এত দিন দু’জনে চলছিল ঠারেঠোরে। পরোক্ষে। এ বার তা এল প্রকাশ্যে, সুপ্রিম কোটের্র্ সরাসরি।
আইপিএল-দুর্নীতি মামলায় শরদ পওয়ারকে এ বার টেনে আনলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে পেশ করে দিলেন যে, চেন্নাই সুপার কিংস কেনার অনুমোদন তাঁকে তত্কালীন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শরদ পওয়ারই দিয়েছিলেন!
শ্রীনি-র বিরুদ্ধে স্বার্থ সংঘাতের প্রসঙ্গ আগেই উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে। প্রশ্ন উঠেছিল, কী ভাবে একই সঙ্গে তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং সিএসকে মালিক হতে পারেন? সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, সিএসকে কেনার সময় শ্রীনি আর পওয়ারের আইনজীবীর মধ্যে যে চিঠি চালাচালি হয়েছিল, তা বিচারপতিদের সামনে পেশ করা হয়। যে চিঠিতে শ্রীনি মোটেও বোর্ড কোষাধ্যক্ষ (বোর্ডে পওয়ার জমানায় শ্রীনি তাই ছিলেন) হিসেবে সই করেননি, করেছিলেন ইন্ডিয়া সিমেন্টসের সর্বময় কর্তা হিসেবে। যে চিঠিতে সিএসকে কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করা হয়। যে চিঠির জবাবে এনসিপি সুপ্রিমো আবার নাকি শ্রীনিকে লেখেন যে, অসুবিধে নেই। কিন্তু দেখবেন যাতে কোনও অসত্ কাজকর্ম না হয়।
আদিত্য বর্মা রাতে নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন যে, শ্রীনি-ঘনিষ্ঠরা যতই দাবি করুন তাঁদের ‘স্যর’ এ দিনের শুনানির পর সামান্য ভাল জায়গায়, যতই প্রচার করা হোক শ্রীনিকে অন্তত সোমবার বিচারপতিদের কাছে তিরস্কৃত হতে হয়নি, ঘটনা তা নয়। বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিবের কথা ধরলে বিচারপতি ঠাকুর আর খলিফুল্লাহ-র ডিভিশন বেঞ্চ শনিবারও মাঝেমধ্যেই শ্রীনিকে তিরস্কার করেছে। সিএসকে-তে শেয়ারের অংশ নিয়ে মিথ্যে বলায় কথা শুনিয়েছে। আর আদালতে ‘আমি নির্দোষ’, ‘মইয়াপ্পনদের বিরুদ্ধে শোনামাত্র অভিযোগ করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি’ এ সব বলে আসাটা স্রেফ হাস্যকর।
শোনা গেল, বোর্ডের আইনজীবীকে নাকি এ দিন আদালত-কক্ষে বলা হয়, আইপিএল কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে যে কমিটি তৈরি করেছিল বোর্ড, সেই কমিটি কবে, কোন বৈঠকে, কী ভাবে তৈরি হয়েছিল মিনিটস সহ সব পেশ করতে হবে। ইন্ডিয়া সিমেন্টসে শ্রীনির শেয়ার নিয়েও বিচারপতিদের কথা শুনতে হয় বোর্ড আইনজীবীকে। “ওরা তো বলেছিল শ্রীনির নাকি ইন্ডিয়া সিমেন্টসে ০.১ শতাংশ শেয়ার। দেখা গেল ২৯ শতাংশ,” বলছিলেন আদিত্য। বোর্ড আইনজীবী কপিল সিব্বল নাকি বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে বারবার অরুণ জেটলির নাম তোলাতে বিচারপতি ঠাকুরের ধমকও খান। সিব্বল বার তিনেক জেটলির নাম তুলে বলতে থাকেন, মে ২০১৩-তে বোর্ড যে তদন্ত কমিটি গঠন করে, তা হয় জেটলির অনুমোদন অনুসারে। বিচারপতি পাল্টা তখন সিব্বলকে বলেন, “জেটলির নাম বারবার আনছেন কেন?” জিজ্ঞেস করা হয়, মামলার সঙ্গে জেটলির কোনও রকম সম্পর্ক আছে কি না? কারণ মুদগল কমিশনের রিপোর্টে কোথাওই জেটলির নাম উল্লেখ নেই। আর কোনও সম্পর্ক না থাকলে এ ভাবে আচমকা কাউকে টেনে আনা যাবে না।
আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শ্রীনি-ঘনিষ্ঠদের যা দেখে মনে হচ্ছে, এ ভাবে যদি ডেট পড়তে থাকে, তা হলে খুব খারাপ হয় না। কারণ ১৭ ডিসেম্বরের আগে যদি নির্বাচনে শ্রীনির দাঁড়ানো নিয়ে অর্ডার না বেরোয়, তা হলে শ্রীনিকে দাঁড়ানো থেকে আটকানো যাবে না। শ্রীনিবাসন তাঁরও হাবভাব দেখে বোঝা মুশকিল ঠিক কতটা চাপে ভুগছেন। মিডিয়াকে যে ভাবে সোমবার চেন্নাইয়ে আইসিসি-র এক অনুষ্ঠানে ওড়ালেন! মিডিয়া দু’টো প্রশ্ন করেছিল। এক, যা চলছে, তাতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তির বারোটা বাজছে কি না? দুই, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে এর পর ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিতে আপনি বলবেন কি না? উত্তর যথাক্রমে এ রকম:
“না, মোটেও ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে না।”
“কেন বলব ইস্তফা দিতে?”
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন ব্যাট করে যাচ্ছেন। আদালত-কক্ষে। আদালত-কক্ষের বাইরে। কতক্ষণ আর কত দিন, সেটাই এখন প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy