সোমবার বেঙ্গালুরু ম্যাচে কেকেআর ডাগআউট।
কলকাতায় ফিরে শুনলাম কেকেআর-আরসিবি ম্যাচটা নিয়ে নাকি শহরে জোর আলোচনা চলছে। তবে শুনে অবাক হলাম না যে, আলোচনাটা যতটা আমাদের জেতা নিয়ে, আমাদের পাওয়ার হিটারদের তাণ্ডব, দলের ছেলেদের ‘প্যাশন’ নিয়ে, তার চেয়ে বেশি আপনাদের এই প্রিয় পাত্রর ডাগ আউটে চেয়ারে লাথি মারার ঘটনা নিয়ে।
আমার ফার্নিচার ভাঙার ঘটনাটাই যেন ‘মেন কোর্স’। ইউসুফ-রাসেলের অসাধারণ ব্যাটিং যেন মেনু কার্ডে সাইড ডিশের জায়গায় চলে গিয়েছে। আসলে আমরা, ভারতীয়রা মশলা খুব ভালবাসি। তাই না? আর ওই দৃশ্যটা। যেখানে আমি ডাগ আউটের চেয়ারটা কতটা মজবুত ছিল, সেটাই পরখ করছিলাম, এর চেয়ে মশলাদার ঘটনা আর কী হতে পারে?
হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি।
সত্যিই ও ভাবে চেয়ারটায় লাথি মারা উচিত হয়নি আমার। আমাদের মতো ক্রিকেটারদের অনেকে রোল মডেল হিসেবেও দেখে। যাদের কাছ থেকে মানুষ একটা নির্দিষ্ট, সীমাবদ্ধ আচরণ প্রত্যাশা করে। যখনই একটু অন্যরকম কিছু করে ফেলি আমরা, তখনই তাদের চোখে অপরাধী হয়ে যাই। ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা অবশ্য আমার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। এর জন্য আমি নিজেও বহুবার অপমানিত হয়েছি আর আফসোসও করেছি। আর এখানেই আমার একটা প্রশ্ন আছে।
রোল মডেলদের কি আবেগ থাকতে নেই?
আবেগ প্রকাশ করার মতো মানবিক অধিকারও কি আমাদের নেই? রোল মডেলরাও তো এই সমাজের, এই সময়েরই অঙ্গ। আমরা তো আর রবিবার গির্জায় প্রার্থনা করতে যাইনি। আসলে এটা যে ক্রিকেটের একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, তা বোধহয় অনেকে ভুলেই মেরে দিয়েছেন। মোদ্দা কথাটা হল, আমি ভুল করেছি আর ভুলটার জন্য আমাকে ম্যাচ ফি-র ১৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে।
এ বার বরং ইউসুফ আর রাসেলকে কেন্দ্রবিন্দুতে আনা যাক। আগেও বলেছি আর এখনও গর্ব করে বলছি যে, এ এক নতুন ইউসুফ পাঠান। ইউসুফের সেই আগের ‘ব্লুম’ আর ‘ব্লাস্ট’ শুধু আর নেই। তার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ‘ব্লক’ শব্দটাও জুড়ে গিয়ে একটা ত্রয়ী পূর্ণ হয়েছে। আমার বন্ধু এখন ভাল বলগুলো ছাড়তে শিখেছে আর খারাপ বলগুলোকে যথাসাধ্য শাস্তি দিচ্ছে।
উত্তেজিত নাইট অধিনায়কের চেয়ারে লাথি।
শেন ওয়াটসনের যে ওভারটাতে, ২৪ রান ওঠে, তাতেই ম্যাচ ঘুরে যায়। ওই ওভারটাই যেন রানের বাঁধ ভেঙে দেয়। আর আমাদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১৮ বলে ২৩। তার আগের কাজটা করে দেয় রাসেল। সোমবার রাতের মতো এত উত্তেজিত রাসেলকে এর আগে আমি কখনও দেখিনি। সাধারণত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের মুখ থেকে খুব একটা গালিগালাজ শুনতে পাওয়া যায় না। কিন্তু সোমবার রাসেলের মুখ থেকে তাও বেরিয়েছে। বিশেষ করে যখন ওর বলে তুমুল পেটাচ্ছিল ওয়াটসন। উমেশের এ দিন ‘অফ ডে’ ছিল ঠিকই, তবে আমাদের বোলিং নিয়ে বিশেষ কিছু বলা দরকার। আরসিবি-র মতো একটা ব্যাটিংসর্বস্ব দলকে ১৮৫-র মধ্যে বেঁধে রাখাটা কম কৃতিত্বের নয়। শেষের দিকে কয়েকটা বিশাল শট না মারলে হয়তো ওদের ১৬০-এ আটকে রাখা যেত।
পীযূষ চাওলার ফর্মেও আমি সন্তুষ্ট। এবি ডে’ভিলিয়ার্সকে যে আউটটা করল, সেটা তো উপকথা হয়ে থাকবে। আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না। ভিডিওটা একবার দেখে নিন, তার পর আপনিও হয়তো একই কথা বলবেন। যে ধারালো ফ্লিপারে ও বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানকে ফেরাল, সেটা অসাধারণ। যেমন বোলিংয়ের মান, তেমনই টাইমিং। এবি-কে ফেরাতে হলে প্রথম দশ বলেই সেটা করতে হয়। না হলে ধরেই নিতে হবে রাতটা ওরই হতে চলেছে।
ছবি: টুইটার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy