Advertisement
E-Paper

ক্যাডবেরির শহরে তিক্ত এক দ্বৈরথ

এমনিতে বার্মিংহাম ক্যাডবেরির শহর বলে পরিচিত। এখানকার সিটি ট্যুরের মধ্যে ক্যাডবেরি ওয়ার্ল্ড ঘুরে আসাটাও আবশ্যিক। যেমন থাকে অ্যাস্টন ভিলা ক্লাব ভ্রমণ, রয়্যাল ব্যালে বা সায়েন্স মিউজিয়াম দেখে আসা।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০৫:০৯

বিরাট কোহালির সাংবাদিক সম্মেলনকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তা হলে এটা নাকি মোটেও অপ্রীতিকর কোনও ক্রিকেট দ্বৈরথ নয়। আরও একটা ম্যাচের মতো। দারুণ উন্নত একটি দলের সঙ্গে তাঁদের সেমিফাইনাল ম্যাচ। যা হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও মূর্খামি তাঁরা করবেন না।

মাশরাফি মর্তুজার সাংবাদিক সম্মেলনকে যদি বিশ্বাস করতে হয়, তা হলে এজবাস্টনে নাকি মোটেও তিক্ত, উত্তপ্ত সম্পর্ক হয়ে থাকা দু’দলের লড়াই নয়। কী আশ্চর্য, বিরাটের মতো তিনিও বলে গেলেন, দু’দেশের সমর্থকেরা কী করবে, সেটা তাঁদের হাতে নেই। ক্রিকেটারদের এ সব থেকে দূরে থাকাই ভাল এবং তাঁরা নাকি সেটাই করছেন।

দু’জনের কারও কথাই যদি বিশ্বাস করার মতো কোনও কারণ না ঘটে থাকে, তা হলে আসুন, সত্যিটা লিখে ফেলা যাক। অধুনা এশিয়ার সবচেয়ে তিক্ত ক্রিকেট দ্বৈরথের নতুন এপিসোড দেখা যাবে বৃহস্পতিবারের এজবাস্টনে। আরও জানিয়ে রাখা যাক, দুই অধিনায়কের শান্তির বার্তা শুধুই সাংবাদিক সম্মেলনের শোকেসে দেখা যাবে। আদতে যার কোনও ভিত্তি নেই।

এমনিতে বার্মিংহাম ক্যাডবেরির শহর বলে পরিচিত। এখানকার সিটি ট্যুরের মধ্যে ক্যাডবেরি ওয়ার্ল্ড ঘুরে আসাটাও আবশ্যিক। যেমন থাকে অ্যাস্টন ভিলা ক্লাব ভ্রমণ, রয়্যাল ব্যালে বা সায়েন্স মিউজিয়াম দেখে আসা। ট্রেনে চেপে শেক্সপিয়রের জন্মস্থান স্ট্যাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন পৌঁছে যাওয়া যায় ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ে। ইংলিশ সামারে রবিবার- রবিবার করে ভিনটেজ ট্রেনে চেপে শেক্সপিয়রের জন্মস্থানে যাওয়া যায়। ট্রেনের নাম শেক্সপিয়র এক্সপ্রেস। মনে হবে টাইমমেশিনে চেপে ষোড়শ শতাব্দীতে যেন ফিরে গিয়েছে পৃথিবী। ধোঁয়া উড়িয়ে যাওয়া ট্রেন। অমর সেই কমেডি, ট্র্যাজেডির যুগ। মায়াবী রোম্যান্টিসিজমে ভেসে যাও।

ক্রিকেট না থাকলে সিটি ট্যুরের মধ্যে এজবাস্টনও থাকে। স্টেডিয়াম ঘোরাতে ঘোরাতে গাইড বলতে থাকবেন, এটা হল বিশ্বের সব চেয়ে ‘ভোকাল’ মাঠগুলোর একটা। আলেক স্টুয়ার্ট এক বার ইডেনের সঙ্গে এ মাঠের তুলনা করেছিলেন। গাইড আরও বলবেন, এ মাঠেই ব্রায়ান লারার কাউন্টিতে ৫০১ নট আউটের সেই অমর ইনিংস ঘটেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিনো বেস্ট এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯৫ রানের বিস্ময়কর ইনিংস খেলেছিলেন। ট্যুরে ভারতীয়ের সংখ্যা বেশি থাকলে গাইড দ্রুত মনে করিয়ে দেবেন, এখানেই ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে গ্যাংনাম নেচেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। সেই গ্যাংনাম শো-র প্রধান আর্টিস্ট ছিলেন বিরাট কোহালি। যিনি এ বারের অধিনায়ক।

সমস্যা হচ্ছে, ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ ঘিরে মধ্যযুগীয় রোম্যান্টিকতায় ভোগার কোনও সম্ভাবনা আর বেঁচে নেই। ক্যাডবেরি ওয়ার্ল্ড তো দূর অস্ত্‌। তা সে যতই দুই ক্যাপ্টেন ক্যাডবেরির বিজ্ঞাপন করে যান মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে নতুন বাঁক এনে এই ম্যাচ এখন তিক্ততা আর তীব্র রেষারেষির এক লড়াই। কী মাঠে, কী মাঠের বাইরে। এজবাস্টনের ক্রিকেটীয় দ্বৈরথের আঁচ ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা বার্মিংহাম শহরেও।

বিরাট নিশ্চয়ই ভোলেননি, ২০১৫ সালের জুনে নিজেদের দেশে এক দিনের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হারিয়ে তাঁদের মুখের উপর এসে কী রকম উচ্ছল বিজয়োৎসব করেছিল মাশরাফির দল। ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনেকের কাছে সেই উৎসবকে ‘বন্য এবং অশালীন’ মনে হয়েছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পশ্চাদ্দেশ ঠেকিয়ে নতুন কায়দার সেলিব্রেশন ভঙ্গি।

তেমনই মাশরাফির ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এশিয়া কাপে ম্যাচ জিতিয়ে কোহালির পাল্টা হুঙ্কার। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের বিজয়োৎসব ভাল না লাগাদের দলে বিরাটও ছিলেন। সেই কারণে এশিয়া কাপ জিতে বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন। ধোনি এসে ঠেকান। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন, মাঠে নেমে একই রকম বন্য উৎসব করবেন। বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাঁদের বিরত করা হয়।

মওকা মওকা বিজ্ঞাপন দু’দেশের ক্রিকেটে রেষারেষির আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার পিছনে প্রধান কারণ। বাংলাদেশের অভিযোগ, সেই বিজ্ঞাপনে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্ত অপমান করেছিলেন তাঁদের। ম্যাচ হওয়ার আগেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাঁদের বলা হচ্ছিল, ভারতই কাপ নিতে এসেছে। ২০১৫-র জুনে নিজেদের দেশে যখন ভারতকে এক দিনের সিরিজে হারাচ্ছে বাংলাদেশ, তখন গোটা স্টেডিয়াম চিৎকার করেছিল ‘মওকা, মওকা’।

ইংল্যান্ডের আবহাওয়া মুহূর্তে পাল্টে যাওয়ার মতো বার্মিংহামে দুই দলের সম্পর্ক ভোজভাজির মতো অন্য রকম হয়ে যাবে, ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং টুকরো-টাকরা ফুলকি উড়তেই শুরু করে দিয়েছে। ইন্টারনেট যুদ্ধ শুরু হয়েই গিয়েছে। পদ্মাপারের কয়েকটি ওয়েবসাইটে কিছু কুরুচিকর ছবিও প্রকাশিত হচ্ছে, যা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন।

যা দেখেশুনে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেটীয় সুসম্পর্ককে শেক্সপিয়রীয় আমলের ঘটনা বলেই মনে হবে। কে বলবে, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ জগমোহন ডালমিয়া আইসিসি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর। এখন যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হচ্ছে, সেটাও ডালমিয়াই চালু করেছিলেন মিনি বিশ্বকাপ হিসেবে। এবং, প্রথম বারই সেই টুর্নামেন্ট উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। সেই সময় এ রকম বিশ্বমানের টুর্নামেন্ট পাওয়ায় ক্রিকেটের নবজাগরণই ঘটে গিয়েছিল বাংলাদেশে।

এখন যদিও দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মতোই ক্রিকেটীয় মানচিত্রেও ঢুকে পড়েছে নানা অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এবং তিক্ততার সুর। ডালমিয়ার আমলের সখ্যতা খুঁজে পেতে গেলে ‘শেক্সপিয়ার এক্সপ্রেস’-এর মতোই কোনও ভিন্টেজ ট্রেন ধরতে হবে!

Virat Kohli Mashrafe Mortaza India Bangladesh Cricket Board semifinal ICC Champions Trophy 2017 Champions Trophy চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বিরাট কোহালি মাশরাফি মর্তুজা Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy