Advertisement
E-Paper

বিদেশি কোচদের মধ্যে খুব উপরেই ভিকুনা

দক্ষিণ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় পেলাম খবরটা। আইজল এফসি-কে পাপা বাবাকর জিয়োহারার গোলে হারিয়ে এ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আমার প্রিয় ক্লাব মোহনবাগান।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ০৪:২২
আই লিগ জেতার পরে মাঠেই উৎসব শুরু হয়ে গেল পাপা, তুর্সুনভদের। মঙ্গলবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত

আই লিগ জেতার পরে মাঠেই উৎসব শুরু হয়ে গেল পাপা, তুর্সুনভদের। মঙ্গলবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত

দক্ষিণ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় পেলাম খবরটা। আইজল এফসি-কে পাপা বাবাকর জিয়োহারার গোলে হারিয়ে এ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আমার প্রিয় ক্লাব মোহনবাগান। তা-ও আবার চার ম্যাচ আগেই। শুনে মনটা খুশিতে ভরে গেল।

জাতীয় লিগ ও আই লিগ নিয়ে মোট পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। তার মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার জাতীয় লিগ জয়ের সময় কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তাই জানি, লম্বা এই লিগে সাফল্য পেতে গেলে কোচের ভাবনা, পরিকল্পনা, কার্যকারিতা ও খেলার গতি, পদ্ধতি অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে লাগে। সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সংহতিটাও ধরে রাখতে হয়। যে কাজটা এ বার মোহনবাগানে কিবু ভিকুনা সুন্দর ভাবে করেছেন। সে কারণেই এই স্পেনীয় কোচ সফল হলেন।

ফুটবলার ও কোচ হিসেবে ভারতীয় ফুটবলে আমি অনেক বিদেশি কোচ দেখেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিরিচ মিলোভান, কার্লোস পেরেরা, করিম বেনশরিফা, মার্কোস ফালোপা, ট্রেভর জেমস মর্গ্যানরা। এদের মধ্যে মিলোভান জাতীয় লিগ বা আই লিগে কোচিং করাননি। এই সব বিদেশি কোচেদের মধ্যে আমি এক নম্বরে রাখি মিলোভানকে। ধুরন্ধর ফুটবল মস্তিষ্ক, খুব সহজ ভাবে ছাত্রদের প্রয়োজনীয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন, অনুশীলন ও খেলার পদ্ধতি আকর্ষণীয়। ছাত্রদের সঙ্গে দারুণ মিশতে পারেন। এই কিবু ভিকুনাকে দেখলে আমার সেই মিলোভানকেই মনে পড়ে। কিবুকে তাই আমি মিলোভানের পরেই রাখব। কারণ সাফল্যের পাশাপাশি সৃষ্টিশীল ফুটবলও উপহার দিয়েছেন কিবু।

অতীতে কলকাতার বিদেশি কোচেরা অনেকে শারীরিক শক্তিকে প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু কিবু গুরুত্ব দিয়েছেন পাসিং ফুটবল ও দলগত সংহতিকে। যে কারণে একটা ওডাফা, ব্যারেটো বা সনি নর্দে না থাকলেও জোসেবা বেইতিয়া কোচের নির্দেশে এ বার মোহনবাগানের মাঝমাঠে সৃষ্টিশীল ফুটবলের ফুল ফুটিয়েছে।

কেন মিলোভানের মতো কিবু? এ প্রসঙ্গে আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলব। চুরাশির এশিয়ান কাপে আমি স্টপারে গতিময় স্ট্রাইকারের বিরুদ্ধে সমস্যায় পড়ছিলাম। মিলোভান বললেন, সরাসরি ট্যাকলে না গিয়ে ডান দিক বা বাঁ দিকে বিপক্ষ স্ট্রাইকারকে কোণঠাসা করে ফেল। এই পরামর্শেই আমি সফল হই। নতুন ছেলে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের উপরে আস্থা রেখে তাঁকে তারকা বানিয়েছিলেন মিলোভান। এই কিবুও সে রকম লুধিয়ানায় পঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে ০-১ পিছিয়ে থেকে তরুণ শুভ ঘোষের উপরে আস্থা রেখে নামিয়ে দিতে পারেন। যার গোলেই ড্র করে মোহনবাগান। তুলে এনেছেন শেখ সাহিলের মতো প্রতিভা। এটাই তো সফল কোচের সাহস ও উদ্ভাবনী শক্তি।

মরসুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপ, কলকাতা লিগ এবং তার পরে বাংলাদেশে গিয়ে সাফল্য পায়নি মোহনবাগান। আক্রমণ ভাগে সালভা চামোরো ছন্দে ছিল না। কিবু নতুন উইন্ডোতে চামোরোকে সরিয়ে আনলেন পাপাকে। যে প্রথম তিন ম্যাচে গোল পায়নি। কিবু কিন্তু ওকে আস্থা রেখে খেলিয়ে গিয়েছেন। ডার্বি থেকে গোলের পর গোল করেই যাচ্ছে পাপা। আশুতোষ মেহতা মরসুম শুরুর দিকে সাইড ব্যাকে ভাল খেলছিল না। কিবু কিন্তু ওর উপরে ভরসা রেখে ঠিক তৈরি করে নিয়েছেন। গোলকিপার শঙ্কর রায়ের ত্রুটিবিচ্যুতি না ভেবে সর্বক্ষণ ওকে ভাল খেলতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাই ছেলেরাও ওঁর জন্য জান লড়িয়ে দিয়েছে মাঠে।

পাশাপাশি পুরনো জমানার সেই রক্ষণ থেকে তারকা ফুটবলারের উদ্দেশে বল তুলে দিয়ে গোল করার রাস্তায় হাঁটেননি কিবু। বদলে স্পেনীয় ঘরানার আক্রমণাত্মক পাসিং ফুটবল অর্থাৎ— বল ছাড়ো, জায়গা নাও, বল ধরো— এই পদ্ধতি ও দর্শনে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাই ২৩ পাসের গোল করে মোহনবাগান এই আই লিগে সাড়া ফেলেছে। দিয়েছে নতুনত্বের সন্ধান। সঙ্গে নংদম্বা নওরেমের গতি। সুহের ভি পি, কোমরন তুর্সুনভের চকিতে জায়গা বদল। রক্ষণ ও মাঝমাঠে ফ্রান মোরান্তে-ড্যানিয়েল সাইরাস-ফ্রান গঞ্জালেসের ত্রিভুজ পাহাড়ের মতো নির্ভরতা প্রদান এই মোহনবাগানকে। যে রণনীতি বিপক্ষ দলগুলো বুঝতে না পারায় আলাদা রকমের লেগেছে মোহনবাগানকে। যার ব্যান্ডমাস্টার সেই কিবু ভিকুনা।

সব শেষে একটা কথা। আই লিগ খেতাব জয়ের পরে ডার্বি ম্যাচ খেলতে নামছে মোহনবাগান। ১৯৯৯-২০০০ সালে আমার কোচিংয়ে জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েও তার পরে ডার্বি ম্যাচে হেরেছিল মোহনবাগান। কিবুকে তাই সতর্ক থাকতে হবে। আত্মতুষ্টি যেন ড্রেসিংরুমে প্রবেশ না করে। জোড়া ডার্বি জিতে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে সেই স্বাদ যেমন মধুর হবে, তেমন আমার কুড়ি বছর আগের সেই দুঃখও মুছে যাবে।

Subrata Bhattacharya Mohun Bagan I League 2020
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy