বিকেল সাড়ে চারটের শুনশান ওয়াংখেড়ে। নেট সেশন শুরু হতে বাকি অনেকক্ষণ। টিম বাস থেকে নেমে ড্রেসিংরুমের দিকে একে- একে যাচ্ছেন নাইট যোদ্ধারা।
নাইট জার্সির এক জন কিন্তু ততক্ষণে নেটের সামনে চলে এসেছেন। একমনে কথা বলে যাচ্ছেন দু’জনের সঙ্গে। যে দুইয়ের মধ্যে এক জন পরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নীল-সোনালি। অন্য জনের টি-শার্ট আর শর্টস। শেষোক্তের বয়স যে বাকি দু’জনের চেয়ে অনেক কম, প্রেসবক্স থেকে খালি চোখে দেখেও বলে দেওয়া যায়। এবং এঁর উপর দেখা গেল বাকি দু’জনের অখণ্ড মনোযোগ। সে বল করে যাচ্ছে নেটে, মুম্বই জার্সির তার উপর কড়া নজর। আর নাইট জার্সি তার হাত ধরে দেখিয়ে দিচ্ছেন, বলের গ্রিপটা কী হবে!
কারা এঁরা? নামগুলো শুনলে যতটা অবাক লাগবে, ঘটনাটা চোখের সামনে ঘটতে দেখা ঠিক ততটাই অবিশ্বাস্য। এঁরা— সচিন তেন্ডুলকর। অর্জুন তেন্ডুলকর। এবং ওয়াসিম আক্রম!
সেকেন্ডে-সেকেন্ডে যাঁরা দুর্ধর্ষ সব ফ্রেম তৈরি করে যাচ্ছেন। খাঁ-খাঁ মাঠের মাঝামাঝি একটা নেটে বলের পর বল করে যাচ্ছে অর্জুন। প্রথম দিকের প্রায় সব ক’টা বল অফস্টাম্প থেকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়ছিল। দেখে সচিন হালকা মাথা নাড়লেন। ওয়াসিম নিজে তার পর কয়েকটা বল করে দেখানোর চেষ্টা করলেন। তাঁর প্রথম বলেই যে অফস্টাম্পটা ছিটকে যাবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে! ‘সুলতান অব সুইং’ যে এখনও বল হাতে সমান বিধ্বংসী, নেটে তাঁর সামনে পড়া যে কোনও নাইট ব্যাটসম্যান বলে দিতে পারবেন।
কিন্তু তার পরের দৃশ্যগুলো সত্যিই আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো। অর্জুনকে কয়েক বার নিজের বোলিং অ্যাকশন স্লো মোশনে করে দেখালেন ওয়াসিম। স্টেপ বাই স্টেপ দেখিয়ে দিলেন, কী ভাবে ডান কাঁধটা একটু বেঁকিয়ে, কোমর থেকে শরীরটা হালকা ডান দিকে মুচড়ে, প্রথমে ডান হাত ঘুরিয়ে তার পর বাঁ হাতটা উপরে করে বল করতে হবে। অর্জুন ঠিকঠিক ধরতে পারছিল না নিশ্চয়ই, কারণ তার পর ওয়াসিম তার কাঁধটা নিজেই ধরে ফেললেন। দেখালেন, বল করার ঠিক আগে কত ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে বেঁকবে কাঁধ। তার পর হাত সোজা কোমরে, আর ফের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস। কয়েক বার নতুন অ্যাকশন ঝালিয়ে নিয়ে অর্জুনের হাত থেকে যে বলটা বেরল, তার অব্যর্থ নিশানা সেই অফস্টাম্প!
কেমন লাগল দুই তেন্ডুলকরের সঙ্গে অভিনব নেট সেশন? সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কেকেআরের বোলিং মেন্টর জানালেন, অর্জুনকে তাঁর এই প্রথম বল করতে দেখা নয়। “ওর সঙ্গে ভাল করে আলাপ হয়েছে গত গ্রীষ্মে, ইংল্যান্ডে,” বলে ওয়াসিমের সংযোজন, “আমরা একটা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলছিলাম। অর্জুন যখন বল করছিল, আমি মিড অনে ফিল্ডিং করছি। জানেন তো, সে দিন ব্রায়ান লারার উইকেটটা অর্জুনই নিয়েছিল।” কেমন লাগল বোলার অর্জুনকে? “ও একদম বাচ্চা। সবে তো পনেরো বছর হয়েছে। কিন্তু বোলিং নিয়ে অর্জুন বেশ সিরিয়াস। ওর অ্যাকশন আর সুইং নিয়ে কথা বললাম। আর হ্যাঁ, ফিটনেস নিয়ে খুব খাটতে বলেছি। আজকালকার দিনে ওটা মারাত্মক দরকার।”
অর্জুনের বর্তমান কোচ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি রাতে বলছিলেন, ‘‘সচিন নিজে আক্রমকে বলে রেখেছিল একটু আগে নেটে এসে অর্জুনকে দেখিয়ে দিতে। অর্জুনও খুব এক্সাইটেড ছিল ব্যাপারটা নিয়ে।’’ তা হলে কি অর্জুন এখন শুধু বোলিংয়েই মন দিচ্ছে? সুব্রত জানাচ্ছেন, না, ব্যাটিংও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। ‘‘এই তো একটা স্থানীয় ম্যাচে দিন দু’য়েক আগে ৮০ রান করল,’’ বলছেন সুব্রত। আর ছাত্র অর্জুন নিয়ে ওয়াসিমের মন্তব্য, “ও হল অনেকটা স্পঞ্জের মতো। যা বলা হয়, সবটা তুলে নিতে পারে। আর সব সময় শিখতে আগ্রহী। যেটা খুব ভাল লক্ষণ।”
ভাল তো বটেই। একই সঙ্গে অসম্ভব উত্তেজকও। দৃশ্যটা একবার ভেবে দেখুন। পিঠে ‘তেন্ডুলকর’ লেখা জার্সিতে একজন বল করছে অবিকল ওয়াসিম আক্রমের অ্যাকশন নিয়ে, বল পড়ে ছিটকে দিচ্ছে স্টাম্প, ক্রিকেটের অষ্টম আশ্চর্য ছাড়া একে কী বলবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy