Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৈঠকে পুনর্নির্বাচনের প্ল্যান দিয়ে রাখলেন আত্মবিশ্বাসী শ্রীনিবাসন

এজবাস্টনে যে যে টি-টোয়েন্টিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নামলেন, সেটা শুরু হল ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটায়। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিং যার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। এজবাস্টন থেকে কয়েকশো মাইল দূরে চেন্নাইয়ের তাজ শেরাটনে যেটা ভারতীয় সময় সকাল এগারোটা নাগাদ শুরু হয়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

এজবাস্টনে যে যে টি-টোয়েন্টিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নামলেন, সেটা শুরু হল ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটায়।

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিং যার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। এজবাস্টন থেকে কয়েকশো মাইল দূরে চেন্নাইয়ের তাজ শেরাটনে যেটা ভারতীয় সময় সকাল এগারোটা নাগাদ শুরু হয়ে গেল।

সুপ্রিম কোর্ট, মুদগল কমিশন, জাতীয় মিডিয়া, জনমত গত কয়েক মাসে কম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়নি শ্রীনিকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এখনও তাঁকে বোর্ডের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু রবিবাসরীয় চেন্নাইয়ের শ্রীনিকে দেখে নাকি কোনও টেনশনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বৈঠকে ঢোকার আগে বোর্ড সদস্যদের কারও কারও সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। শশাঙ্ক মনোহর নিয়ে উষ্মা দেখিয়েছেন। জগমোহন ডালমিয়ার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। আবার বৈঠকে ঢুকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট বোর্ডে ঢোকার অনুমতি দিক চাই না দিক, আমিই বস্!

মুদগল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনবেন কি আনবেন না, জানা নেই। অথচ শ্রীনি পুর্ননির্বাচিত হয়ে আসার গেমপ্ল্যান তৈরি করে ফেললেন। বোর্ডের শাসনদণ্ড ভবিষ্যতে তাঁর হাতেই থাকবে কি না, সেটাও কারও পক্ষে নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। অথচ বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের সদম্ভে শ্রীনি বলে দিলেন, ‘দেখলে তো, যারা দুঃসময়ে আমার পাশে ছিল তাদেরই ডেকেছি। যারা ছিল না, তাদের মিটিংয়ে ডাকিইনি!’

বার্ষিক সভা নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে পরে। শোনা গেল, উপস্থিত সদস্যদের কাছে অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট সভা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর আগে বলে দেন, পূর্বাঞ্চলে নিজের আধিপত্য নিয়ে নাকি তাঁর চিন্তা নেই। টার্ন অনুযায়ী, বোর্ড প্রেসিডেন্ট এ বার পূর্বাঞ্চল থেকে নির্বাচন হবে। কিন্তু বোর্ডের পরিবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী, শ্রীনির সেটা আবার হতে অসুবিধে নেই, যদি পূর্বাঞ্চল থেকে তাঁর নাম প্রস্তাব এবং সমর্থন, দু’টোই করা হয়। পূর্বাঞ্চলের এক সদস্য শ্রীনির নাম প্রস্তাব করবে। আর এক জন সেই প্রস্তাব সমর্থন করবে। শ্রীনির নাকি মনে হচ্ছে, সে ব্যাপারে পূর্বাঞ্চল থেকে যথেষ্ট সমর্থন তিনি পাবেন। আর বোর্ডেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন নাকি তাঁরই দিকে।

যদিও রবিবারের বৈঠকে উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার প্রধান রাজীব শুক্ল-র অনুপস্থিতি নিয়ে তীব্র আলোড়ন পড়ে গেল। এ দিন শ্রীনির আমন্ত্রণে আঠারো জন সদস্যকে দেখা গেলও বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট আসেননি। টেলিকনফারেন্সে কথা বলেছেন শ্রীনির সঙ্গে। কিন্তু তাঁকে গরহাজির থাকতে দেখে বোর্ডের কেউ কেউ বলছেন, রাজীব কি যুদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন? যা খবর, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সভার দিনক্ষণ নির্ধারণে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। পরিস্থিতি যা, তাতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বার্ষিক সভার সম্ভবনা নিয়ম অনুযায়ী নেই। নিয়ম বলে, ওয়ার্কিং কমিটি বসার দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর বার্ষিক সভা হয়ে থাকে। শোনা গেল শ্রীনি বৈঠকে সদস্যদের বলে দিয়েছেন যে, মুদগল কমিশনকে যদি বোর্ডের কোনও পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করতে হয়, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে করতে হবে। তাই ২৬ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক রাখা হয়েছে। সেখানেই পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বার্ষিক সভা হলে কোথায় হবে, কবে হবে, বা পিছিয়ে দেওয়া হবে কি না। এবং বার্ষিক সভা পিছনো নিয়ে শ্রীনি বৈঠকে যুক্তি দিয়েছেন বার্ষিক অ্যাকাউন্টসে সইসাবুদ করার লোক নেই। প্রেসিডেন্ট অপসারিত। আর সুপ্রিম কোর্ট দু’জনকে অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু বোর্ডের সংবিধানে অর্ন্তবর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট বলে কিছু নেই। বার্ষিক সভা তাই পিছিয়ে দেওয়া ভাল।

বার্ষিক সভা যে দিনই হোক। বোর্ড প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত যিনিই হন, সিএবি-র ভাগ্যে যে লক্ষ্মীলাভের ভাল সম্ভাবনা বোঝা যাচ্ছে। যেমন সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুরোধে পটৌডি স্মৃতি বক্তৃতা এক কথায় শ্রীনির কলকাতাকে দিয়ে দেওয়া। ইডেনে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে ম্যাচের সময় (১৭ অক্টোবরের বদলে ঠিক হল যেটা ২০ অক্টোবর হবে) পটৌডি মেমোরিয়াল বক্তৃতা হবে। ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দু’টো টিম থাকবে। শ্রীনি আশ্বস্ত করেছেন, ইডেনে ক্রিকেটের দেড়শো বছরের পূর্তিতে কোনও কার্পণ্য করবে না বোর্ড। পটৌডি-বক্তৃতায় দুঁদে প্রাক্তন কোনও ক্রিকেটারকে নিয়ে আসার ব্যাপারটো শ্রীনি-ই নাকি দেখবেন। শুধু তাই নয়, প্রশাসক ডালমিয়া নিয়েও নাকি বৈঠকে অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল দেখিয়েছে শ্রীনিকে। শ্রীনি নাকি বলে দেন, ডালমিয়া বোর্ডের পিতৃতুল্য ব্যক্তি। তিনি নিজে মনে করেন। অরুণ জেটলিও তাই মনে করেন। আর তাই নতুন বোর্ডে ডালমিয়াকে অত্যন্ত সম্মানীয় কোনও পদে রাখতে হবে। কারও কারও আন্দাজ, পরবর্তী আইপিএল চেয়ারম্যান হয়ে যেতে পারেন ডালমিয়া।

আদিত্য বর্মার যা দেখে মনে হচ্ছে, এ সব নিছকই শ্রীনির নির্বাচনের স্ট্র্যাটেজি। শ্রীনির সগর্বে এ দিন ‘আমিই আবার প্রেসিডেন্ট’ মার্কা ইঙ্গিতে তাঁর নাকি সুবিধেই হবে। বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিবের সাফ বক্তব্য, “কোর্ট ওকে দাঁড়াতে দিলে তো? দু’টো ব্যাপার আনব। সামনের সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে বলব, দেখুন যে লোকটাকে আপনারা বের করে দিয়েছিলেন, সেই লোকটার প্রতি বাকিদের কী আনুগত্য! লোকটা নিজের স্বার্থে নিয়ম পাল্টে দিচ্ছে। আমি আবেদন করব, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা। আর অবজার্ভার রেখে নির্বাচন করার। আর আজকের ঔদ্ধত্যই না তখন শ্রীনির কাল হয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE