Advertisement
০৩ মে ২০২৪

হারিয়ে গিয়ে ফিরে আসার রূপকথার নাম পায়েত

বিশ্ব ফুটবল এখন মজে ২৯ বছরের এক অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডারে। গত শুক্রবার মধ্য রাতে যখন তাঁর পায়ের গোলার মতো শট ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে প্রতিপক্ষের গোলে আছড়ে পড়েছিল তখন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্যালারি। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে সময় নিয়েছিলেন ফরাসীরা।

আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে গোলের পর পায়েত। ছবি: এএফপি।

আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে গোলের পর পায়েত। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ২০:৪৯
Share: Save:

বিশ্ব ফুটবল এখন মজে ২৯ বছরের এক অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডারে। গত শুক্রবার মধ্য রাতে যখন তাঁর পায়ের গোলার মতো শট ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে প্রতিপক্ষের গোলে আছড়ে পড়েছিল তখন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্যালারি। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে সময় নিয়েছিলেন ফরাসীরা। অন্যদের তো ঘোরই কাটছিল না। গোল হজম করে হতভম্ব গোলকিপার কিছুক্ষণের জন্য স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছিলেন নিজের গোলের নীচেই। এভাবেও গোল হতে পারে। এভাবেও বাঁক খায় বল?

সেই শুরু। বুধবারের রাত আবারও চেনাল তাঁকে। তিনি দিমিত্রি পায়েত। যাঁকে ঘিরে এত হইহই সেই পায়েত কোথায় ছিলেন এতদিন? ২০০৭-এ ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-২১ দল দিয়ে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি পরা। এর পর ২০১০ সালের ইউরোর কোয়ালিফাইংয়ে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামা। একটি ম্যাচে শেষ ৫ মিনিট, আর একটি ম্যাচে আধ ঘণ্টা খেলার সুযোগ হয়েছিল। তখন এই পায়েতকে খুঁজে পায়নি কেউ। জীবনটাই বদলে দিল ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড। এক কথায় বলা হচ্ছে, ‘ওল্ড ওয়াইন ইন আ নিউ বটল।’

ভারত মহাসাগরের একটা ছোট দ্বীপ ফ্রান্স ফুটবলকে এনে দিয়েছে এই বিস্ময় প্রতিভা। রিইউনিয়ন আইল্যান্ডের সেন্ট-পিয়েরে জন্ম পায়েতের। রিইউনিয়ন প্রিমিয়ার লিগ থেকে ২০১৬ ইউরোর রাস্তাটা দিমিত্রি পায়েতের জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। বার বার ধারাবাহিকতার অভাবে বাদ পড়া, সমালোচনার ঝড়, হতাশা সব গ্রাস করেছিল এক সময়। কিন্তু এভাবে দেশের মাটিতে দেশের জার্সিতে ঘুরে দাড়ানোটা সত্যিই রূপকথার মতো। যেটা প্রথম ম্যাচে লেখা হল ৮৯ মিনিটে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৬ মিনিটে। এই আলবেনিয়ার বিরুদ্ধেই এক বছর আগে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে হাফ টাইমে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফ্রান্স হেরেছিল সেই ম্যাচ। সেই আলবেনিয়ার কফিনেই বুধবার রাতে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিলেন পায়েত। শুরুটা করেছিলেন গ্রিজম্যান। শেষ করলেন তিনি।

২৯ বছর বয়সেই খেলা হয়ে গিয়েছে ন’টি ক্লাবে। কিন্তু দেশের জার্সি জুটেছে মাত্র ২১ বার। ১৬ বছর বয়সে তিন বছর আগে লি হাভরে থেকে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া মানতে পারেননি দিমিত্রি। মনের মধ্যে সব সময়ই খচখচ করত এই অপমান। সেই অপমানের জবাবটা হয়ত এতদিনে দিতে পারলেন। পায়েতের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু ২০১৪-১৫ মরসুম থেকে। তার আগে তাঁর নামের পাশে লেগে গিয়েছে অনেক কালি। বদমেজাজি, ইনডিসিপ্লিনড, সতীর্থদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পরা। সেই সময়ই তাঁকে বাগে আনেন মার্সেল ক্লাবের কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। পায়েত বলেছেন, ‘‘এই কোচ আমাকে অভিজ্ঞ করেছে। আমাকে বড় হতে সাহায্য করেছে। আমার ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে এনেছে। আমি এখনও ওঁর সঙ্গে কথা বলি খেলার আগে।’’ সেই বছর লিগ ওয়ানে গোল অ্যাসিস্ট করে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছিলেন পায়েত। বিয়েসলাই আবিষ্কার করেছিলেন পায়েত একজন প্লে-মেকার। আন্দ্রে ইনিয়েস্তার সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন তিনি। এর পর ওয়েস্ট হ্যাম পুরো পুরি বদলে দিল পায়েতকে। অনেকেই মনে করেন বিয়েলসার সঙ্গে যদি আগে দেখা হত তাহলে পায়েত আজ আকাশ ছু’তে পারত। কিন্তু তাতে কী? এই ইউরোয় সব থেকে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে তো পায়েত আর তাঁর গোল। কে বলতে পারে ইউরো শেষ হতেই রিয়েল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার সিটির মতো দলগুলো ঝাঁপাবে না তাঁর জন্য। ইতিমধ্যেই তো শুরু হয়ে গিয়েছে কানাঘুঁষো। এক যুগ আগে শুরু হওয়া এক ফুটবলারের জীবনের একটা হতাশার শেষ হল এই ইউরোয়। হয়তো এর পর শুরু হবে নতুন একটা জীবন।

আরও পড়ুন:
ইউরোয় সবুজ মাঠে দিমিত্রি পায়েতই পিকাসো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dimitri Payet France Midfielder Euro Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE