Advertisement
E-Paper

খেলা শুরু হচ্ছে না কেন, সরব বিরাট

ওয়ান্ডারার্সের পিচ নিয়ে তুলকালামের মধ্যেই দু’দিন ধরে চলল অন্য এক ‘ম্যাচ’। ভারতীয় শিবিরের সঙ্গে বার বার সঙ্ঘাত হল ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্‌ট এবং দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড এবং আলিম দারের।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৮
বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি।

বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি।

ওয়ান্ডারার্সের পিচ নিয়ে তুলকালামের মধ্যেই দু’দিন ধরে চলল অন্য এক ‘ম্যাচ’। ভারতীয় শিবিরের সঙ্গে বার বার সঙ্ঘাত হল ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্‌ট এবং দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড এবং আলিম দারের।

গত কাল ২০ মিনিট বাকি থাকতে তৃতীয় দিনের খেলা স্থগিত করে দিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারি। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ভারতীয় শিবির। অধিনায়ক কোহালি মাঠেই আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিয়েছিলেন। এর পর কোচ রবি শাস্ত্রীকে নিয়ে তিনি সোজা ঢুকে পড়েন ম্যাচ রেফারির কক্ষে। সেখানে গিয়ে বলে আসেন, ‘‘খেলা থামাচ্ছেন কেন? আমরা তো একই পিচে ব্যাট করেছি।’’ ম্যাচ রেফারির সামনে মৌখিক ভাবে খেলা স্থগিত রাখা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসেন তাঁরা।

ম্যাচ রেফারির সঙ্গে তর্কাতর্কি চলে শনিবার সকালেও। শুক্রবার রাতের বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে খেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। যা শোনার পরে কোহালিদের মনে হতে থাকে, তাঁদের প্রতি আবার অন্যায় করা হচ্ছে। অধিনায়ক আবার হানা দেন ম্যাচ রেফারির কক্ষে। দু’দলের ড্রেসিংরুমের লাগোয়া ম্যাচ রেফারির ঘর। আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড এবং আলিম দার তখনই মাঠ পর্যবেক্ষণ করে এসে দুই দলকে জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল দশটায় ম্যাচ শুরু হচ্ছে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টির পরে আউটফিল্ড এখনও ভিজে রয়েছে। আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে পুরো মাঠ শুকিয়ে তুলতে। মাঠে সুপার সপারও চলছে। আম্পায়াররা জানান, সাড়ে দশটায় পরবর্তী পর্যবেক্ষণে যাবেন। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব, ঠিক কটায় খেলা শুরু হতে পারে।

এই বক্তব্য শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কোহালি। আম্পায়ার আলিম দার-কে পাল্টা প্রশ্ন করতে করতে তিনি ম্যাচ রেফারির ঘরের দিকে এগোতে থাকেন। কোহালি বলতে থাকেন, ‘‘খেলা কেন দেরি করে শুরু হচ্ছে? মাঠে কোথায় কোন জায়গা ভিজে আছে?’’ উত্তেজিত ভাবে এর পর যোগ করেন, ‘‘এই টেস্টের মধ্যে প্রত্যেক রাতেই বৃষ্টি হচ্ছে। পরের দিন সকালে রোজই ঠিক সময়ে খেলা শুরু হয়েছে। তা হলে আজ দেরি করছেন কেন?’’ ড্রেসিংরুমের সামনেই ওয়ান্ডারার্সের বিখ্যাত ‘গ্রাস এনব্যাঙ্কমেন্ট’। ঘাসের উপর বসে খেলা দেখার মনোরম জায়গা। এমনিতে টেস্টের প্রথম তিন দিন একেবারেই লোক দেখা যায়নি। শনিবার, ছুটির দিন বলে সাড়ে ন’টা নাগাদই ভিড় জমতে শুরু করেছে। কোহালিকে দেখতে পেয়ে ভারতীয় সমর্থকেরা ছুটে এসে বলতে শুরু করেন, ‘‘একদম ছাড়বে না ক্যাপ্টেন। ওদেরকে মাঠে নামাতেই হবে।’’

ভিড়ের মধ্যে থেকে ‘কোহালি কোহালি’ চিৎকারও শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারত অধিনায়কের সে সব দিকে তখন খেয়াল নেই। তাঁর মস্তিষ্কে তখন একমাত্র প্রশ্ন ঘুরছে— খেলা কেন শুরু হচ্ছে না? আলিম দার-কে তিনি বলে চলেন, ‘‘গত কাল আমরা ব্যাট করছিলাম। আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল কি হয়নি? হয়েছিল, না? আমরা ব্যাট করার সময় মাঠ, পিচ সব শুকনো হয়ে গিয়েছিল? আমরা কিছু বলেছিলাম? এক বারও বলেছিলাম, খেলতে নামব না?’’ এর পরেই তিনি ঢুকে পড়েন ম্যাচ রেফারির ঘরে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে আসেন।

ভারতীয় দল মনে করছে, তৃতীয় দিনে ২০ মিনিট আগে খেলা স্থগিত করাটা তাঁদের প্রতি অন্যায় হয়েছে। ম্যাচ রেফারির সামনেও তাঁরা সে কথা জানান যে, ওই সময়ে এক উইকেট তুলে নিয়ে তাঁরা সুবিধেজনক অবস্থায় ছিলেন। সেই সময় খেলা থামানো মানে অন্য পক্ষকে সুবিধে করে দেওয়া। এমন কথাও তাঁরা ম্যাচ রেফারিকে বলেন যে, ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে, যে বলটায় ডিন এলগারের মাথায় লাগে সেটা খারাপ পিচের জন্য হঠাৎ লাফিয়ে ওঠেনি। বুমরার বলটি ছিল ভাল বাউন্সার। নিজের ভুলেই মাথা সরাতে পারেননি এলগার। আরও বলা হয়, ভারত ব্যাট করার সময় একাধিক বার মুরলী বিজয়, কোহালি, চেতেশ্বর পূজারা-দেরও আঘাত লেগেছে। দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা-র মতো টেলএন্ডারদের রাউন্ড দ্য উইকেট এসে বডিলাইন বোলিং করছিলেন। তখন তো খেলা বন্ধ করা হয়নি!

সব মিলিয়ে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় ওয়ান্ডারার্সে। এক-এক সময় মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় বল বিকৃতির অভিযোগ মাইক ডেনেসের সচিন-সহ ছয় ভারতীয় ক্রিকেটারকে শাস্তি দেওয়ার সেই ঘটনার মতো না দু’দেশের মধ্যে বিরাট ঝামেলা লেগে যায়। কেউ কেউ টেনে আনছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় ‘মাঙ্কিগেট’ কাণ্ডকেও।

ভারতীয় শিবিরে সব চেয়ে বেশি করে শোনা যাচ্ছিল একটাই প্রশ্ন— দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের দেশে পছন্দের পিচ বানিয়েছে। তা হলে ওরা খেলতে নামুক। শুক্রবার ম্যাচ স্থগিত হওয়ার পরে রবি শাস্ত্রী ম্যাচ রেফারির ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গজগজ করতে থাকেন, ‘‘নিজেদের দেশে খুব তো শখ করে সুপারফাস্ট পিচ বানিয়েছিলে বাবা। এখন নিজেদেরই ঘুম ছুটে গিয়েছে তো? বুকের পাটা থাকলে মাঠে নেমে খেলে দেখা তোরা। আমাদের ক্রিকেটাররা কেউ কোনও অভিযোগ করেনি।’’

দিনের শেষে অবশ্য ম্যাচ থামিয়ে রাখা নিয়ে হতাশার অন্ধকার নেই। বরং বিদেশে কঠিনতম পরিস্থিতিতে টেস্ট জয়ের উৎসব আর তেরঙ্গার স্রোতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে সব কিছুই।

Virat Kohli Wanderers Wanderers Test India vs South Africa Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy