ভিন্ন পরিস্থিতি হলেও প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ সৌরভের কামব্যাকটা কোনদিন ভোলা যাবে না। ঋদ্ধিরটাও তাই। পাপালির টেস্টে ফিরে ১০৬ নট আউট করে দারুণভাবে ফিরে আসাটা আরেকটা কাহিনি হয়ে গেল। এর পরে শিলিগুড়ি মানেই যে একটা লড়াকু মনোভাব সেটাও সকলে বুঝে যাবেন।’’
তবে যাঁর কোচিংয়েই তিলতিল করে পাপালি হয়ে উঠেছেন আজকের ঋদ্ধিমান, সেই জয়ন্ত ভৌমিকও আবেগাপ্লুত। শিলিগুড়ির ক্রিকেট মহলে ‘ভাইদা’ বলেই পরিচিত জয়ন্তবাবু বললেন, ‘‘ও খুব লড়াকু মানসিকতার। লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা রাখাটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে জরুরি। সেটা ও পারছে। আগামী দিনেও পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy