Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ছোটদের জন্য বই লিখছেন অস্ট্রেলীয় ওপেনার

গম্ভীর আছে রাগ নেই, বিশ্বাস হচ্ছে না ওয়ার্নারের

কেকেআরের গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের গৌতম গম্ভীরকে কিছুতেই মেলাতে পারেন না ডেভিড ওয়ার্নার। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেন না, আইপিএলের প্রথম কয়েকটা বছর যে ক্রিকেটারের সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে এত সময় কাটিয়েছেন, সেই ক্রিকেটারই কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই অধিনায়ক।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

কেকেআরের গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের গৌতম গম্ভীরকে কিছুতেই মেলাতে পারেন না ডেভিড ওয়ার্নার। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেন না, আইপিএলের প্রথম কয়েকটা বছর যে ক্রিকেটারের সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে এত সময় কাটিয়েছেন, সেই ক্রিকেটারই কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই অধিনায়ক। দিল্লির সেই সতীর্থ অল্পেই মেজাজ হারাতেন। কেকেআরের এই অধিনায়ককে দেখে তাই অবাক হয়ে যান, ইনি এত শান্ত, এত রিল্যাক্সড থাকেন কী ভাবে?

‘‘দিল্লিতে আমি গৌতমের সঙ্গে খেলেছি। তখন ও একটু-আধটু আগ্রাসী ছিল, জানেন তো। কিন্তু এখন ওকে দেখলে মনে হয় ভেতর থেকে অনেকটা শান্ত। অনেক বেশি রিল্যাক্সড। সব কিছু নিয়ে একটা প্রশান্তি, একটা গভীর আনন্দে রয়েছে। মানুষ হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে এই পাল্টে যাওয়া গম্ভীর সত্যিই অভাবনীয়!’’ রবিবার দুপুরে টিম হোটেলে বসে বলছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার।

ষাট বলে নব্বই রান করে ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে যে হারিয়ে উঠেছেন গৌতম গম্ভীর, তার পর প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। সোমবার ফের নতুন যুদ্ধ, সামনে নতুন প্রতিপক্ষ মুম্বই। কিন্তু এখনও গম্ভীরকে আটকাতে না পারার হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেননি ওয়ার্নার। বলছিলেন, ‘‘গতকাল দুর্দান্ত খেলে দিল গম্ভীর। ওকে নিয়ে অনেক কিছু ঠিক করে রেখেছিলাম। নানা রকম প্ল্যান করেছিলাম। আমার দুর্ভাগ্য, বোলাররা সেগুলোর একটাও ওর বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারল না।’’

কী রকম প্ল্যান? ওয়ার্নারের ব্যাখ্যা, ‘‘কাল লক্ষ করছিলাম যে স্কোয়্যার অব দ্য উইকেট বেশি স্কোর করছে গম্ভীর। সেখানে ফিল্ডার রাখলাম। বোলারকে বললাম, ওর জন্য ও দিকে ফাঁদ পাতো। কিন্তু কোথায় কী!’’ আফসোস করার পাশাপাশি অবশ্য প্রাক্তন সতীর্থের প্রশংসা করতেও ভোলেন না ওয়ার্নার। বলে দেন, ‘‘ওই ইনিংসটার জন্য গৌতমকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এ বার দুর্দান্ত শুরু করেছে ও। আর শুধু এই আইপিএলে নয়, গত দু’বছর ধরেই দারুণ খেলছে গম্ভীর। যতটা ভাল খেলছে, তাতে আরও বেশি রান ওর প্রাপ্য।’’

বিপক্ষ অধিনায়কের এমন প্রাণখোলা প্রশংসা বিজিত অধিনায়কের মুখে শুনে অবাক লাগবে। লাগতে বাধ্য। বিশেষ করে সেই বিজিতের শিরায়-শিরায় রক্তের সঙ্গে যদি মিশে থাকে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট ঔদ্ধত্য। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ডেভিড ওয়ার্নার নিজেও এখন অনেকটা পাল্টে গিয়েছেন। বছরতিনেক আগের ডেভিড ওয়ার্নারকে দিয়ে তাই এই ডেভিড ওয়ার্নারের বিচার করতে বসলে ভুল হবে। সেই ওয়ার্নার চূড়ান্ত মদ্যপ অবস্থায় ইংল্যান্ডের জো রুটকে ঘুষি মেরে বসেছিলেন। এই ওয়ার্নার মদ্যপান করেননি এক বছর হয়ে গেল! সেই ওয়ার্নার বিপক্ষকে স্লেজ করার আগে দু’বার ভাবতেন না। এই ওয়ার্নারের ভাবনায় থাকে ছোটদের ক্রিকেট-শিক্ষা! আর ব্যাপারটাকে শুধু চিন্তার গণ্ডিতে আটকে না রেখে সেটা নিয়ে রীতিমতো কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

বাচ্চাদের জন্য বই লিখছেন ডেভিড ওয়ার্নার!

নিজের লেখক সত্তা নিয়ে ওয়ার্নার ততটাই প্যাশনেট, যতটা নিজের ক্রিকেট নিয়ে। ব্যাট থেকে পেনের দূরত্বটা কী ভাবে অতিক্রম করেছেন? কী ভাবে শুরু তাঁর ‘দ্য কাবুম কিড’ বইয়ের সিরিজ? যেখানে তাঁর ছোটবেলার পোষ্য ফক্স টেরিয়ার ম্যাক্স থেকে স্কুলের বন্ধুবান্ধব, সবার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে? ‘‘আসলে আমি যে ভাবে বড় হয়েছি, যে সব বাধা টপকেছি, সেগুলো সবাইকে বলতে চেয়েছিলাম। জানেন, ছোটবেলায় আমার বুদ্ধিসুদ্ধি একটু কম ছিল। খুব একটা স্মার্ট ছিলাম না। স্কুলে টিচাররা কী পড়াচ্ছেন, বুঝতে রীতিমতো কষ্ট হত। বাকিরা সেটা নিয়ে মজা করত। ক্লাসের ক্লাউন ছিলাম,’’ বলতে থাকেন ওয়ার্নার। বলেন, অঙ্ক পিরিয়ডে যে ক্লাসমেটরা তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করত, ফিজিক্যাল এডুকেশন ক্লাসে তারাই তাঁর কাছ থেকে শিখত, ঠিকঠাক করে বলটা মারে কী ভাবে।

এই হীনমন্যতা থেকে মুক্তির রাস্তা ওয়ার্নার খুঁজে পেয়েছেন বাইশ গজে। তাঁর মতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে বড় হচ্ছে যারা, তাদের তাই বলতে চান ভেঙে না পড়তে। বলতে চান, লেখাপড়ায় ভাল হওয়াটাই সব নয়। আসল হল লাইফ স্কিল। আসল জীবনে কী ভাবে কী করতে হয়, সেটা ভাল ভাবে আয়ত্ত করা। ‘‘আমি যখন প্রথম বিদেশ সফরে যাই, প্লেন ধরতে গেলে কী কী করতে হয়, জানতাম না। এগুলো কি স্কুলে শেখানো হয়? অথচ এগুলোও তো জানা দরকার। বাচ্চাদের আমি সেটাই বলতে চাই। আর যে খুদেরা ক্রিকেট খেলতে চায়, তাদের বলতে চাই খেলাটাকে উপভোগ করতে।’’

শুনতে শুনতে সত্যিই বছরতিনেক আগের ওয়ার্নারের সঙ্গে মেলানো যাবে না। সানরাইজার্স অধিনায়ক জানান, তাঁর এই নতুন জীবনের নেপথ্যে রয়েছেন স্ত্রী ক্যান্ডিস। দুই মেয়ের জন্মও তাঁর জীবনে নতুন এক প্রশান্তি এনেছে। ক্রিকেট মাঠে আগ্রাসনটা হারাননি। বিকৃত চোখমুখ নিয়ে ধেয়ে আসা পেসার এখনও তাঁকে ‘‘সুইচ অন’’ করে দেয়। বিপক্ষের সঙ্গে ‘মধুর’ বাক্য বিনিময়ের শিল্প এখনও ভুলে যাননি। কিন্তু একই সঙ্গে বহুমাত্রিক এই ওয়ার্নারের ভাবনায় থাকে দুই মেয়ের কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠার চিন্তা। অভিভাবকের মতো নিজের টিমের লালনপালন। হেরে উঠেও বিপক্ষ নায়ককে কুর্নিশ করার উদারতা!

আরও পড়ুন:
আইপিএলের সময়সূচি
আইপিএলের পয়েন্ট টেবল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

goutam gambhir IPL 2016 warner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE