নজরে: বাঁ-দিক থেকে স্বস্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়, প্রণতি নায়েক মিনারা বেগম, জয়প্রকাশ চক্রবর্তী ও প্রতিষ্ঠা সামন্ত ও প্রণতি দাস। নিজস্ব চিত্র
দীপা কর্মকার বসেছিলেন চেয়ারে। টেবলে পা তুলে। পায়ে যে প্লাস্টার।
রিও অলিম্পিক্সে ইতিহাস তৈরি করা দীপার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। নিজে এখন প্রতিযোগিতার বাইরে। কিন্তু অন্যরা নির্বাচনী ট্রায়ালে কেমন করেন তা দেখতে হাজির ছিলেন। তাঁর সামনেই এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ভারতীয় দল নির্বাচন হল মঙ্গলবার। যেখানে সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলার রমরমা। সিনিয়র টিমে পাঁচ মেয়ের তিন জনই বঙ্গতনয়া।
হাওড়ার প্রতিষ্ঠা সামন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন দেখার পর তাঁর দিকে এগিয়ে এসেছিলেন দীপা। তারপর নিজের একটা দামি কস্টিউম উপহার দিলেন শিবপুর হিন্দু হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী প্রতিষ্ঠাকে।
শুধু প্রতিষ্ঠাই নয়, আগরতলার বঙ্গ তনয়া দীপার সাফল্যের জোয়ারে ভেসে হঠাৎই ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সে আলো ফেলছেন বাংলার মেয়েরা। ১৬-২১ মে ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠেয় এশীয় চ্যাম্পিনশিপের সিনিয়র, জুনিয়র দলে যে চার জন রয়েছেন তাদের কারও বাড়ি মেদিনীপুরে, কারও সোনারপুরে, কারও জয়নগর। গ্রাম ও আধা শহরতলির নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সবাই।
আরও পড়ুন: শুরুতেই শেষ হয়ে গেল কোচ মৃদুলের অভিযান
প্রতিষ্ঠা সুযোগ পেয়েছেন জুনিয়র দলে। আর প্রণতি নায়েক, প্রণতি দাস বা স্বস্তিকা গঙ্গোপাধ্যায় নামবেন সিনিয়রে। শুধু তাই নয়, টিমের সঙ্গে কোচ হিসাবে যাঁরা যাচ্ছেন সেই জয়প্রকাশ চক্রবর্তী আর মিনারা বেগমও তো বাংলার। দিল্লির সাইতে তিরিশজন প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে জাতীয় দলে ঢোকার পর মেদিনীপুরের প্রণতি নায়েকের গলায় ‘প্রোদুনোভা’। ‘‘চোট সারিয়ে এখানে এক মাস ট্রেনিং করার সুযোগ পেয়েছি। নতুন কোনও ভল্টের জন্য নিজেকে তৈরি করা সম্ভব ছিল না। সময় থাকলে ব্যাঙ্ককেই ‘প্রোদুনোভা ভল্ট’-টা করতাম। দীপাদি যদি পারে, আমিও পারব না কেন?’’ দিল্লির সাই থেকে ফোনে বলছিলেন উচ্ছ্বসিত পিংলার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে।
প্রণতি তবুও প্রায় দশ বছর সল্টলেক সাইতে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছেন। স্বস্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়ের তা-ও জোটেনি। পাড়ার ক্লাবেই বেড়ে ওঠা। নিজেদের খরচে এসেছিলেন দিল্লিতে। জাতীয় শিবিরে সুযোগের আশায়। সঙ্গী ছিলেন মা শুভ্রা গঙ্গোপাধ্যায়। স্বপ্ন পুরণ হওয়ার পর বুধবার বিকেলে স্বস্তিকার জীবনে হঠাৎ-ই রোদ্দুর। প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামার ছাড়পত্র পেয়ে বলছিলেন, ‘‘দীপাদির রিও-র ভল্টটা দেখার পর মনে হয়েছিল আমিও চেষ্টা করলে পারব।’’
শ্যামসুন্দরতলার প্রণতি দাস এ বারের দলের একমাত্র সদস্য যিনি গতবার দীপার সঙ্গে জাপানের হিরোসিমাতেও নেমেছিলেন এই টুনার্মেন্টে। ফোনে বলছিলেন, ‘‘এ বার পদক পাব আশা করছি। দীপাদি ওই টুনার্মেন্টের পর অলিম্পিক্সে নেমে দেশের জিমন্যাস্টিক্সে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন।’’ দীপার আলোয় আলোকিত আজ বঙ্গ জিমন্যাস্টিক্সই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy