Advertisement
E-Paper

ঝুঁকিহীন ক্রিকেট হারল সাহসী শ্রীলঙ্কার কাছে

সনৎ জয়সূর্য এবং কালুভিথর্ণে নামে সেই দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনার দেখিয়ে দিয়েছিলেন, শুরুতে ফিল্ডিং বিধিনিষেধ থাকার সময় ঝুঁকি নিয়ে তুলে তুলে শট খেলতে হবে।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০৪:৩৫
বিধ্বস্ত: ওভালে হারের পরে কোহালিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিল। ছবি: গেটি ইমেজেস

বিধ্বস্ত: ওভালে হারের পরে কোহালিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিল। ছবি: গেটি ইমেজেস

বৃহস্পতিবারের ওভালে শুধু বিরাট কোহালির ভারতকে অপ্রত্যাশিত ভাবে হারিয়েই দিল না অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের শ্রীলঙ্কা। প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেল যে, পুরনো আমলের একদিনের ক্রিকেট নীতি আঁকড়ে ধরে কোহালি-রা পড়ে আছেন কি না।

সেই মান্ধাতার আমল, যখন এক দিনের ক্রিকেটে ঠুকেঠুকে শুরুর দিকের ওভারগুলো খেলতেন ওপেনাররা। উইকেট রেখে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করতেন। তার পর শেষের ওভারগুলোতে অলআউট চালাবেন। ইতিহাস বলবে, এই পুরনো আমলের একদিনের ক্রিকেটকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেওয়া দুই তারকা এসেছিলেন শ্রীলঙ্কা থেকে।

সনৎ জয়সূর্য এবং কালুভিথর্ণে নামে সেই দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনার দেখিয়ে দিয়েছিলেন, শুরুতে ফিল্ডিং বিধিনিষেধ থাকার সময় ঝুঁকি নিয়ে তুলে তুলে শট খেলতে হবে। তাঁরাই প্রথম দেখিয়ে দেন যে, ওয়ান ডে ক্রিকেটে দু’টো স্লগ পর্ব আছে। একটা শুরুতে। অন্যটা শেষে। শুধু শেষে ঝড় তোলার কথা ভাবলে হবে না।

জয়সূর্য-কালুর ওয়ান ডে বিপ্লব ঘটেছিল ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। শ্রীলঙ্কার কাপ জয়ের একুশ বছর হয়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি নামে আরও মারকাটারি ফর্ম্যাট এসে গিয়েছে। তার ফলে ব্যাটসম্যানরা আরও ঝুঁকিপূর্ণ সব শট খেলতে শুরু করেছেন। আগে যে তিনশো করলেই জেতার লাইসেন্স পাওয়া যেত, এখন আর সেটা নেই। এখন সাড়ে তিনশো করেও টিমগুলো আতঙ্কে থাকছে, পাটা উইকেটে রানটা না তাড়া করে দেয়।

বৃহস্পতিবারের ওভালে যেমন হল। এমনিতে এ দিনও ভারত তুলল ৫০ ওভারে ৩২১-৬। যে কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, যে কোনও পরিবেশে এই রানটাকে ভালই স্কোর বলা হবে। কারও কারও মুখে এমনও শোনা গেল যে, ইংল্যান্ডে শুরুর দিকে পিচে মুভমেন্ট থাকে। তাই সতর্ক শুরু করার রণনীতি ঠিকই আছে। কিন্তু তা বলে প্রথম দশ ওভারে উইকেট না হারিয়ে ৪৮?

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রমরমার যুগে ৩২১-কে শুধু ভাল স্কোরই বলা যেতে পারে। নিরাপদ স্কোর নয়। ওভালের মতো পাটা ব্যাটিং উইকেটে পড়লেই সেই রান তাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে। দরকার সাহসী হৃদয়। শ্রীলঙ্কা যেটা দেখাল।

এজবাস্টনে পাকিস্তান মহারণের চাপ নিতে না পেরে ধসে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার সেই চাপ ছিল না। ওভালে বেশির ভাগটাই ভর্তি করে দিয়েছিল ভারতীয় সমর্থকেরা। টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট হিসেবে কোহালিদের ভাবা হচ্ছিল। কেউ ভাবেনি, নরমসরম শ্রীলঙ্কা হারিয়ে দিতে পারে ভারতকে। চাপমুক্ত অবস্থায় ম্যাথিউজ-রা সেরা অঘটনই ঘটিয়ে দিলেন। আট বল বাকি থাকতে জিতে গেল শ্রীলঙ্কা।

ম্যাচ চলার সময় সারাক্ষণ ভারতীয় সমর্থকদর তাসার বাজনা শোনা গিয়েছে। তার সঙ্গে ভাংড়া নাচ। ম্যাচের শেষে ওভালের বাইরে শ্রীলঙ্কানদের উৎসব চলল। ভারতীয়দের যেমন প্রিয় বাজনা তাসা, শ্রীলঙ্কানদের তেমন বিউগল। তারই আওয়াজে ওভালের দখল নিয়ে ফেললেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট ভক্তরা।

আরও পড়ুন:প্রশ্নপত্র কঠিন হতেই পাশ করতে পারল না বুমরা-রা

সাত উইকেটে জিতে গ্রুপটাকেই রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের দিকে ঠেলে দিল মুথাইয়া মুরলীধরনের দেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা— চারটি দলেরই এখন একটি করে জয়। সকলের শেষ ম্যাচ মরণ-বাঁচন লড়াই। চারটে দলের যে কোনও দু’দল সেমিফাইনালে যেতে পারে। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জিততেই হবে কোহালিদের। তেমনই পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচে যারা জিতবে, তারা সেমিফাইনালে চলে যাবে। এটা অবশ্য সোজাসুজি হিসেব। বৃষ্টি হলে আবার সমীকরণ পাল্টাবে।

কোহালি ম্যাচের শেষে ঠিকই বলে গেলেন যে, তাঁদের নক-আউট পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিরার কোয়ার্টার ফাইনাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। জিতলে টুর্নামেন্টে থাকবেন। হারলে সে দিনই বিদায়। কিন্তু ওভালে সেই ম্যাচের আগেই পোস্টমর্টেম সেরে ফেলতে হবে কোহালিদের। যেমন, রোহিত শর্মা এবং শিখর ধবন এ দিনও ভাল শুরু করলেন। রোহিত করলেন ৭৯ বলে ৭৮। ধবন ১২৮ বলে ১২৫। ভারত প্রথম উইকেটে তুলল ১৩৮। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের তিনটি সেঞ্চুরির সংখ্যাকে ধরে ফেললেন ধবন। কিন্তু শুরুতে পাওয়ার প্লে-র সুবিধে নিতে পারছেন না ওপেনাররা। সেটাকে কি ঠিক করার চেষ্টা হবে?

দারুণ কিছু অভিনবত্ব দেখা যাচ্ছে না ভারতীয়দের শট খেলার মধ্যেও। শ্রীলঙ্কার আসেলা গুণরত্ন এ দিন যশপ্রীত বুমরাকে সুইপ করে ছয় মেরে দিলেন। অভিজ্ঞতায় ভরপুর ভারতীয় ব্যাটিং সে রকম কিছু দেখাতে পারেনি। কোহালিদের দলে ভয়ডরহীন মার্কা তরুণ ক্রিকেটার বলতে একমাত্র হার্দিক পাণ্ড্য।

যদিও কোহালি ম্যাচের পরে বলে গেলেন, ব্যাটসম্যানদের জন্য হারেননি। ‘‘আমাদের মনে হয়েছিল, যথেষ্ট রান তুলেছি। কিন্তু শ্রীলঙ্কা দারুণ খেলেছে। এ রকম টুর্নামেন্টে এমন সব ম্যাচ জিতলে প্রতিপক্ষকেও কৃতিত্ব দিতে হবে,’’ বললেন তিনি। মনে হয় না একই বক্তব্য থাকবে ম্যাচের পোস্টমর্টেম করতে বসলে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোহালি, যুবরাজ, হার্দিক-রা তুলেছিলেন ৪ ওভারে ৭২। এ দিন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ধবন, ধোনি এবং কেদার যাদব-রা মিলে শেষ দশ ওভারে তুললেন ১০৩ রান। রোজ রোজ স্লগ ওভারের উপর ভরসা করে বড় স্কোর তোলা যাবে কি না, সেই প্রশ্নও থাকছে।

শ্রীলঙ্কার প্রায় সবাই রান করলেন। ম্যাচের সেরা কুশল মেন্ডিস ৯৩ বলে ৮৯। ওপেনার গুণতিলক ৭২ বলে ৭৬। এই দু’জনে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ১৫৯ তুলে জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে দিলেন। কিন্তু ভারতকে হারিয়ে দিল ম্যাথিউজ এবং গুণরত্নের ঠান্ডা মাথা। অপরাজিত থেকে তাঁরাই নিশ্চিত করে দিলেন, ওভালে সাহসী শ্রীলঙ্কা জিতবে। ঝুঁকি নিতে না চাওয়া ভারতীয় দল নয়।

India Lost Sri Lanka Oval বিরাট কোহালি শ্রীলঙ্কা ওভাল ICC Champions Trophy 2017 Champions Trophy Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy