Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সুইচ অফ করতে এখন শখের ছবি আঁকা ধরেছি

গত বারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর অধিনায়ক আবার কলম ধরলেন আনন্দবাজারের জন্য। নাইট সংসারের হালহকিকত জানাচ্ছেন গৌতম গম্ভীরপোশাকআশাকের ব্যাপারে আমি বরাবরই রক্ষণশীল। বেশির ভাগ দিন আমাকে দেখবেন সদা নির্ভরযোগ্য জিনসের সঙ্গে কালো, ধূসর, খয়েরি বা সাদা টি-শার্টে। পারফিউম নিয়েও খুব একটা পরীক্ষানিরীক্ষা করি না। পছন্দের কিছু হালকা সুগন্ধী আছে, ব্যস। জুতো— সেখানেও খয়েরি বা কালো। জিম সেশনে চড়া রঙের ট্রেনিং জুতো মাঝেমধ্যে পরি, কিন্তু সেটাও আমার পক্ষে খুব বাড়াবাড়ি।

নাইটদের নাচার সময়! হোটেলে হগ। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

নাইটদের নাচার সময়! হোটেলে হগ। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

পোশাকআশাকের ব্যাপারে আমি বরাবরই রক্ষণশীল। বেশির ভাগ দিন আমাকে দেখবেন সদা নির্ভরযোগ্য জিনসের সঙ্গে কালো, ধূসর, খয়েরি বা সাদা টি-শার্টে। পারফিউম নিয়েও খুব একটা পরীক্ষানিরীক্ষা করি না। পছন্দের কিছু হালকা সুগন্ধী আছে, ব্যস। জুতো— সেখানেও খয়েরি বা কালো। জিম সেশনে চড়া রঙের ট্রেনিং জুতো মাঝেমধ্যে পরি, কিন্তু সেটাও আমার পক্ষে খুব বাড়াবাড়ি।

ক্রিকেট মাঠেও পরিশ্রমী সাদা, নীল বা ধূসর ছাড়া অন্য কিছু পরতে একটু লজ্জা করে। কিন্তু গত দুটো দিন ছিল আমার গোলাপি জুতো পরা দুই সতীর্থের। শুরু হয়েছিল সুনীল নারিন দিয়ে। শনিবার আমাদের জয়ে কিঙ্গস ইলেভেনের চারটে উইকেট নিয়ে। ওর ক্ষেত্রে গোলাপি জুতো পরাটা কিন্তু স্পনসরের চুক্তির জন্য নয়। কারণ ওর প্রিয় রংটাই গোলাপি। ব্যাটিংয়ের সময় আমাদের সব নায়কই দুর্ধর্ষ ওই গোলাপি জুতো পরেছিল। আন্দ্রে রাসেল, ইউসুফ পাঠান আর শেষ ল্যাপের হিরো পীযূষ চাওলা, সবাই ‘পিঙ্কি’ পছন্দ করে।

রবিবারও লাইমলাইটে ছিল ওই গোলাপি জুতো। প্রথমে ও রকম জুতো পরে নামল ব্যাটিং সুপারম্যান এবি ডে’ভিলিয়ার্স। নেমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটা সেঞ্চুরি করল। দ্বিতীয় ম্যাচে যে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে বেশ ভাল ব্যাট করছিল, ওর জুতোর রংটা খেয়াল করেছেন? হ্যাঁ, ওই ঝকঝকে গোলাপি। জানি না কেন, মনে হয় কেকেআরের বেগুনি বা সিএসকের হলুদের চেয়ে আরসিবির লাল জার্সির সঙ্গে ‘পিঙ্কি’ বেশি ভাল মানায়।

কেকেআরের চার নায়ক সুনীল, রাসেল, পীযূষ আর পাঠানের ফ্যাশন কোশেন্ট বেশ ভাল। কিন্তু ওরা কেউ এই মরসুমের সেরা ব্যাটসম্যান বা বোলারদের তালিকায় নেই। তাতে অবশ্য আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। বরং এটা আমার বিশ্বাসকেই আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে যে, ক্রিকেট হল টিম গেম। এখানে গ্যালারিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া কিছু জিনিয়াস নয়, চাই এগারো জন পরিশ্রমী মানুষ। যারা একে অন্যের জন্য খেলে, যারা টিমের স্বার্থে খেলে।

‘যদি জার্সির সামনের নামটার জন্য খেলো, তা হলে জার্সির পেছনের নামটা লোকে মনে রাখবে’। কোনও একটা ফুটবল টিমকে দেখে কথাটা শিখেছিলাম। আর এটাই কিন্তু আমার খেলার নির্যাস। বিশ্বাস করুন, নাইট সংসারে সবাই এই বিশ্বাসটা নিয়ে খেলতে নামে। হয়তো এই কারণেই গত তিন বছরে আমরা দু’বার ট্রফি জিতেছি। আর ঈশ্বরের কৃপায় এ বারও আপাতত প্রথম দুইয়ে আছি।

রবিবার হোটেলবন্দি হয়ে আলসে একটা দিন কাটালাম সবাই। কিন্তু ভাববেন না যে, আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ছি। এই মুহূর্তে আমি ক্রিকেট নিয়ে ভাবছি না। যদিও যে কোনও ধরনের খেলা দেখাটা আমার কাছে নেশার মতো। প্রাণপণে চাইছি ক্রিকেট থেকে সুইচ অফ করতে। অনেক কিছু চেষ্টা করেছি, যার মধ্যে একটা হল শখের পেন্টিং। হ্যাঁ, ঠিক পড়ছেন। আমাদের টিম হোটেলে যে চিত্রশিল্পীরা কয়েক দিন ধরে ওয়ার্কশপ করছেন, তাঁদেরই একজন আমাকে রাজি করিয়েছিলেন। প্রথম যে ছবিটা আঁকলাম, সেটাকে বিপর্যয় ছাড়া কিছু বলা যায় না। চেষ্টা করেছিলাম আমার স্ত্রী আর মেয়েকে আঁকতে। না, ছবিটা টুইট তো করবই না, স্ত্রীকে উপহারও দেব না। ও সব করার কথা ভাবলেই ভয় করছে!

আগেই বললাম না, রং ব্যাপারটা আমার জন্য নয়। গোলাপি জুতো বা ক্যানভাসের রং— কোনওটাই আমার জন্য নয়। তবে গোলাপি জুতোগুলোর সঙ্গে কোন রঙের জার্সি সবচেয়ে ভাল মানাবে, সেটা নিয়ে এখনও ভাবছি। আমার মনে হয়, কালোটাই সবচেয়ে ভাল মানাবে। কী বলেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE