Advertisement
E-Paper

পুত্রের ইয়র্কার, বাবার বাউন্সার

তাঁর ছেলে বলে সহজে প্রচার পাক অর্জুন, কখনও চাননি সচিন। কয়েক বার তাঁর কাছে ছেলেকে নিয়ে প্রশ্ন করে একই জবাব পাওয়া গিয়েছে, ‘‘আগে ওকে খেলতে দিন। অর্জুন এখন ক্রিকেটকে উপভোগ করছে, সেটাই করুক।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:১২
অনুশাসন: ছেলে অর্জুনকে নিয়ে প্রচার চান না সচিন। ফাইল চিত্র

অনুশাসন: ছেলে অর্জুনকে নিয়ে প্রচার চান না সচিন। ফাইল চিত্র

সময় বদলায়। যুগ বদলায়। বদলায় না তেন্ডুলকরদের ঘরানা।

ছেলেবেলায় ক্রিকেটের বিস্ময় বালক দেখেছিলেন গুরু রমাকান্ত আচরেকরের অনুশাসন এবং শৃঙ্খলা। সে দিনের সেই বিস্ময় বালক এখন ৪৪ বছরের পিতা। আর ক্রিকেট গ্রহে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছে তাঁর ১৭ বছরের পুত্র। কিন্তু একই রকম আশ্রমিক দীক্ষায় ছেলে অর্জুনকে বড় করতে চাইছেন সচিন তেন্ডুলকর। দু’দিন আগেই ইংল্যান্ডের নেটে বল করতে গিয়েছিল অর্জুন। বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসারের প্রথম বলেই ঘায়েল ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো। সেই খবর ফলাও করে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় মোটেও প্রসন্ন নন সচিন। ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘কিছু না করেই হেডলাইন কেন?’’

তাঁর ছেলে বলে সহজে প্রচার পাক অর্জুন, কখনও চাননি সচিন। কয়েক বার তাঁর কাছে ছেলেকে নিয়ে প্রশ্ন করে একই জবাব পাওয়া গিয়েছে, ‘‘আগে ওকে খেলতে দিন। অর্জুন এখন ক্রিকেটকে উপভোগ করছে, সেটাই করুক।’’ ইয়র্কার কাণ্ড সারা বিশ্বের সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরে আরও সতর্ক হয়ে গিয়েছেন তিনি। বাবার ছোটবেলার আশ্রমিক সেই মন্ত্রের প্রত্যাবর্তনে অন্তরালে থাকতে হবে অর্জুনকে।

মুম্বই ক্রিকেট মহলে কারও কারও মনে হচ্ছে, ছেলেবেলায় বাবার শেখা মূল্যবোধ আর অনুশাসন ক্রিকেটার অর্জুনের সেরা গাণ্ডীব হতে যাচ্ছে। যদিও দু’জনের ক্রিকেট পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা। বাবা দুনিয়া শাসন করেছেন ব্যাট হাতে। কখনওসখনও বল হাতে ভেল্কি দেখাতেন। যেমন ইডেনে হিরো কাপের সেই ম্যাজিক শেষ ওভার। তখন করতেন হাল্কা মিডিয়াম পেস। পরে হয়ে গেলেন পার্টটাইম স্পিনার।

ছেলে কিন্তু হতে চায় প্রকৃত অলরাউন্ডার। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান, বাঁ-হাতি জোরে বোলার। গত মরসুমে ওপেন করে ক্লাব স্তরে একটি সেঞ্চুরিও করেছিল অর্জুন। এ বারে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব উনিশ দলে সুযোগ পেতে পারে বলে অনেকে আশা করছেন। সচিন নিজেও সম্ভবত মনে করছেন, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় অর্জুনের জন্য।

গত এক বছর ধরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে অর্জুনের শক্তি বাড়ানোর ওপর। ট্রেনার রাখা হয়েছে। ব্যাটিং এবং বোলিং দেখার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞও আছে। গত দু’তিন বছর ধরে ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেটেও পুত্রকে খেলাতে নিয়ে যান সচিন। বাবার ক্রিকেটীয় আঁতুর ঘর ছিল শিবাজি পার্ক। ছেলের লর্ডস। এমসিসি ক্লাবের হয়ে ইংল্যান্ডের লিগে খেলে সে! সেই কারণেই লর্ডসে আন্তর্জাতিক দলের প্র্যাকটিসে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় অর্জুনকে।

কেমন ক্রিকেটার অর্জুন?

‘‘এই বয়সে আগ্রহটাই আসল। সেটা কিন্তু ওর মধ্যে দেখেছি আমি,’’ বলেন ওয়াসিম আক্রম। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং পরামর্শদাতা থাকাকালীন এক বার সচিনের অনুরোধে অর্জুনকে কেকেআরের নেটে পেস বোলিংয়ের পাঠ দিয়েছিলেন আক্রম। পাক কিংবদন্তি মনে করেন, বাবার অনন্য প্রতিভার সঙ্গে ছেলের তুলনা করাটা অন্যায় হবে। ‘‘সচিনের মতো অবিশ্বাস্য প্রতিভা বার বার আসে না। ষোলো বছর বয়সে ও আমাদের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে এসেছিল। লেগে থাকলে অর্জুনও যে ভাল ক্রিকেটার হবে না, কে বলতে পারে,’’ বলেছিলেন আক্রম। অভিষেকের সেই ঝাঁকরা চুলের সচিনকে দেখে ওয়াকার ইউনিসকে বলেছিলেন আক্রম, ‘‘ইয়ে খেলেগা ক্যায়া, ইয়ে তো দুধ পিতা বাচ্চা হ্যায়!’’

বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ ধরিয়ে দিচ্ছেন সচিন-পুত্রের উচ্চতার দিকটা। ‘‘ছয় ফুটের উপর লম্বা অর্জুন। যার ফলে বাড়তি গতি আর বাউন্স পাচ্ছে। সেই কারণেই হয়তো ইয়র্কারটা গিয়ে আছড়ে পড়ল বেয়ারস্টোর পায়ের পাতায়।’’ বলেই মুহূর্তে সতর্ক হয়ে গেলেন মুম্বই ক্রিকেটের এক অতি পরিচিত নাম। অর্জুনের বাবা আবার শুনে ফেলল না তো!

Sachin Tendulkar Arjun Tendulkar Cricket সচিন তেন্ডুলকর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy