Advertisement
E-Paper

লজ্জার হারে তরুণ রক্ত আনার কথা উঠে পড়ছে

বিরাট কোহালির এই দলে অনেকেই অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। নানা বিদেশ সফরও তাঁরা করে ফেলেছেন। তা হলে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে তাঁরা এ রকম পথ হারিয়ে ফেললেন কেন? চুম্বকে নানা কারণ উঠে এসেছে।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৯
দলে সব বিভাগেই রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফাইল চিত্র।

দলে সব বিভাগেই রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফাইল চিত্র।

দেশে বাঘ, বিদেশে বেড়াল। পুরনো সেই তকমা ফিরে আসার মুখেই আরও বড় প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় ক্রিকেটে কি তরুণ রক্ত আমদানির সময় হয়েছে?

বিরাট কোহালির এই দলে অনেকেই অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। নানা বিদেশ সফরও তাঁরা করে ফেলেছেন। তা হলে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে তাঁরা এ রকম পথ হারিয়ে ফেললেন কেন? চুম্বকে নানা কারণ উঠে এসেছে। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী নিয়ে। তাঁরা যে দল নির্বাচন করছেন, তার মধ্যে কোনও দূরদর্শিতা নেই। ভবিষ্যতের কথা ভেবে একেবারেই টিম করছেন না তাঁরা। সব চেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, দ্বিতীয় উইকেটকিপার নির্বাচন এবং ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় পরিবর্ত হিসেবে দীনেশ কার্তিক-কে আনা।

ঋদ্ধিমান এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার। তাঁর বদলি চট করে পাওয়া কঠিন। কিন্তু পার্থিব বা কার্তিক-কে টেস্টে খেলিয়ে কী লাভ হতে পারে, সেটাই প্রশ্ন। কেন তরুণ কাউকে দেখা হবে না? ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নতুন কাউকে তৈরি করাটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ হতো। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় নির্বাচকদের চেয়ারম্যান এখন এম এস কে প্রসাদ। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এসেছেন। কিন্তু তাঁর ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠছে।

পুরো নির্বাচক কমিটি মিলিয়ে দশটি টেস্ট মতো খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দল নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব। প্রসাদ আবার কয়েক দিন আগে গর্বিত ভাবে ঘোষণা করেছেন, ধোনি যত দিন খুশি খেলবেন কারণ এখনকার তরুণদেরও নাকি তিনি বলে বলে হারাতে পারেন। এমন মন্তব্য অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকরা কেউ কখনও করবেন? সব দেশে অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, তরুণ রক্তকে উৎসাহ দেওয়া। যাতে ভবিষ্যতের দল গড়ে তোলা যায়। ভারতে সেই তারকা পুজোর পুরনো প্রথা চলছে এবং এমন সব মন্তব্য করছেন ক্রিকেট পরিচালকেরা যে, তরুণদের মনোবল ভেঙে যাবে।

ইতিমধ্যেই কথা উঠতে শুরু করেছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় যা হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে। সিরিজই চলে গিয়েছে হাত থেকে। আগামী এক বছর যে বিদেশের মাঠে কঠিন সব জায়গায় খেলে বেড়াতে হবে, তার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু হয়ে যাক। তরুণ রক্ত নিয়ে আসার দাবি উঠে পড়ছে এবং টিম ম্যানেজমেন্টও সেটাকে পুরোপুরি ফেলে দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, কার পক্ষে বিদেশ সফরের চ্যালেঞ্জ নেওয়া সম্ভব। কার পক্ষে সম্ভব নয়। পৃথ্বী শ’র মতো উঠতি ক্রিকেটারদের সামনে দরজা খুলে গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না। জোহানেসবার্গের শেষ টেস্ট অনেকের কাছেই তাই শেষ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে ওপেনিং স্লটে ব্যাপক রদবদল হতে পারে যদি ওয়ান্ডারার্সেও মুরলী বিজয়, কে এল রাহুল-রা ব্যর্থ হন। রোহিত শর্মার জন্যও তেমনই টেস্টের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা সে যতই তিনি ক্যাপ্টেন কোহালির সমর্থন পেয়ে থাকুন এত কাল।

অধিনায়ক হিসেবে কোহালির দর্শন হচ্ছে, যে ক্রিকেটারকে খেলাবেন, তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। কিন্তু যে মুহূর্তে বুঝে যাবেন যে, একে দিয়ে হবে না, যতই ঘনিষ্ঠ হোক, দলে রাখবেন না। যেমন অধিনায়ক হয়ে আসার পরেই দুই সিনিয়র হরভজন সিংহ এবং যুবরাজ সিংহ-কে দলে নিয়ে এসেছিলেন কোহালি। তাঁদের সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু যুবি-রা পারফরম্যান্সে ব্যর্থ এবং ফিটনেসে পিছিয়ে পড়ার পরে তাঁদের সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি।

হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং তাঁর সহকারীদের জন্যও এই সফর চোখ খুলে দিয়ে যাচ্ছে। এত দিন ধরে একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল যে, এটাই ভারতীয় ক্রিকেটের কোর গ্রুপ। দেশে-বিদেশে এঁদের দিয়েই বাজিমাত করা যাবে। কিন্তু সেই ধারণা ধাক্কা খেয়েছে এই সিরিজে। এটাও দেখার যে, শাস্ত্রী-কোহালি জুটি কী ভাবে এই ধাক্কা সামলায়। কারও কারও মতে, পিছন ফিরে আর না তাকিয়ে তরুণ রক্ত টিমে ঢোকানো শুরু করা উচিত। শাস্ত্রী নিজে বরাবর তরুণ ব্রিগেডকে সুযোগ দিতে মুখিয়ে থেকেছেন। মুম্বইয়ের অধিনায়ক হিসেবে রঞ্জি জিতেছেন একেবারে আনকোরা, নতুন দল নিয়ে। কোচ হয়ে প্রথম যখন এসেছিলেন, তখনও বাংলাদেশে মনোজ তিওয়ারির মতো তরুণদের নিয়ে এসেছিলেন। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, পুরনো সেই অভ্যেস ফিরিয়ে আনতে হবে তাঁকে।

বোলিং বিভাগেও রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দু’টি টেস্টে চল্লিশটি উইকেট তুলেছেন ঠিকই মহম্মদ শামি-রা। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তাঁদের ফোকাস হারিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। সেই তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা একটানা সঠিক লাইন-লেংথে বল করে অনেক বেশি চাপে রেখে গিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। শৃঙ্খলার দিক থেকে ভারতীয় বোলারদের চেয়ে কাগিসো রাবাডা-রা অনেক এগিয়ে ছিলেন। লুঙ্গি এনগিডি অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই ম্যাচের সেরা হলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে ছয় উইকেট। ম্যাচ থেকে সাত উইকেট। ভারতের বোলাররা পঞ্চাশটা টেস্ট খেলে ফেলার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে পাঁচ উইকেট তুলতে পারছেন না। এই অবস্থায় বেশ কয়েক জন তরুণ পেসারকে নিয়ে মুগ্ধ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। যাঁেদর মধ্যে রয়েছেন বাসিল থাম্পি, নবদীপ সাইনি-র মতো পেসার। এটা পরিষ্কার, চাইলে বিকল্পের অভাব কিন্তু হবে না।

রদবদল হলে হোক। হওয়াই উচিত!

Indian Cricket Team Souh Africa Tour Test Series Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy