Advertisement
E-Paper

রাহানেকে ফেরাতে বাইরে হয়তো অশ্বিন

০-১ পিছিয়ে পড়া টেস্ট সিরিজে প্রত্যাবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে তাই ফের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহালি-দের টিম ম্যানেজমেন্টকে।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৭
লড়াই: দ্বিতীয় টেস্টে দলে থাকতে পারেন যে কোনও একজন। ফাইল চিত্র

লড়াই: দ্বিতীয় টেস্টে দলে থাকতে পারেন যে কোনও একজন। ফাইল চিত্র

তারকা ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির মধ্যে তাঁকে কেমন যেন দলছুট এক তারকা দেখায়। তিনি আর. অশ্বিন— দেশের মাঠে বল হাতে এক নম্বর ম্যাচউইনার। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার-বন্ধু পরিবেশে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম একাদশে আছেন তো?

নিঃসংশয় হওয়া যাচ্ছে না!

অশ্বিনের নির্বাচন নিয়ে যে কালো মেঘ গুমোট পাকাচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রথম ইঙ্গিত দু’দিন আগের আনন্দবাজারেই প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। কেপ টাউন টেস্টের পর থেকেই কারও কারও মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করে, এখানকার পরিবেশে স্পিনার খেলানোটা বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে না তো?

অশ্বিন কেপ টাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭.১ ওভার বল করে দু’টি উইকেট পান। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র এক ওভার বল করেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৩০ রানে অলআউট করা দ্বিতীয় ইনিংসে দশটি উইকেটই তোলেন ভারতীয় পেসাররা। তা-ও মাথায় রাখা দরকার, দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে কেপ টাউনের নিউল্যান্ডস হচ্ছে একমাত্র কেন্দ্র, যেখানে স্পিনাররা কিছুটা সাহায্য পান। সেঞ্চুরিয়ন বা জোহানেসবার্গ— যেখানে পরের দু’টি টেস্ট খেলতে হবে, সেখানে কোনও রেড কার্পেট অভ্যর্থনা নেই স্পিনারদের জন্য।

০-১ পিছিয়ে পড়া টেস্ট সিরিজে প্রত্যাবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে তাই ফের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে রবি শাস্ত্রী, বিরাট কোহালি-দের টিম ম্যানেজমেন্টকে। কেপ টাউনে অজিঙ্ক রাহানের পর এ বার সেঞ্চুরিয়নের দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো অশ্বিনের নির্বাচন নিয়ে জলঘোলা হওয়ার পালা। বৃহস্পতিবার সুপারস্পোর্ট পার্কে কোহালিদের নেট প্র্যাক্টিস কোনও সূচক হলে, অশ্বিনকে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম একাদশে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ দেখাচ্ছে।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় টেস্টে ধবনের জায়গায় রাহুল, ফিরতে পারেন ইশান্ত-রাহানে

একে তো গোটা প্র্যাক্টিসে তাঁকে ভীষণ ভাবেই নিষ্প্রভ দেখাল। হাল্কা বোলিংয়ের বেশি হাতই ঘোরালেন না। তার উপর ব্যাটিংও করলেন না। পরের দিকে সামান্য ‘নকিং’ করলেন। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা টেস্টের দু’দিন আগে নেটে ব্যাট করতে না ঢোকাটা মোটেও তাঁর জন্য শুভলক্ষণ নয়।

শুরুতেই বল করার সময় কোহালির মারা জোরাল স্ট্রেট ড্রাইভ অশ্বিনের হাঁটুতে এসে লাগল। কোহালি বার বার হাত নেড়ে ক্ষমা চাইছিলেন। অশ্বিন তখন অধিনায়ককে আশ্বস্ত করলেন যে, বড় কিছু নয়। এর পরেই বোলিং ছেড়ে তিনি গিয়ে বসে পড়লেন চেয়ারে। বার বার আঘাত পাওয়া জায়গায় হাত ঘষতে থাকলেন। সেই যে থমথমে মুখ নিয়ে বসে পড়লেন, আর তাঁকে খুব একটা চনমনে অবস্থায় পাওয়াই গেল না।

তবে কি দেশের মাঠে দলের এক নম্বর বোলিং অস্ত্রকে বলেই দেওয়া হয়েছে যে, সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের নকশায় তিনি না-ও থাকতে পারেন? ভারতীয় অফস্পিনারের ন্যাতানো শরীরী ভাষা দেখে সে রকমই মনে হচ্ছে। এ দিন নেট প্র্যাক্টিস দেখেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল, ভারতীয় দল স্ট্র্যাটেজি পাল্টে ছয় ব্যাটসম্যানে নামার দরজা খোলা রাখছে। অজিঙ্ক রাহানে-কে বেশ ব্যস্ত দেখাল নেটে। ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের সঙ্গে আলাদা করে বাউন্সিং বল খেলা প্র্যাক্টিস করলেন তিনি। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তিনি ফিরছেন।

আবার তেমনই ব্যস্ত দেখাল রোহিত শর্মা-কেও। যখন বিরাটের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন, অধিনায়ককেও বার-বার তাঁর শটের প্রশংসা করতে শোনা গেল। স্টাম্পের পিছনে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে সকলের ব্যাটিং জরিপ করা হেড কোচ রবি শাস্ত্রী-ও তারিফ করতে থাকলেন। নেট থেকে বেরনোর পরে শাস্ত্রী আলাদা করে দীর্ঘ আলোচনা করলেন বিরাট ও রোহিতের সঙ্গে।

এই যেখানে আবহ, বিশ্বাস করা কঠিন যে, রোহিতকে বসিয়ে প্রথম একাদশে রাহানে-কে আনতে চাইবে দল। বরং অনেক বেশি বাস্তব ফর্মুলা হতে পারে ছয় ব্যাটসম্যানে নামার সিদ্ধান্ত। সেক্ষেত্রে রোহিত এবং রাহানে দু’জনেই থাকলেন। অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য-কে নিয়ে চার পেসারে বোলিং বিভাগ সাজানো হবে। কেপ টাউনে খেলেছিলেন মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার এবং যশপ্রীত বুমরা। এই পেস ত্রয়ীই সম্ভবত খেলবেন সেঞ্চুরিয়নে। ছয় ব্যাটসম্যান এবং চার পেসারের নকশা প্রয়োগ করতে হলে অশ্বিনকে বাইরে রাখা ছাড়া কোনও রাস্তা খোলা নেই।

আর একটা জটলা চলছে, মুরলী বিজয়ের সঙ্গী ওপেনার কে হবেন? বাঁ হাতি রাখার জন্য কেপ টাউনে ব্যর্থ হওয়া শিখর ধবন-কে রেখে দেওয়া হবে নাকি কে এল রাহুল-রে নিয়ে আসা হবে? এ দিন রাহুল-কে দীর্ঘ সময় ব্যাট করিয়ে তৈরি রাখা হল। সম্ভবত আজ, শুক্রবার নেট প্র্যাক্টিসে শেষ বার দেখে নিয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ ওটিস গিবসন কেপ টাউনে জেতার পরেই শুনিয়ে রেখেছেন, তিনি গোটা গ্রীষ্মেই চার পেসারে খেলতে চান। গিবসন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বলে আগুনে পেসারদের প্রতি বাড়তি মোহ থাকতে পারে। তা হলেও কেপ টাউনে সাফল্যের পরে দক্ষিণ আফ্রিকা গতি আর সুইংয়েই যে ফের কোহালিদের আক্রমণ করতে চাইবে, তা কোনও রকেট সায়েন্স নয়।

ভারতীয় দল এ দিন সেঞ্চুরিয়নের মাঠে গিয়ে দেখেছে, পিচে ঘাস রয়েছে। গতি বা বাউন্সের চেয়েও বেশি করে সিম এবং সুইংকে সাহায্য করতে পারে সেঞ্চুরিয়নের পিচ। অর্থাৎ ভার্নন ফিল্যান্ডারের কথা ভেবেই রণক্ষেত্র তৈরি করছেন ফ্যাফ ডুপ্লেসি-রা। ডেল স্টেন নেই বলে নতুন কাউকে আনতে হবে তাঁদের। যা ইঙ্গিত, স্টেনের জায়গা নিতে পারেন অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে আইপিএলে ভাল বল করা মরিসের হাতে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলার মতো গতি এবং বাউন্স রয়েছে। লম্বা বলে তিনি যে কোনও পিচ থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন।

আবার দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটমহলের কারও কারও মুখে ঘুরছে লুঙ্গিসানি এনগিডি-র নাম। ২১ বছরের দীর্ঘদেহী তরুণকে মনে করা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পেসার। দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন জোরে বোলারদের একজন এনগিডি নিয়মিত ভাবে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন। কোয়াজুলু নাটাল থেকে উঠে আসা এনগিডি-কে অনেকে ইতিমধ্যেই ডাকতে শুরু করেছেন ‘নতুন রাবাডা’ বলে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় স্পিন সত্যিই এখন দুয়োরানির সন্তান। সকলের মাথাতেই চলছে শুধু গতি, বাউন্স, সিম, সুইং। বুঝেশুনেই হয়তো মিডিয়াম পেস করাচ্ছিলেন অশ্বিন!

Ajinkya Rahane Cricket Cricketer Ravichandran Ashwin Centurion Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy