Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পিচ আগুনে শান্তির সিরিজ পুড়িয়ে গেলেন কোহলি

পরিচিত সাংবাদিকের চুলের স্টাইল দেখে হেসে বলে উঠলেন, ‘আই লাইক ইট’। অফিসিয়াল ব্রডকাস্টারদের পরিচিত অ্যাঙ্কারকে সামনে পেয়ে তাঁর সঙ্গে খুনসুটি করতেও দেখা গেল তাঁকে।

রাজীব ঘোষ
মোহালি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:৫৫
Share: Save:

পরিচিত সাংবাদিকের চুলের স্টাইল দেখে হেসে বলে উঠলেন, ‘আই লাইক ইট’।

অফিসিয়াল ব্রডকাস্টারদের পরিচিত অ্যাঙ্কারকে সামনে পেয়ে তাঁর সঙ্গে খুনসুটি করতেও দেখা গেল তাঁকে।

মোহালিতে আসার আগের রাতেই হরভজন সিংহর বিয়ের পার্টিতে যুবরাজ সিংহ, শিখর ধবনদের সঙ্গে নেচেছেন।

একেই বোধহয় বলে ‘বিন্দাস’।

রাত পোহালেই ধুন্ধুমার ক্রিকেট যুদ্ধ। টেস্টের এক নম্বর দলের চ্যালেঞ্জ। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্র্যাকটিসের ফাঁকে এহেন কাণ্ডকারখানা! বিরাট কোহলির পক্ষেই বোধহয় সম্ভব।

জন্মদিনে দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে নামার তৃপ্তিই বা আর ক’জন পেয়েছেন? সে জন্যই বোধহয় এমন খাসা মেজাজে ক্যাপ্টেন কোহলি।

মেজাজটাই যে আসল রাজা।

তবে এ সব যে আপাতত নিজেকে চাপমুক্ত রাখার জন্য, তা নেট প্র্যাকটিস সেরে বেরিয়ে এসে বুঝিয়ে দিলেন তিনি।

‘‘দিনটা অবশ্যই বড়’’, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট যুদ্ধের আগে শেষ প্রস্তুতি সেরে উঠে বললেন বিরাট, ‘‘জন্মদিনে প্রথম দেশকে টেস্টে নেতৃত্ব দিতে নামা। সত্যিই বড় ব্যাপার।’’

শোনা গেল, বৃহস্পতিবার জন্মদিনে অনুষ্কা শর্মাও আসছেন। তাঁদের ২৩ জানুয়ারির জল্পনাপ্রসূত বিয়ের কার্ড নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ঝড় উঠেছে, তার পর অনুষ্কার এখানে আসাটা অন্য মাত্রা পাচ্ছে বইকী।

তবে ফোকাসটা মাঠের বাইরে থেকে ভিতরে সরিয়ে আনলেই চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে ভারত অধিনায়কের। কথাবার্তা শুনে মনে হল, আগামী পাঁচ দিন টেস্ট যুদ্ধের রক্তারক্তিতেই মেতে থাকতে চান তিনি। বাকি বিশ্ব চুলোয় যাক। ভিতরে ভিতরে যে নিজেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সেঁকে নেওয়ার কাজটা একই সঙ্গে চলছে, ক্যাপ্টেনের কথাবার্তায় তার আঁচ কিছুটা হলেও পাওয়া গেল।

বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকের কথাই ধরুন। যখন শুনলেন, গাঁধী-ম্যান্ডেলার নামাঙ্কিত সিরিজে শান্তি বজায় থাকবে তো? তখন পরিষ্কার বুঝিয়েই দিলেন, আবেগ দিয়ে তাঁদের শান্ত করা যাবে না। বলে দিলেন, ‘‘যে মহান ব্যক্তিদের কথা বলছেন, তাঁদের এক রকম শক্তি ছিল। আমাদের অন্য রকম। এর সঙ্গে আমাদের মাঠে খেলার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং আমরা আমাদের শক্তিতে আরও শান দিতে চাই।’’ ইঙ্গিতটা খুব স্পষ্ট। ইটের জবাব পাথরেই দেবেন। সে দুই শান্তির পূজারির নামে সিরিজ হলেও।

মোহালির কনফারেন্স রুমে বসে ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন আগ্রাসন নিয়ে প্রায় রক্তচক্ষু দেখানোর ঘণ্টা তিনেক পরই তাঁর প্রেমিকার টুইট ভেসে উঠল, ‘‘আতসবাজিতে পাখিদের চোখে স্বাভাবিক আলোর স্তর কমে যায় ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।’’ হ্যাশট্যাগ অ্যানিম্যালফ্রেন্ডলিদিওয়ালি। প্রেমিক-প্রেমিকা যেন দুই মেরুতে। একজন যুদ্ধংদেহি। অন্য জন ভালবাসার প্রতীক।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

মোহালিতে পিচ-বিতর্ক যেমন ছিল, তেমনই আছে, এবং আগামী পাঁচ দিন থাকবে বলেও মনে হচ্ছে। প্রসঙ্গটা উঠতে এ দিন কোহলির কথাগুলো রবি শাস্ত্রীর ‘ইকো’ শোনাল যেন। তাতে অবশ্য ধার আরও বেশি। বললেন, ‘‘ঘরের মাঠেও যদি বিদেশের মতো কন্ডিশন পাই তা হলেও কিছু করার নেই। আমাদের সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। কারণ, আমাদের লক্ষ্য এখন এক নম্বরের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ঘরের মাঠে আমাদের টার্নিং ট্র্যাক দিয়ে দেখুক না কী হয়।’’ সাধে কি সঞ্জয় মঞ্জরেকর বলেছিলেন, শাস্ত্রী-কোহলির জুটিটা মারাত্মক আগ্রাসী। সেই আগ্রাসনের পরিণতি ইশান্ত শর্মাকেও এ দিন নেটে দেখা গেল বল করতে। বার্তাটা পরিস্কার, যতই তোমরা (আইসিসি) আগ্রাসনের জন্য শাস্তি দাও ইশান্তকে, আমরা ওকে সঙ্গে রেখেছি আগুনটা জিইয়ে রাখার জন্য।

সাত বছর ধরে যে টেস্ট দল বিদেশের মাটিতে অপরাজিত, তার সাফল্যের রথ থামানোর জন্য টিম ইন্ডিয়াকে তাদের পছন্দের উইকেট পুরোপুরি দেওয়া হচ্ছে না-ই বা কেন? দু’দিন আগেই গুরগাঁওয়ের বাড়িতে অডির এ৮এল ডব্লিউ১২ কুয়াট্রো নিয়ে এসে যত আনন্দ পেয়েছেন ভারত অধিনায়ক, মোহালিতে টার্নিং উইকেট পেলে বোধহয় তার দ্বিগুন আনন্দ পেতেন। কিউরেটর দলজিৎ সিংহ মিডিয়াকে মাঠে নিয়ে গিয়ে বাইশ গজের কভার তুলে দেখিয়ে বললেন, ‘‘এই যে এত হোম অ্যাডভান্টেজ, হোম অ্যাডভান্টেজ বলা হচ্ছে, তার তো একটা সীমা আছে, না কি? উইকেটের স্বাভাবিক চরিত্র পাল্টে দিয়ে তো রাতারাতি ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে দেওয়া যায় না।’’

এই অবস্থায় তিন স্পিনারে, না দুই স্পিনারে খেলবেন, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে টিম ইন্ডিয়া। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন তাঁর লেখায় চার বোলারের ফর্মুলার কথা বলেছেন। আবার মহম্মদ আজহারউদ্দিন বলছেন, ‘‘জিততে হলে পাঁচ বোলারই নিতে হবে কোহলিকে। তিন স্পিনার ও দুই পেসার।’’

আগের দিন রবি শাস্ত্রী চার বোলারে খেলার ইঙ্গিত দিলেও এ দিন ক্যাপ্টেন বললেন, ‘‘সেটার সম্ভাবনা বোধহয় কম। একজন বাড়তি বোলার দলে থাকলে উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। টেস্ট বোলাররাই জেতায়, ব্যাটসম্যানরা টেস্ট জিতিয়েছে, এমন ঘটনা কটা আছে?’’

উইকেটকিপার-সহ ছয় ব্যাটসম্যান ও অলরাউন্ডার-সহ পাঁচ বোলার। এটাই বুধবার রাত পর্যন্ত ভারতীয় শিবিরের সম্ভাব্য কম্বিনেশন। অলরাউন্ডার স্লটের জন্য লড়াই রবীন্দ্র জাডেজা-স্টুয়ার্ট বিনির। দু’জনেই নেটে অনেকটা সময় কাটালেন।

টিম কম্বিনেশন নিয়ে ধন্দ থাকতে পারে। অনিশ্চয়তার চাদরে ঢাকা থাকতে পারে বাইশ গজও। কিন্তু টেস্ট যুদ্ধে আগ্রাসন যে থাকছে ষোলোআনা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ‘‘আমার দাড়ির গোটা চল্লিশেক চুল পেকেছে হয়তো, আর কিছুই তেমন পাল্টায়নি।’’

কোহলির বলা এই কথাগুলোর মধ্যে যদি কোনও হুঁশিয়ারি লুকিয়ে থাকে, তা বরং বুঝে নিতে দিন হাসিম আমলাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE