পুলিশের সামনে সমর্থকদের প্রতিবাদ। মোহনবাগান মাঠে সোমবার। ছবি-উৎপল সরকার।
মোহনবাগান ১ (প্রবীর) : টালিগঞ্জ ১ (অ্যালফ্রেড)
কলকাতা লিগ: ম্যাচ বাতিল
দৃশ্য এক: ম্যাচের শুরুতে ড্যানিয়েল বিদেমির দূর পাল্লার শট সরাসরি টালিগঞ্জ গোলে। তার আগেই অবশ্য অফ সাইডের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন লাইন্সম্যান।
দৃশ্য দুই: ২১ মিনিটে প্রবীর দাসের দুরন্ত গোলে মোহনবাগানের এগিয়ে যাওয়া।
দৃশ্য তিন: ৬০ মিনিটে আবারও অফ সাইডের জন্য গোল বাতিল মোহনবাগানের। এ বার গোলটি করেন প্রবীর দাস।
দৃশ্য চার: ৮৫ মিনিটে অ্যালফ্রেডের গোলে সমতায় ফেরে টালিগঞ্জ। তার আগে থেকেই গোল বাতিলের জন্য তাতছিল গ্যালারি।
দৃশ্য পাঁচ: ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার ঠিক দু’মিনিট আগে আবার অফ সাই়ডের জন্য গোল বাতিল মোহনবাগানের। এ বার আজহারউদ্দিন মল্লিক।
তখন উত্তপ্ত গ্যালারি। মাঠে আটকে মোহনবাগান ফুটবলাররা।
তিনটে অফ সাইড গোল বাতিলের হ্যাটট্রিক। আর এখান থেকেই বদলে গেল কলকাতা লিগের একটি ছাপোষা ম্যাচের রঙ। দেখা গেল ঢাল-তরোয়াল সঙ্গে করেও কলকাতা পুলিশের নিধিরাম সর্দারদের। দেড় ঘণ্টা ধরে তাঁরা শান্ত করতে ব্যর্থ হল ১৫ হাজারের গ্যালারিকে। যার ফল, মাত্র দু’মিনিট বাকি থাকলেও সোমবারের সন্ধ্যেয় সেই ম্যাচ শেষ করা গেল না মোহনবাগান মাঠে।১-১ ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে যখন প্রমাদ গুনছে মোহনবাগান গ্যালারি তখনই গোলের সুযোগ চলে এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। গোল করেও ফেলেছিলেন আজহারউদ্দিন। কিন্তু সেই গোল বাতিল করেন লাইন্সম্যান। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মোহনবাগান মাঠ। যেখানে টালিগঞ্জের গোলকিপার দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই গোলের পিছনের গ্যালারি থেকে উড়ে আসতে থাকে জলের বোতল। এর পর পুরো গ্যালারি থেকেই শুরু হয় জলের বোতল বৃষ্টি। বোতল এসে লাগে টালিগঞ্জ অগ্রগামী কোচ রঞ্জন চোধুরীর গায়েও।
মাঠে তখন হাতে গোনা গুটিকয় পুলিশ। মাঠের মাঝেই দু’দলের প্লেয়ার ও রেফারিদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ। এর মধ্যেই হঠাৎ কোনও অজ্ঞাত কারণে খুলে যায় একটি গ্যালারির মাঠ মুখি গেট। সেখান দিয়েই পিল পিল করে মাঠে ঢুকে পড়তে শুরু করে উত্তেজিত মোহনবাগান সমর্থকরা। যাদের আটকানোর মতো সামর্থ সেই সময় পুলিশের ছিল না। ডেকে পাঠানো হয় পুলিশ ফোর্স। পুলিশ ফোর্স আসতে বেশি সময় না নিলেও ততক্ষণে পুরো গ্যালারি রীতিমতো মারমুখি। অনেক বাগান কর্তাকেও দেখা যায় গ্যালারি তাতাতে। পুলিশ ফোর্স এসেও সেই গ্যালারিকে শান্ত করতে পারেনি। মাঠে নামেন স্বয়ং মোহনবাগান সভাপতি টুটু বসু। তার মধ্যেই পুলিশকে ঘিরে শুরু হয় সমর্থকদের প্রতিবাদ। ম্যাচ শুরু করানোর চেষ্টায় নামে পুলিশ। কিন্তু সেগুড়েও বালি। সমর্থকদের বাগে আনতে অক্ষম পুলিশকে দেখা যায় দর্শকের ভূমিকায়। দেড় ঘন্টা পর মোহনবাগান মাঠে এসে পৌঁছয় ঘোর সওয়ার পুলিশ। তখনও মাঠে আটকে রেফারিরা। ততক্ষণে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুই দলের ফুটবলারদের। শেষ পর্যন্ত গ্যালারি ফাঁকা যতক্ষণে হল ততক্ষণে পেড়িয়ে গিয়েছে অনেকটা সময়। সমর্থকরাই ক্লান্ত হয়ে ছেড়েছেন মাঠ। ম্যাচ বাতিল ঘোষণা করে দিয়েছে রেফারি। কিন্তু রেফারিকে বের করতে ঢাল নিয়ে মাঠে নামতে হয় পুলিশকে। ফাঁকা করে দেওয়া হয় মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকদের। শেষ পর্যন্ত র্যাফ নামিয়ে রেফারিদের মাঠ থেকে বের করে আনা হয়।
সমর্থকদের ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচতে র্যাফের নিরাপত্তায় রেফারিরা।
এর মধ্যেই ম্যাচের রিপ্লের দাবি তুলে দিল মোহনবাগান। ম্যাচ আবার না খেলালে অন্য কোনও ম্যাচ খেলবে কী না সেটা নিয়েও ভাবনা –চিন্তা করবে ক্লাব। মোহনবাগান সভাপতি টুটু বসু ও সচিব অঞ্জন মিত্র এ দিন ক্লাবে বসে জানিয়ে দেন, ‘‘এই ম্যাচের রিপ্লে চাই। যে ভাবে পর পর ম্যাচ হওয়ার কথা সে ভাবেই রিপ্লে খেলাতে হবে। এই ম্যাচ হলে তার পর পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবব। যদিও ম্যাচ পণ্ডের জন্য কারও দিকে আঙুল তোলেননি মোহনবাগান কর্তারা।’’
এই ম্যাচের রিপ্লে আগে খেলাতে হলে ৭ সেপ্টেম্বরের ডার্বি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ওই দিন ডার্বি খেলতে নামার আগে আরও একটি ম্যাচ খেলতে হবে মোহনবাগানকে। এমন অবস্থায় মোহনবাগান টালিগঞ্জ ম্যাচের রি প্লে কবে খেলাবে সেটা নিয়ে সমস্যায় আইএফএ। যদি রিপ্লে না দেয় তা হলে লিগ বয়কট করতে পারে মোহনবাগান। আগে ডার্বি খেলবে না বলেও শেষ পর্যন্ত খেলতে রাজি হয়েছিল গঙ্গা পাড়ের ক্লাব। এ বার নতুন সমস্যায় আইএফএ। ৩০ অগস্টের মধ্যে লিগ শেষ করার কথা থাকলেও সেই পরিকল্পনা আগেই ভেস্তে গিয়েছে। অন্যদিকে, লিগ তালিকায় ইস্টবেঙ্গলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে মোহনবাগান। এই ম্যাচ জিতলে দু’পয়েন্ট পিছনে থাকত। এমন অবস্থায় ডার্বির আগে নিয়ম মেনে দুটো ম্যাচ খেলেই যে ডার্বি খেলতে চাইবে মোহনবাগান তা বলাই বাহুল্য। পরবর্তি সিদ্ধান্তের জন্য আইএফএ-র দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের।
আরও খবর
ডার্বিতে থাকছেন না ইস্টবেঙ্গল কোচ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy