অ্যান্টিগা টেস্টের ভাগ্য ভাল, তার আজ একটা বিরাট কোহালি ছিল। অ্যান্টিগা টেস্টের ভাগ্য ভাল সেখানে আজ একটা বিরাট কোহালি সেঞ্চুরি করে গেলেন।
অ্যান্টিগা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিচারে যতটা নৈসর্গিক, তার ক্রিকেট স্টেডিয়ামও নাম-মাহাত্ম্যে প্রখ্যাত। নামটা যে, স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যে দৃশ্য সেখানে দেখা যাচ্ছিল, আঁতকে ওঠার মতো।
শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের দুর্দান্ত বাউন্সারে মুরলী বিজয় আউট। ভারত ১৪-১, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা উল্লসিত। দেখার লোক বলতে, জনা তিনেক সাফাইকর্মী!
বিরাট কোহালি ধুঁয়াধার ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি করলেন। কার্লোস ব্রেথওয়েটকে পরপর দু’টো বাউন্ডারি মেরে। ক্যারিবিয়ান পেস-ব্যাটারি দিশেহারা। কিন্তু গ্রাস ব্যাঙ্কসে একজনও বসে নেই!
শিখর ধবন লড়ুয়ে ৮৪ করে আউট। হাততালি দিচ্ছেন কারা? না, না ভরা গ্যালারি নয়। সতীর্থরা!
অথচ অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনে ক্রিকেটীয় উপকরণে কোনও অভাব ছিল না। ভারত টস জিতেছে, জিতে ব্যাট নিয়েছে। ধবনের সঙ্গে কোহালি আস্তে আস্তে বড় স্কোরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন টিমকে। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মিনিট কুড়ির মধ্যে যে দু’টো বাউন্ডারি মারলেন, তার প্রত্যেকটা নিয়ে দুশো শব্দ লেখা যায়। আবার টেস্টকে ঘিরে আবহ ধরা যাক। ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সকাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ার্ম আপে ঘুরছেন কে? না, স্বয়ং ভিভ রিচার্ডস! অভিষেককারী ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার রস্টন চেজের হাতে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিচ্ছেন কে? না, স্বয়ং ভিভ রিচার্ডস! কমেন্ট্রি বক্সে সুনীল গাওস্করদের সঙ্গে মাইক হাতে বসে পড়ছেন কে? সেই স্বয়ং ভিভ রিচার্ডস!
শুধু দর্শক নেই।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, হয়তো টি-টোয়েন্টির দাপটের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের ফের হেরে যাওয়া নিয়েই লিখতে হবে। বীরেন্দ্র সহবাগ— তিনি পর্যন্ত ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে টুইট করে দিলেন, ‘মাঠে তো দর্শকের চেয়ে প্লেয়ার বেশি। এত দিন অ্যান্টিগার মাঠে প্রচুর পশু-পাখিও দেখা যেত। আজ সেটাও নেই!’ লিখবেনই। টিকিটের দাম কমিয়ে, স্কুল পড়ুয়া-বয়স্কদের জন্য বিনামূল্যে করেও মাঠ প্রায় ফাঁকা। মেরেকেটে হাজারখানেক লোক!
ভারত অধিনায়ক যে আক্ষেপ ভুলিয়ে মন ফেরালেন ক্রিকেটে। না, মাঠে লোক আনতে পারেননি বিরাট। কিন্তু ভিভের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটকে যদি কেউ এ দিন টেনে থাকেন, তো তিনি। হাফসেঞ্চুরি করেই থামেননি কোহালি। নিজের ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন সেঞ্চুরির দিকে। গোটা ইনিংসে একটার বেশি খারাপ শট না খেলে। আজকেরটা ধরলে কোহালির বারো নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরিটা হল। ১৩৪ বলে সেঞ্চুরি। ১৪৩ রানে এখনও নট আউট কোহলি।
কোন অবস্থা থেকে ইনিংসটা খেলে গেলেন বিরাট? ভারত যখন ৭৪-২। মুরলী বিজয় আউট। পূজারা আউট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ম্যাচে ফিরতে চাইছে। সেখান থেকে ধবনকে নিয়ে কোহালির পাল্টা লড়াই। ৭৮ ওভার শেষে ভারতকে ২৭৬-৪ স্কোরে পৌঁছে দেওয়া। এবং যতই প্রতিপক্ষ টিমের অধিনায়ক হন না কেন, ভিভ রিচার্ডসও খুশি হয়েছেন নিঃসন্দেহে। শুধু ব্যাটিং শৈলীতে নয়, সেঞ্চুরিতে নয়। ভিভের মাঠে সিরিজের প্রথম টেস্টে যে প্রাণও ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন ভারত অধিনায়ক!
ছবি: এএফপি।
ভারত প্রথম ইনিংস
৩০২-৪ (কোহালি ১৪৩ ব্যাটিং, ধবন ৮৪)।