Advertisement
E-Paper

সূর্য ডুবিয়ে রাতের ইডেনে ‘এ বার আবার কেকেআর’

করছে, লড়ছে, জিতছে রে। প্লে-অফ আশা বাড়ছে রে! ম্যাচ দশ, পয়েন্ট এগারো, হাতে চার, যার তিনটে হলেই চলবে। মানে, পড়ে থাকা চার ম্যাচের তিনটে জেতা গেলে প্লে-অফ টিকিট নিশ্চিত। শুরু তখন আবার স্বপ্ন দেখা। কলকাতার বুকে আবার ফাইনালের হৃদস্পন্দন। বেঙ্গালুরু বা চেন্নাই নয়, ফাইনাল যে কলকাতায়। কলকাতার ইডেনে।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৩৬
সেই মুহূর্ত। উমেশের দুরন্ত ডেলিভারিতে বোল্ড ওয়ার্নার। ছবি: বিসিসিআই।

সেই মুহূর্ত। উমেশের দুরন্ত ডেলিভারিতে বোল্ড ওয়ার্নার। ছবি: বিসিসিআই।

করছে, লড়ছে, জিতছে রে। প্লে-অফ আশা বাড়ছে রে!

ম্যাচ দশ, পয়েন্ট এগারো, হাতে চার, যার তিনটে হলেই চলবে। মানে, পড়ে থাকা চার ম্যাচের তিনটে জেতা গেলে প্লে-অফ টিকিট নিশ্চিত। শুরু তখন আবার স্বপ্ন দেখা। কলকাতার বুকে আবার ফাইনালের হৃদস্পন্দন। বেঙ্গালুরু বা চেন্নাই নয়, ফাইনাল যে কলকাতায়। কলকাতার ইডেনে।

তার আগে গ্রুপ লিগের গাঁট? দুমিনির দিল্লি, ম্যাক্সওয়েলদের পঞ্জাব, রোহিতের মুম্বই নিয়ে বোধহয় কেকেআরের ভাবার কিছু নেই। বরং দুমিনি-রোহিতরাই সোমবারের নাইট ঔদ্ধত্যের ভিডিও দেখলে ভাল করে ঘুমোতে পারবেন না। ডেভিড ওয়ার্নারকে যে ‘অত্যাচার’ সোমবার সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে সহ্য করতে হল। টি-টোয়েন্টির পৃথিবীতে যেখানে লাস্ট-বল ফিনিশ নিয়ম, সেখানে ওয়ার্নাররা তো ‘ফিনিশ’ হয়ে গেলেন পাঁচ ওভারের মধ্যে! ম্যাচটা কুড়ি ওভার পর্যন্ত গড়াল, কুড়ি ওভার খেলতে হবে বলে। ওয়ার্নার-গম্ভীর যদি দশ ওভার পরে হাত-টাত মিলিয়ে টিম বাস ধরার জন্য বেরিয়ে যেতেন, কারও কিছু বলার থাকত না।

কলকাতা বরং আক্ষেপ করতে পারে অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে। আইপিএল আটে আজ পর্যন্ত ইডেনে কেকেআর থাকলে একটা সিটও ফাঁকা থাকেনি। চেন্নাই, আরসিবি, মুম্বই, সামনে যে-ই থাকুক না কেন। কেকেআর যে হায়দরাবাদকে ইডেনের লো, স্লো উইকেটে স্পিন-ফাঁসে দমবন্ধ করে মারবে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। আশ্চর্যের হচ্ছে, ইডেনে কেকেআর খেলছে অথচ প্রথম বারের জন্য গ্যালারির বেশ কয়েকটা ব্লক ফাঁকা। আর ফাঁকা সে দিন, যে দিন চলতি আইপিএলে শত্রুকে সবচেয়ে নির্মম ভাবে ‘হত্যা’ করে নিজেদের সবচেয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ জয় তুলে নিল কেকেআর।

আর হত্যার কারিগর কারা? না, চুয়াল্লিশের ব্র্যাড হগ! ভারতীয় টিমে ‘মিস্টার ইনজুরি’ উমেশ যাদব! জাতীয় দলে বহু দিনের ব্রাত্য রবিন উথাপ্পা! দেশের জার্সিতে শেষ বড় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে নেমেছিলেন যখন, বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হননি। ভারতীয় ক্রিকেটে সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের প্রভাব প্রবল বিদ্যমান। সেটা ২০০৭, সেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সেটা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রথম বিশ্বজয়! আর এক জন, আন্দ্রে রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে গেইল-ব্র্যাভো-পোলার্ডের যা খ্যাতি, তার সিকি ভাগও রাসেলের ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ যা দেয়নি, কেকেআর সেটা দিচ্ছে। টিমের সেরা অলরাউন্ডারের মর্যাদা।

শুধু রাসেল কেন, গোটা টিমটাই তো গত দু’বছর ধরে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তে রূপান্তরের রূপকথা। নইলে কোন যুক্তিতে ধরবেন উমেশ যাদবের তৃতীয় বলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওপেনারের অফস্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া? উমেশ যে বলটা ওয়ার্নারকে করলেন, ওটাকে আইপিএলের সেরা ডেলিভারি বলা হচ্ছে। শিখর ধবন স্পিনটা এত ভাল খেলেন। কিন্তু ব্র্যাড হগ নামক গোলকধাঁধায় তাঁকে আইপিএলে এই প্রথম ঢুকতে হল। আর খুব প্রত্যাশিত ভাবেই পথ হারালেন। সানরাইজার্স ব্যাটিং বলতে তো ওই আড়াই জন। একটা ওয়ার্নার, একটা ধবন আর বাকি অর্ধেক টিমের অন্য নয়। তা আড়াইয়ের মধ্যে দুই পাঁচ ওভার পুরো হওয়ার আগেই ডাগআউটে। আর হায়দরাবাদ সূর্যের ওখানেই অস্ত।

বৃষ্টি যে প্রতিপক্ষের ডেরা থেকে জয় কেড়ে নিয়েছিল, সেই বৃষ্টি একই প্রতিপক্ষের থেকে জয় তুলে নেওয়ার মঞ্চ তৈরি করে দিল। বিশাখাপত্তনমে ওয়ার্নারদের কুড়ি ওভারে তোলা ১৭৭ তাড়া করতে নেমে নাইটরা দেখেছিলেন, বৃষ্টি ওটাকে করে দিয়েছে বারো ওভারে ১১৮। কিন্তু সোমবারের ইডেনের স্কোরবোর্ড যে দেখাচ্ছে কেকেআর ৩৫ রানে জয়ী, তার কারণ পরোক্ষে হলেও সেই বৃষ্টি।

এ দিন যে উইকেটে টস জিতে ওয়ার্নার কেকেআরকে ব্যাট করতে পাঠালেন, সেটা চার পেসার নিয়ে নামার মতো নয়। বল পড়ে নিচু হচ্ছে। এতটাই থেমে থেমে আসছে যে, রায়ান টেন দুশখাতে ব্যাট চালানোর বেশ পরে উপলব্ধি করলেন মোয়েস এনরিকের স্লোয়ারটা তাঁর প্যাডে জমা হচ্ছে। বলা হল, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উইকেট প্রায় সর্বক্ষণ কভার দিয়ে রাখায় তা আরও ঢিমে হয়েছে। কিন্তু তাতে কেকেআরের ক্ষতি হয়নি। প্রথমে ৫৭ রানের ওপেনিং জুটি। পরে পাঠানোচিত না হলেও ইউসুফ পাঠানের দায়িত্ব নিয়ে ১৯ বলে অপরাজিত ৩০ কেকেআরকে পৌঁছে দিয়েছিল স্বস্তির সেই ভূখণ্ডে, যেখান থেকে হারাটা সত্যিই কঠিন। বিশেষ করে যেখানে গম্ভীরের হাতে স্পিন চক্রব্যূহ সৃষ্টির অফুরন্ত মশলা। জর্জ ব্র্যাডলি হগ। জোহান বোথা। পীযূষ চাওলা। ইউসুফ পাঠান।

যে চার মিলে গোটাচারেক উইকেট তুলে উমেশের আগুনে পেসের যোগ্য মর্যাদা দিয়ে গেলেন। হায়দরাবাদ হারল বললে ভুল হবে। স্রেফ ধ্বংস হয়ে গেল। সূর্যরশ্মির তেজ নয়, রাতের ইডেন জুড়ে থাকল নতুন একটা স্লোগান। কেকেআর, কেকেআর, এ বার আবার কেকেআর। থাকল উমেশ, পীযূষদের স্তুতি। থাকল পুরনোকে ভুলে নতুন নায়ক ব্র্যাডের জন্য উষ্ণ অভ্যর্থনার আলিঙ্গন।

সময় কত দ্রুত সব ভুলিয়ে দেয়! সুনীল নারিন বলে সত্যিই এই টিমটায় কেউ ছিলেন তো?

সংক্ষিপ্ত স্কোর

কলকাতা নাইট রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬৭-৭ (মণীশ ৩৩, গম্ভীর ৩১, কর্ণ ২-২৯, ভুবনেশ্বর ২-৪২)

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০ ওভারে ১৩২-৯ (এনরিকে ৪১, কর্ণ ৩২, উমেশ ২-৩৪, হগ ২-১৭)।

kkr win IPL8 kkr vs sunrisers hyderabad sunrisers hyderabad lost eden for kkr abpnewsletters ipl 8 latest news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy