Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জীবনের জন্য মার্ক ওয়ের অধিনায়ক সৌরভ

টেস্ট সিরিজ শুরু হল বলে, আপনাদের মুখের হাসি কিন্তু বেশি দিন থাকবে না

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জেতেননি হেন ট্রফি নেই বিশ্ব ক্রিকেটের ক্যাবিনেটে। কিন্তু কৌলীন্য আর আভিজাত্যের যে বেসরকারি ট্রফিটা আজও আইসিসির বাইরে দেওয়া হয়ে থাকে, সেখানে এখনও প্রবেশাধিকার নেই তাঁর! ট্রফিটা হল, নিজের অধিনায়কত্ব সম্পর্কে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে খুঁতখুঁতে সমাজের শংসাপত্র। সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল শনিবারও দ্বিধাহীন ভাবে জানিয়ে দিল এমএসডি-কে সেরা টেস্ট অধিনায়ক কেন, টেস্ট দলনেতা হিসেবে কোনও রকম পদেরই তারা মনে করে না।

আড্ডায় মার্ক। শনিবার মেলবোর্নে। —নিজস্ব চিত্র

আড্ডায় মার্ক। শনিবার মেলবোর্নে। —নিজস্ব চিত্র

গৌতম ভট্টাচার্য
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫০
Share: Save:

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জেতেননি হেন ট্রফি নেই বিশ্ব ক্রিকেটের ক্যাবিনেটে। কিন্তু কৌলীন্য আর আভিজাত্যের যে বেসরকারি ট্রফিটা আজও আইসিসির বাইরে দেওয়া হয়ে থাকে, সেখানে এখনও প্রবেশাধিকার নেই তাঁর! ট্রফিটা হল, নিজের অধিনায়কত্ব সম্পর্কে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে খুঁতখুঁতে সমাজের শংসাপত্র।

সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল শনিবারও দ্বিধাহীন ভাবে জানিয়ে দিল এমএসডি-কে সেরা টেস্ট অধিনায়ক কেন, টেস্ট দলনেতা হিসেবে কোনও রকম পদেরই তারা মনে করে না। বছর দেড়েক আগে প্রথম কথাটা বলেছিলেন স্টিভ ওয়। তার পর মাসখানেক আগে আওয়াজ তোলেন ইয়ান চ্যাপেল। একেবারে টাটকা শনিবার একই আওয়াজ তুললেন মার্ক ওয়। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সতেরো হাজার রান আর আটত্রিশটা সেঞ্চুরি আছে বলেই নয়। মার্ক ওয়ের বক্তব্যের আলাদা গুরুত্ব যে হেতু তিনি এখন অস্ট্রেলীয় নির্বাচক। এখানে শুনছিলাম রড মার্শ বছরখানেকের মধ্যে অবসর নিলে মার্কই হবেন প্রধান নির্বাচক। এই পৃথিবীতে স্টিভ ওয়ের ঠিক চার মিনিট পরে আসা মার্ক এ দিন জানিয়ে দিলেন, ভারত অধিনায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম পছন্দ আজও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

“সৌরভ একটা ঘ্যানঘ্যানে চরিত্র ছিল মাঠে। সারাক্ষণ স্টিভের পেছনে লাগত। টসে দেরি করত। মাঠে পাল্টা নানা কথা বলত। কিন্তু একটা আগুনে মেজাজ আমদানি করেছিল ও দলটায়। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, সৌরভ ছিল অনেকটা অস্ট্রেলিয়ানদের মতো! ইন্ডিয়াকে তখন আমরা ভীষণ শক্ত দেখতাম। ধোনির আমলে সেই ব্যাপারটা চলে গ্যাছে। ধোনি ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টিতে খুব ভাল ক্যাপ্টেন। কিন্তু টেস্টে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে।”

আপনার জীবনের জন্য কাকে অধিনায়ক বাছবেন? সৌরভ, না ধোনি?

এর ঠিক আগে জীবনের জন্য কাকে দিয়ে স্লেজিং করাবেন, ম্যাকগ্রা না জিমি অ্যান্ডারসন, ভাবতে অনেক সময় নিয়ে ম্যাকগ্রা বলেছেন মার্ক। কিন্তু ক্যাপ্টেন্সির ব্যাপারে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাঁর জবাব, “গাঙ্গুলি।”

মার্ক দুপুরে নিজের সিডনির বাড়ি থেকে মেলবোর্ন উড়ে এসেছেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশনের ‘বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। সাধারণত জুনিয়র ওয় মিডিয়া একেবারে এড়িয়ে চলেন। নিজের দেশের সাংবাদিকদের সম্পর্কেও তাঁর অসূয়া। আর নেটে সে জন্যই তাঁর মন্তব্য এত কম। অথচ শনিবারের ক্রিকেট টক শো-এ বাইশ গজের মার্ক ওয়ের মতোই উদ্দাম স্ট্রোক খেললেন। প্রাক্তন জাভেরিয়ান তাঁর জন্য একটা প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন।

কী করলে ধোনির ভারত এই শীতে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ জিতে ফিরতে পারে?

মার্ক প্রশ্নকর্তার নাম শুনে বলে দিলেন, “সৌরভ, কিছুতেই কিছু হবে না। টেস্টে ভারত হয় ১-৩, নইলে ০-৪ সিরিজ হারবে। স্পিনিং উইকেট পাওয়ার কোনও চান্সই নেই ভারতের।” মেলবোর্ন উপকণ্ঠের পাঁচতারা হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে ভর্তি শ্রোতারা জানতে চান, বিশ্বকাপে কী হবে?

মার্ক মনে করেন, বিশ্বকাপে ভারত শেষ চার দলের মধ্যে থাকবে। তাঁর বাজি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ধোনির ভারত।

নির্বাচক হয়ে এখন সারা মরসুম খেলা দেখে বেড়াতে হয় বিগ ব্যাশ থেকে শেফিল্ড শিল্ড। তাই হয়তো বিশ্ব ক্রিকেটে অন্য দলগুলোরও খুঁটিনাটি মুখস্থ। বললেন, “বিরাট কোহলি কী করে ইংল্যান্ডে একই ভুল বারবার করে গেল আর ওকে কেউ ধরিয়ে দিল না, ভেবে আমার অবাক লাগছে। ও বলের পেছনে হ্যাঁচকা দৌড় লাগাচ্ছিল। বলটা আরও পরে মিট করা উচিত ছিল।”

কোহলিদের পেছনে লেলিয়ে দেওয়ার জন্য মার্ক-মাইকেল ক্লার্করা শীতে সেই পেসের শরণাপন্ন হচ্ছেন। কিন্তু মিচেল জনসনের সঙ্গী কে হবে, ভেবে ঠিক করতে পারেননি। রায়ান হ্যারিস আহত। মার্কের আশা, মেলবোর্নিয়ান জেমস প্যাটিনসনকে যদি টিমে ফেরানো যায়! “আগের বছর দেখেছিলাম ভারতীয়রা ওর গতিটা একেবারেই সামলাতে পারেনি। চোট সারিয়ে দেখছি যদি প্যাটিনসনকে ফেরাতে পারি,” এবিপি-কে বললেন মার্ক।

সচিন তেন্ডুলকরের শুনলে ভাল লাগত বিশ্ব ক্রিকেটে তাঁর এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এখনও যে তাঁর প্রশংসায় কেমন আপ্লুত। মার্ক মনে করেন, লারা এবং পন্টিং যতই ভাল হন, কেউ সচিন নন। দ্রাবিড়? “না, না। নীচের লেভেল। সচিন অস্ট্রেলিয়ায় এসে সেরা ফর্মের অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাটাক করে গ্যাছে। এটা কাউকে আমি করতে দেখিনি।”

তাঁর যমজ ভাই প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে উঠল। দু’জনে থাকেন সিডনির দু’প্রান্তে। অনুষ্ঠান বা বড়দিনটিন ছাড়া দেখাই প্রায় হয় না। কিন্তু আজও যমজ ভাইয়ের দাঁত ব্যথা হলে তাঁরও নাকি দাঁত ব্যথা হয়। এঁর জ্বর হলে ওঁরও কয়েক দিন বাদে জ্বর।

মার্ক সাফ বলে দিলেন, স্টিভের সেই বিখ্যাত কয়েনেজ ‘বিপক্ষকে মেন্টাল ডিসইন্টেগ্রেশন’ এমন কোনও শব্দ জীবনে তিনি ব্যাগি গ্রিন ড্রেসিংরুমে শোনেননি। “ওগুলো স্টিভের মার্কেটিং লাইন। আপনাদের মিডিয়ার জন্য।” স্টিভের পক্ষে আবার এটাও বলেন, ইডেনের সেই বিশ্ববন্দিত টেস্টে ভারতকে ফলো-অন করানোর সিদ্ধান্ত স্টিভ সবার সঙ্গে কথা বলেই নিয়েছিলেন। সিনিয়ররা বলেছিল ফলো-অন করাও। এমনকী টিমের বোলাররাও। কিন্তু পরে পুরো দোষটা স্টিভের ঘাড়ে চলে যায়।

ওই সিরিজে বারবার স্টিভকে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল ভারত অধিনায়কের জন্য। যদি স্টিভের বদলে শেন ওয়ার্ন অজি ক্যাপ্টেন হতেন, তা হলে কী হত? “ওহ, খুব সহজ। প্রবলেমটা তৈরিই হত না। কারণ ওয়ার্ন যা লেট লতিফ, ও নিজেও লেট করত।”

আইসিসির চাকার ধরায় পূর্ণ সমর্থন আছে মার্কের। তাঁর মনে হচ্ছে, নিজের আমলে আইসিসি এত কড়া হলে আরও হাজারখানেক আন্তর্জাতিক রান বেড়ে থাকত। তা বলে মুরলীর সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড আজ কেড়ে নেওয়া হোক, এতটা বলছেন না। শুধু মনে হচ্ছে, তাঁর প্রিয় বন্ধু ওয়ার্নি ওটার সবচেয়ে উপযুক্ত দাবিদার।

প্রশ্ন হল, চির-নিশাচর ওয়ার্নের খেলোয়াড়জীবনে নিশ্চয়ই অস্ট্রেলিয়ান টিমে কারফিউ ছিল না?

মার্ক বললেন, “কে বলল ছিল না? ওয়ার্নের ওপর কাজ করত না। কারণ ও যা করত, রুমে। সবই রুম সার্ভিস নিচ্ছে তো, আর হোটেলের বাইরে যাওয়ার দরকার কী!”

হেসে গড়িয়ে পড়ল মেলবোর্নের প্রেক্ষাগৃহ। মার্ক অবশ্য তখনই সিডনি রওনা হওয়ার আগে মনে করিয়ে দিলেন, “দেড় মাসের মধ্যে টেস্ট সিরিজ শুরু হল বলে। আপনাদের মুখের হাসি কিন্তু থাকবে না বেশি দিন!”

কিছুই বোধহয় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে বদলায়নি! সরি, বদলেছে। আগেকার দিনে সিলেক্টররা অন্তত সিরিজের আগে চিন মিউজিক শোনাতেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE