Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ব্যর্থতার বিশ্লেষণে ছোটবেলার দুই কোচ

শট বাছাই আর দুর্বোধ্য সুইং ডোবাচ্ছে কোহলি-পূজারাকে

ইংরেজ আবহাওয়ায় মারণ সুইং মোকাবিলার অনভ্যাস ও শট বাছাইয়ে গণ্ডগোল। চলতি সিরিজে চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলিদের প্রধান শত্রু নাকি এরাই। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই তারকাকে যাঁরা তাঁদের ক্রিকেটজীবনের শুরু থেকে দেখছেন, সেই ছোটবেলার কোচেরাই বলছেন এ কথা। সেই কোচেদের মতে, এর সমাধানও দুই বিপন্ন ব্যাটসম্যানের নিজেদেরই হাতে। আট ইনিংসে ২৫.৮৭-এর গড়ে ২০৭ রান চেতেশ্বর পূজারার। বিরাট কোহলির আট ইনিংসে অবদান ১০৮। গড় ১৩.৫০। গোটা সিরিজে পূজারা প্রায় এগারো ঘন্টা ক্রিজে থাকলেও আটটি ইনিংস মিলিয়ে কোহলি পাঁচ ঘন্টার বেশি কাটাতে পারেননি উইকেটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৩
Share: Save:

ইংরেজ আবহাওয়ায় মারণ সুইং মোকাবিলার অনভ্যাস ও শট বাছাইয়ে গণ্ডগোল। চলতি সিরিজে চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলিদের প্রধান শত্রু নাকি এরাই।

ভারতীয় ক্রিকেটের দুই তারকাকে যাঁরা তাঁদের ক্রিকেটজীবনের শুরু থেকে দেখছেন, সেই ছোটবেলার কোচেরাই বলছেন এ কথা। সেই কোচেদের মতে, এর সমাধানও দুই বিপন্ন ব্যাটসম্যানের নিজেদেরই হাতে।

আট ইনিংসে ২৫.৮৭-এর গড়ে ২০৭ রান চেতেশ্বর পূজারার। বিরাট কোহলির আট ইনিংসে অবদান ১০৮। গড় ১৩.৫০। গোটা সিরিজে পূজারা প্রায় এগারো ঘন্টা ক্রিজে থাকলেও আটটি ইনিংস মিলিয়ে কোহলি পাঁচ ঘন্টার বেশি কাটাতে পারেননি উইকেটে।

‘ব্যাড প্যাচ’? কথাটা শুনে মানতে চাইলেন না রাজকুমার শর্মা। যিনি দশ বছর বয়স থেকে বিরাট কোহলিকে দেখছেন। কোচিং করাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, “ইংল্যান্ডের পরিবেশে, এই ধরনের সুইং ও পেসের বিরুদ্ধে যে রকম শট খেলা উচিত, তা খেলতে পারছে না বিরাট। আমি ওকে আগেই ‘স্কোয়ার অব দ্য উইকেট’ শট খেলতে বারণ করেছিলাম। ওই শটে রান এলেও ঝুঁকির ব্যাপারটা সব সময় থেকে যায়। শুধুমাত্র ‘ভি’-এর মধ্যে খেলতে বলেছিলাম।” কিন্তু কোহলি তা করতে পারছেন কোথায়? শর্মার ব্যাখ্যা, “প্রথমত, অভ্যাসবশত স্কোয়ার অব দ্য উইকেট শট খেলে ফেলছে। আর দ্বিতীয়ত, ইংরেজ বোলাররা বুদ্ধি করে বিরাটকে ফাঁদে ফেলছে। বোঝাই যাচ্ছে, ওকে নিয়ে খুব ভাল ভাবে হোমওয়ার্ক করেছে অ্যান্ডারসনরা। যেটা অবশ্য খুব স্বাভাবিক।”

আটটি ইনিংসের মধ্যে চারটিতেই স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন কোহলি। দু’বার কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েছেন। একবার এলবিডব্লু-র ফাঁদে পড়েছেন ও একবার তাঁর স্টাম্প ছিটকে গিয়েছে। শর্মার মতে, “এই সমস্যা এড়ানোর সবচেয়ে ভাল রাস্তা হল, ‘ভি’ এরিয়ার মধ্যে সোজা শট খেলো। এ ভাবেই ছন্দ ফিরিয়ে আনতে হবে বিরাটকে। এটা আমি ওকে ফোনে বারবার বলেছি। সামনে থাকলে হয়তো ভাল ভাবে বোঝাতে পারতাম।”

প্রিয় ছাত্রের এই দুঃসময়ে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর জন্য ইংল্যান্ডেও যাওয়ার কথা ছিল রাজকুমারের। কিন্তু ভিসা সমস্যা হওয়ায় তা এখন পর্যন্ত হয়ে উঠল না। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে ফোনে হতাশ রাজকুমার শর্মা বলছিলেন, “জানি না কী হয়েছে। এখনও ভিসা পাইনি। আমার যাওয়াটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে বিরাটের উপর যথেষ্ট ভরসা আছে আমার। আমি জানি, ওর সমস্যার সমাধান ও নিজেই করে নিতে পারবে। তা ছাড়া ভারতীয় টিমের কোচিং স্টাফও ওকে নিশ্চয়ই সব রকম ভাবে সাহায্য করছে।”

অপরজন এই বাংলারই মানুষ। দেবু মিত্র। যিনি বলেন, “পূজারা আমার হাতেই তৈরি।” সেই সৌরাষ্ট্র রঞ্জি দলের কোচ আবার প্রথম তিন টেস্ট দেখেছেন ইংল্যান্ডে, গ্যালারিতে বসেই। কিন্তু এক দিনও ফোন করেননি তাঁর প্রিয় ছাত্রকে। কেন? ইংল্যান্ড থেকে শহরে ফিরে বললেন, “কারণ, আমি জানি ও নিজেই সমস্যা কাটিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে আসবে। তা ছাড়া, পূজারার ব্যাটিংয়ে এমন কিছু মারাত্মক টেকনিক্যাল ভুল দেখিনি আমি। দেখলে নিশ্চয়ই ওকে ফোন করতাম। ব্যাটসম্যানের কাছে ক্রিকেট এক বলের খেলা। এক মুহূর্তের ভুলেই সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। ওর সেটাই হচ্ছে। এই সমস্যা যে কোনও মুহূর্তেই কাটিয়ে উঠবে।”

ওপেনাররা ব্যর্থ হওয়ায় নতুন বলের সামনে সমস্যায় পড়ছেন পূজারা। দলের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে এমন অভিযোগ উঠলেও দেখা গিয়েছে বেশির ভাগ ইনিংসেই সেট হওয়ার পর আউট হয়ে গিয়েছেন তিনি। লর্ডসে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৭১ ও ১২৬ মিনিট ছিলেন ক্রিজে। ট্রেন্টব্রিজে দ্বিতীয় ইনিংসে ছিলেন দু’ঘন্টার উপর। গড়ে প্রতি ইনিংসে প্রায় ৮৩ মিনিট করে ক্রিজে ছিলেন। দেবুর যুক্তি, “নতুন বলে সমস্যা হলে কি কোনও ব্যাটসম্যান এতক্ষণ ধরে ক্রিজে থাকতে পারে?”

কিন্তু ট্রেন্টব্রিজ ছাড়া বাকি ছ’বারই কট বিহাইন্ড, স্লিপে ক্যাচ, বোল্ড বা লেগ বিফোর হয়ে তাঁকে ফিরতে দেখা গেল কেন? দেবু একে হঠাৎ মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে ‘মুহূর্তের ভুল’ বলে ব্যাখ্যা দিলেও চেতেশ্বরের বাবা প্রাক্তন সৌরাষ্ট্র ক্রিকেটার অরবিন্দ পূজারার প্রশ্ন, “ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় বলে যে রকম মারাত্মক সুইং হয়, সেই সুইং সামলানোর অভ্যাস কি ভারতের ব্যাটসম্যানদের আছে? কতটা সুইং করবে সেটা ঠিক ও বুঝতে পারছে না বোধহয়।” তাঁর হাতেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি চিন্টুর। রাজকোট থেকে সেই অরবিন্দ বললেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় উইকেটে পেস ও বাউন্স থাকে, কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া তো থাকে না। তাই ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় সুইং সামলানোটা অন্য ব্যাপার। ওখানে বলটা অনেক বেশি সুইং করে। ওর এই সমস্যাই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তাই এই সফরটা ওর কাছে একটা বড় শিক্ষা হয়ে থাকল। ভবিষ্যতে যা কাজে লাগবে।”

পূজারার সমস্যা

এক) ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় বল কতটা সুইং করবে, ধরতে না পারা।

দুই) হঠাৎ মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে আউট।

সমাধান

এক) ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় যত বেশি সম্ভব প্র্যাকটিস।

দুই) মনঃসংযোগের ক্ষমতা বাড়ানো।

কোহলির সমস্যা

এক) ‘স্কোয়ার অব দ্য উইকেট’ শট খেলতে গিয়ে ফাঁদে পা।

দুই) নিজের শট খেলার স্বাভাবিক প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।

সমাধান

এক) ‘ভি’ এরিয়ায় বেশি শট খেলতে হবে।

দুই) একশো ভাগ নিশ্চিত হয়ে শট খেলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE