Advertisement
E-Paper

হাবাসের কানে এখন যেন বাজছে ওই আসছে মেন্ডোজা

ওই আসছে হিউম! সপ্তাহখানেক আগে আনন্দবাজারে আটলেটিকো কলকাতার একটা ম্যাচ রিপোর্টের হেডিংয়ের ইংরেজি তর্জমা করে কোচ হাবাসকে দেখিয়েছিলেন দলে এক সদস্য। দেখে হাইভোল্টেজ হাসি মুখে মাথা নেড়েছিলেন হিউম-আরাতাদের কোচ। এক সপ্তাহেই পরিস্থিতি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরেছে। সেমিফাইনালে হোম ম্যাচের আগে আবহটাই এটিকে কোচের কানের পাশে যেন বলছে— ওই আসছে মেন্ডোজা!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২২
লক্ষ্যে স্থির। সোমবার হিউম। ছবি: উৎপল সরকার

লক্ষ্যে স্থির। সোমবার হিউম। ছবি: উৎপল সরকার

ওই আসছে হিউম!

সপ্তাহখানেক আগে আনন্দবাজারে আটলেটিকো কলকাতার একটা ম্যাচ রিপোর্টের হেডিংয়ের ইংরেজি তর্জমা করে কোচ হাবাসকে দেখিয়েছিলেন দলে এক সদস্য। দেখে হাইভোল্টেজ হাসি মুখে মাথা নেড়েছিলেন হিউম-আরাতাদের কোচ।

এক সপ্তাহেই পরিস্থিতি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরেছে। সেমিফাইনালে হোম ম্যাচের আগে আবহটাই এটিকে কোচের কানের পাশে যেন বলছে— ওই আসছে মেন্ডোজা!

হাবাস কি সে জন্যই তাঁর ফুটবলারদের এ দিন দেখলেই জনে জনে বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে তোমাদের সেরা নব্বই মিনিট দাও। পরের নব্বই মিনিট আমি দেব তোমাদের!’’

রাজারহাটে আটলেটিকো কলকাতার টিম হোটেলের এক কর্মী দুপুরে দল যখন সেন্ট্রাল পার্কে প্র্যাকটিসের জন্য বেরোচ্ছে, হাবাসের সামনে পড়ে যান। শুভেচ্ছা জানিয়ে বলতে গিয়েছিলেন, ‘‘চিন্তা করবেন না। কলকাতা এখানে চেন্নাইকে ঠিক চার গোল মারবে।’’ শুনে কলকাতা কোচ তাঁকে বলেন, ‘‘এটা আপনি, আমি বিশ্বাস করলে হবে না। মাঠে যে এগারো জন খেলবে তাদেরও বিশ্বাস করতে হবে।’’

প্রথম লেগে তিন গোলে দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার চার দিনের মধ্যে ঘরের মাঠে করতে হবে চার গোল। কাজটা অঙ্কের বিচারে অসম্ভব না হোক, কাজে করাটা অসম্ভব কঠিন। কিন্তু তার আগেই যেন সেই দলের কোচের মেজাজ তিরিক্ষি। সূত্রের খবর, কলকাতার স্প্যানিশ কোচের রাগের প্রথম কারণ এ দিন শহরে আসা চেন্নাই ফুটবলারদের সঙ্গে তাঁর দলের ফুটবলারদের কথা বলা, শুভেচ্ছা বিনিময়! কোচের মতে এতে জেতার একাগ্র মনোভাব কলকাতা ফুটবলারদের নড়ে গিয়েছিল। মাঠে গোটা তাই পরিচিত ছন্দে ছিল না দল। হাবাসের রাগের দ্বিতীয় কারণ, সে দিন গোলকিপার অমরিন্দর আর সাইড ব্যাক রিনো অ্যান্টোর স্কুল দলের ফুটবলারদের মতো ভুল।

কিন্তু সে সব উষ্মাও যেন ছাপিয়ে গেল এ দিন বিকেলের প্র্যাকটিস সেশনে। যখন নাতো এসে কোচকে বললেন, ‘‘পেশিতে লাগছে। মনে হয় বুধবার নামতে পারব না।’’ নাতোর এ কথা বলার সময় হাবাস আবার মাঠের ক্লাব হাউসের দিকে তাকিয়ে দেখেন বোরহা ড্রেস করেননি। আইস প্যাক লাগিয়ে চেয়ারে বসে সতীর্থদের প্র্যাকটিস দেখছেন। যদিও আগেই কোচ জেনে গিয়েছিলেন, ঘরের মাঠের সেমিফাইনালে বোরহা নেই। কিন্তু বিপক্ষ আক্রমণের বিষদাঁত যে সাঁড়াশি দিয়ে গত দু’মরসুম হাবাস উপরে নিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ, সেই সাঁড়াশির দুই দাঁড়াই যে আসল যুদ্ধের দিন ভেঙে চৌচির! যা মালুম করার পর আরও মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে কলকাতা কোচের। গত বছর তাঁর দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে অন্যতম ফ্যাক্টর ছিল মাঝমাঠে বোরহার বিষাক্ত ট্যাকল। এ বারও পরিসংখ্যান বলছে, স্প্যানিশ মিডিও ৬৬টা নিখুঁত ট্যাকল করেছেন। সেই বোরহা বুধবারের মরণবাঁচন লড়াইয়ে না থাকায় নাতোকে যে ভাবেই হোক ফিট করার জন্য টিমের ফিজিওদের নির্দেশ দিয়েছেন হাবাস। শেষ খবর, নাতোকে সুস্থ করে তুলতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা চালাচ্ছেন এটিকের সাপোর্ট স্টাফ।

এই অবস্থায় মরিয়া হাবাস অনুশীলনে ‘প্ল্যান বি’ ঝালিয়ে নিলেন। দুই সাইড ব্যাক পাল্টে গেল। লেফট ব্যাকে মোহনরাজ। আগের সেমিফাইনালে লেফট ব্যাকে খেলা অগাস্টিন ফার্নান্ডেজ রাইট ব্যাকে। ডিফেন্সিভ মিডিও হিসেবে গ্যাভিলানের সঙ্গে কখনও অলন্সো কখনও জুয়েল রাজাকে খেলিয়ে দেখে নেওয়া চলল। আর গোপন তাস হিসেবে শান দিলেন ভালদোকে। পস্টিগাকে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে মৃদু সম্ভাবনা উঁকি মারছে বটে। কিন্তু টিম সূত্রে খবর, সম্ভাবনা এক শতাংশেরও কম।

রাতে শহরে ঢোকা হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরারা জানেন, গত বার এ রকমই প্রথম পর্বে ০-৩ হেরে নিজেদের ঘরের মাঠে ৩-৩ করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় চেন্নাই। তাই কি চেন্নাই কোচ মাতেরাজ্জি কলকাতায় পা দেওয়ার আগেই শুরু করেছেন গেমসম্যানশিপ। ‘‘জানি হাজার হাজার সমর্থকে ঠাসা সল্টলেক স্টেডিয়ামে ওরা ধাক্কাধাক্কির ফুটবল খেলবে। কিন্তু আমরা তা সামলাতে তৈরি। আর আমাদের কাছে ছাড়া কলকাতা কিন্তু ০-৩ হারেনি কারও কাছে।’’

মাতেরাজ্জি যাই বলুন, ‘ধাক্কাধাক্কির ফুটবলে’ হাবাসের টিমের চেয়ে তাঁর দলের ‘সুনাম’-ই বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, টুর্নামেন্টে কলকাতার (১৯৪) চেয়ে ফাউল বেশি করেছে চেন্নাইয়ান (২০৮)।

বুধবার নব্বই মিনিটে কলকাতা কি চার গোল-সহযোগে এর পাল্টা দিতে পারবে? টিমের অন্যতম মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু বলছেন, ‘‘ঘরের মাঠে আমরা কিন্তু এ বার চার গোলে হারিয়েছি একটা নয়, দু’-দুটো টিমকে! ফুটবলারদের উপর আমার বিশ্বাস আছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy