Advertisement
E-Paper

বিরাট নিজের খিদেটা আমার মধ্যে দেখে বলেই হয়তো এত পছন্দ করে

বিরাট কোহালির সঙ্গে কথোপকথনটা আজও পরিষ্কার মনে আছে ঋদ্ধিমান সাহার। ১০ অগস্ট পরবর্তী সময়। জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা এবং করে অধিনায়কের মুখোমুখি। আর তাঁর প্রিয় বঙ্গসন্তানকে দেখামাত্র যে কথাটা বলেছিলেন কোহালি, ভুলতে পারেননি ঋদ্ধিমান।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৪

বিরাট কোহালির সঙ্গে কথোপকথনটা আজও পরিষ্কার মনে আছে ঋদ্ধিমান সাহার। ১০ অগস্ট পরবর্তী সময়। জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা এবং করে অধিনায়কের মুখোমুখি। আর তাঁর প্রিয় বঙ্গসন্তানকে দেখামাত্র যে কথাটা বলেছিলেন কোহালি, ভুলতে পারেননি ঋদ্ধিমান।

‘‘তোর একটা বড় রান দরকার ছিল। আজ হয়ে গেল সেটা। দেখিস, আরও আসবে।’’

একটু ভুল হল বোধহয়। ‘কোহালি-কোটস’ শুধু কেন, ১০ অগস্ট দিনটার আগে ও পরে কী কী ঘটেছিল, দিন পনেরো পেরিয়ে যাওয়ার পরেও গড়গড়িয়ে বলে দিতে পারেন ঋদ্ধি। যেমন লাঞ্চে ৯৩ ব্যাটিং অবস্থায় ড্রেসিংরুমে ভারতীয় কোচ অনিল কুম্বলের তাঁকে বলে দেওয়া, আর সাতটা রান কিন্তু করা চাই! বা তার দু’চার দিন আগে মহম্মদ শামির সঙ্গে ডিনার করার সময় আলোচনা চালানো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে শেষ কোন ভারতীয় উইকেটকিপারের সেঞ্চুরি আছে? খুঁজে-পেতে শেষ পর্যন্ত অজয় রাতরার নামটা বেরোয়।

‘‘শামিকে পরে বলেওছিলাম। সেঞ্চুরি করে ফেরার পর বলেছিলাম, দ্যাখ আমরা দু’দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতীয় উইকেটকিপারের সেঞ্চুরি নিয়ে আলোচনা করছিলাম, আর আজ আমিই করে ফেললাম,’’ বৃহস্পতিবার কলকাতা এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন ঋদ্ধিমান। সন্তানকে কোলে নিয়ে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে স্ত্রী। কিন্তু ওটুকুই। গোটা কয়েক মিডিয়া। কিছু উৎসাহী মুখ। ব্যস। আর কেউ নেই।

না, সিএবি কর্তারাও নেই। একজনও!

প্রায় আট বছর পর এক বঙ্গসন্তান টেস্ট সেঞ্চুরি করে শহরে ফিরলেন, অথচ কোনও সিএবি কর্তা নেই, সত্যিই আশ্চর্যের। ঋদ্ধিমান দেখা গেল আশ্চর্য নন। আসলে তিনি বিশ্বাসই করেন না, বিরাট কিছু করেছেন বলে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন, টিমের কাজে এসেছেন, আর পাঁচ জনের মতো ভাল লাগছে ঋদ্ধির। ভাল লাগছে, ভিভিয়ান রিচার্ডসের মতো ক্রিকেট-কিংবদন্তির প্রশংসা। ভাল লাগছে, জেফ দুঁজোর সঙ্গে কথা বলতে পেরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুঁজো বাঙালি উইকেটকিপারকে বলেন, কিপিং ভাল হচ্ছে। পেসারদের বিরুদ্ধে তো ভাল কিপ করছ। ঋদ্ধি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আর স্পিনারদের বিরুদ্ধে? দুঁজো হেসে তাঁকে বলেন, ‘‘আমি আর স্পিনারদের বিরুদ্ধে কিপ করলাম কোথায় যে তোমায় বলব কেমন হচ্ছে?’’

ঋদ্ধিমান এ সবই মনে রাখতে চান। কিন্তু বাড়াবাড়িতে ইচ্ছে নেই।

‘‘সেঞ্চুরি করলে, এত প্রশংসা শুনলে কার না ভাল লাগে? আমারও লাগে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ও সব ইতিহাস মাথাতেই আসেনি। সেঞ্চুরি করার সময়টায় জাস্ট মনে হয়েছিল, প্রথম সেঞ্চুরিটা তা হলে পেয়ে গেলাম!’’ বলছিলেন ঋদ্ধি। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘একশো কুড়ি-পঁচিশের মধ্যে পাঁচ উইকেট চলে যাওয়ায় টিম টেনশনে পড়ে গিয়েছিল। আমিও পড়েছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল, বড় পার্টনারশিপ লাগবে। আর ওই তৃতীয় টেস্টে ওদের বোলাররাও পরীক্ষায় না গিয়ে ঠিকঠাক লাইন-লেংথে রেখে যাচ্ছিল। চল্লিশ করার পর মাথায় এল, হাফসেঞ্চুরি করি আগে। আগের দু’টো টেস্টে পাইনি। সেটা করার পর আবার পার্টনারশিপ মোডে ফিরে যাই। লাঞ্চেও কুম্বলের কথাটা শোনার পর মনে হচ্ছিল, বাকি সাত রান তো করতেই হবে। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি বড় পার্টনারশিপ।’’

বোঝা গেল। কিন্তু সমালোচকদের মুখ? সেটা মনে পড়েনি? যারা তাঁকে তিরিশ-চল্লিশের রানের ক্রিকেটার বানিয়ে দিয়েছিল? শুনে নির্লিপ্ত ঋদ্ধিমান। ‘‘নাহ্। জীবনকে ও ভাবে দেখি না। ক্রিকেটকে তো আরওই না। যে যা বলার বলবে। আমি আমার কাজটা করব। আর বিরাট তো খুব সাহস দেয়। ভরসা করে,’’ বলতে থাকেন ঋদ্ধি। ‘‘বিরাট আমাকে কোনও দিন বলেনি, অমুকটা চাই, তমুকটা চাই। অ্যাডিলেডে যে টেস্টটা হেরেছিলাম আমরা, তখনও বলেছিল দারুণ চেষ্টা করেছিস তুই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম দু’টো টেস্টে রান পাইনি তেমন। ও কিন্তু বলেছে, এই তো ভাল স্টার্ট দিচ্ছিস। টিমের লাভ হচ্ছে। বাকিটাও পারবি।’’

বাহ্যিক ভাবে চরিত্রে এত বিপরীতধর্মী হয়েও অধিনায়কের এতটা ভরসার কারণ একটা খুঁজে পান ঋদ্ধিমান। ঋদ্ধির মনে হয়, অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর ক্রিকেটীয় দর্শন মেলে বলেই বিরাট বোধহয় তাঁকে এতটা পছন্দ করেন। তাঁর কথা বারবার মিডিয়ায় বলেন। ‘‘বিরাটকে কোনও দিন আমি হাল ছেড়ে দিতে দেখিনি। হার জিনিসটাকেই ও মেনে নিতে পারে না। বিরাট চায়, সবাই টিমের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকুক। যেটা ও করে। আমিও কিছুটা সে রকম। আমি এটা বিশ্বাস করি। তাই হয়তো আমাকে এতটা পছন্দ।’’ কিন্তু তাঁর ওয়ার্ক এথিক্স? শান্ত আগ্রাসনের পাশে যেটাও তীব্র প্রশংসিত? ‘‘ধুর, আমি তো ক্রিকেটটাই পারি শুধু। আর কিছু তো পারি না। যেটা পারি, সেটা আরও ভাল করে করার চেষ্টা করি।’’

এই যে অনাড়ম্বর। নিজেকে মাটির কাছাকাছি রেখে দেওয়া। ঋদ্ধিমান সাহা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে দ্রুত হিসেব দিয়ে দেন, সেঞ্চুরির জার্সি আর ব্যাটটা বাবাকে দিতে হবে। বাকিগুলো আপাতত নিজের কাছে থাকবে। পরে কী হবে, জানা নেই। সেঞ্চুরি করে ফেরার উৎসবটা কেমন হবে, তা-ও শোনা গেল। রসগোল্লার হাঁড়ির মতো দেখতে একটা কেক তৈরি করা হয়েছে। স্ত্রী-র সঙ্গে সেটা কাটবেন। ব্যস। বৃহস্পতিবারের ডিনার মেনুটা আরও আকর্ষণীয়। পোলাও-কালিয়া নয়। বিরিয়ানি-কাবাবও নয়।

স্রেফ ম্যাগি!

Wriddhiman Saha Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy