Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
cricket

মায়ের তৈরি আচার বেচতেন ভাই, ক্রিকেটার হয়ে বাসচালক বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করেন জাফর

স‌ংসারের যাবতীয় কাজ করে সারা দিন ধরে তিনি ৭-৮ রকমের আচার বানাতেন। তার পর জাফরের এক ভাই ঘুরে ঘুরে সেই আচার বিক্রি করতেন। তাঁর কেরিয়ারের জন্য পরিবারের এই স্বার্থত্যাগকে প্রতি পদে কুর্নিশ করেছেন জাফর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:০৬
Share: Save:
০১ ২১
বাসচালক আব্দুল খাদেরের ইচ্ছে ছিল, তাঁর চার ছেলের এক জন অন্তত জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলুক। বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করেছিলেন ওয়াসিম জাফর। তবে আন্তর্জাতিক ময়দানের তুলনায় তাঁর কৃতিত্ব অনেক বেশি ঘরোয়া ক্রিকেটে।

বাসচালক আব্দুল খাদেরের ইচ্ছে ছিল, তাঁর চার ছেলের এক জন অন্তত জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলুক। বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করেছিলেন ওয়াসিম জাফর। তবে আন্তর্জাতিক ময়দানের তুলনায় তাঁর কৃতিত্ব অনেক বেশি ঘরোয়া ক্রিকেটে।

০২ ২১
জাফরের জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তাঁর দাদা ছিলেন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তাঁর কেরিয়ার থেমে যায় অকালেই।

জাফরের জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তাঁর দাদা ছিলেন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তাঁর কেরিয়ার থেমে যায় অকালেই।

০৩ ২১
দাদার ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেলেও জাফর যাতে কেরিয়ার চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সে দিকে নজর ছিল তাঁর পরিবারের। সকলের আত্মত্যাগ ও স্বপ্নের ফলশ্রুতি ছিল জাতীয় দলে জাফরের সুযোগ পাওয়া।

দাদার ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গেলেও জাফর যাতে কেরিয়ার চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সে দিকে নজর ছিল তাঁর পরিবারের। সকলের আত্মত্যাগ ও স্বপ্নের ফলশ্রুতি ছিল জাতীয় দলে জাফরের সুযোগ পাওয়া।

০৪ ২১
নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে জাতীয় দলের দরজা অবধি পৌঁছনোর রাস্তা খুব একটা মসৃণ ছিল না। জাফরের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ বজায় রাখতে বিভিন্ন পেশায় দেখা গিয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের।

নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে জাতীয় দলের দরজা অবধি পৌঁছনোর রাস্তা খুব একটা মসৃণ ছিল না। জাফরের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ বজায় রাখতে বিভিন্ন পেশায় দেখা গিয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের।

০৫ ২১
তাঁর বাবা ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। কিন্তু তাঁর উপার্জনে সংসারে অনটন দূর হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে জাফরের মা আচার তৈরি করতে শুরু করেন।

তাঁর বাবা ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। কিন্তু তাঁর উপার্জনে সংসারে অনটন দূর হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে জাফরের মা আচার তৈরি করতে শুরু করেন।

০৬ ২১
স‌ংসারের যাবতীয় কাজ করে সারা দিন ধরে তিনি ৭-৮ রকমের আচার বানাতেন। তার পর জাফরের এক ভাই ঘুরে ঘুরে সেই আচার বিক্রি করতেন। তাঁর কেরিয়ারের জন্য পরিবারের এই স্বার্থত্যাগকে প্রতি পদে কুর্নিশ করেছেন জাফর।

স‌ংসারের যাবতীয় কাজ করে সারা দিন ধরে তিনি ৭-৮ রকমের আচার বানাতেন। তার পর জাফরের এক ভাই ঘুরে ঘুরে সেই আচার বিক্রি করতেন। তাঁর কেরিয়ারের জন্য পরিবারের এই স্বার্থত্যাগকে প্রতি পদে কুর্নিশ করেছেন জাফর।

০৭ ২১
জাফর নিজেও পরিশ্রম কিছু কম করেননি। রোজ ভোর সওয়া ৬টার লোকাল ট্রেন ধরে তিনি ক্রিকেট অনুশীলনে যেতে। অনুশীলন সেরে স্কুল। আবার স্কুলের পরে ক্রিকেট। এটাই ছিল তাঁর সারা দিনের রুটিন।

জাফর নিজেও পরিশ্রম কিছু কম করেননি। রোজ ভোর সওয়া ৬টার লোকাল ট্রেন ধরে তিনি ক্রিকেট অনুশীলনে যেতে। অনুশীলন সেরে স্কুল। আবার স্কুলের পরে ক্রিকেট। এটাই ছিল তাঁর সারা দিনের রুটিন।

০৮ ২১
১৮ বছর বয়সে প্রথম রঞ্জি খেলেন জাফর। প্রথম থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর পারফরম্যান্স চোখ ধাঁধানো।

১৮ বছর বয়সে প্রথম রঞ্জি খেলেন জাফর। প্রথম থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর পারফরম্যান্স চোখ ধাঁধানো।

০৯ ২১
বর্তমানে তিনিই রঞ্জি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। তাঁর আগে এই রেকর্ড ছিল অমল মুজুমদারের। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি রঞ্জি ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মালিক হন।

বর্তমানে তিনিই রঞ্জি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। তাঁর আগে এই রেকর্ড ছিল অমল মুজুমদারের। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি রঞ্জি ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মালিক হন।

১০ ২১
রঞ্জি টুর্নামেন্টে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তাঁর আস্তিনেই। মোট ১৪৬টি ম্যাচে তিনি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর পরেই এই জায়গা মধ্যপ্রদেশের দেবেন্দ্র বুন্দেলার। তিনি খেলেছেন ১৪৫ ম্যাচে।

রঞ্জি টুর্নামেন্টে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তাঁর আস্তিনেই। মোট ১৪৬টি ম্যাচে তিনি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর পরেই এই জায়গা মধ্যপ্রদেশের দেবেন্দ্র বুন্দেলার। তিনি খেলেছেন ১৪৫ ম্যাচে।

১১ ২১
রঞ্জিতে মুম্বইয়ের পাশাপাশি জাফর খেলেছেন বিদর্ভের হয়েও। ২০১৮ সালে তাঁর বাউন্ডারিতেই দিল্লিকে হারিয়ে ট্রফিজয়ী হয় বিদর্ভ।

রঞ্জিতে মুম্বইয়ের পাশাপাশি জাফর খেলেছেন বিদর্ভের হয়েও। ২০১৮ সালে তাঁর বাউন্ডারিতেই দিল্লিকে হারিয়ে ট্রফিজয়ী হয় বিদর্ভ।

১২ ২১
মোট ১০ বার রঞ্জিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ৮ বার মুম্বইয়ের হয়ে এবং ২ বার বিদর্ভের হয়ে। রঞ্জিতে সর্বোচ্চ শতরানের কৃতিত্বও তাঁর। জাফর ৪০টি শতরান করেছেন এই টুর্নামেন্টে।

মোট ১০ বার রঞ্জিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ৮ বার মুম্বইয়ের হয়ে এবং ২ বার বিদর্ভের হয়ে। রঞ্জিতে সর্বোচ্চ শতরানের কৃতিত্বও তাঁর। জাফর ৪০টি শতরান করেছেন এই টুর্নামেন্টে।

১৩ ২১
কব্জির মোচড়ে তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরনের সঙ্গে অনেকেই আজহারউদ্দিনের মিল খুঁজে পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ২০০০ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

কব্জির মোচড়ে তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরনের সঙ্গে অনেকেই আজহারউদ্দিনের মিল খুঁজে পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ২০০০ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

১৪ ২১
দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর সিরিজ খুব একটা সুখকর ছিল না। কেরিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা শন পোলক এবং অ্যালান ডোনাল্ডের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন ০ রানে। সিরিজে ৪ ইনিংসে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৪৬ রান।

দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর সিরিজ খুব একটা সুখকর ছিল না। কেরিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা শন পোলক এবং অ্যালান ডোনাল্ডের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন ০ রানে। সিরিজে ৪ ইনিংসে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৪৬ রান।

১৫ ২১
৫ বছর পরে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই ওয়ান ডে ম্যাচে অভিষেক হয় তাঁর। তবে সীমিত ওভারের ম্যাচে তাঁর ফর্ম কোনও দিনই ভাল ছিল না। খেলতেন টেস্ট দলেই। তাও অনিয়মিত।

৫ বছর পরে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই ওয়ান ডে ম্যাচে অভিষেক হয় তাঁর। তবে সীমিত ওভারের ম্যাচে তাঁর ফর্ম কোনও দিনই ভাল ছিল না। খেলতেন টেস্ট দলেই। তাও অনিয়মিত।

১৬ ২১
কেরিয়ারের ৩১ টেস্টে তিনি মোট ১৯৪৪ রান করেছেন। গড় ৩৪.১০। সর্বোচ্চ ২১২।

কেরিয়ারের ৩১ টেস্টে তিনি মোট ১৯৪৪ রান করেছেন। গড় ৩৪.১০। সর্বোচ্চ ২১২।

১৭ ২১
ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২টি। মোট রান করেছেন ১০। ২০০৮ এবং ২০০৯ আইপিএল-এ তিনি খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে।

ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২টি। মোট রান করেছেন ১০। ২০০৮ এবং ২০০৯ আইপিএল-এ তিনি খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে।

১৮ ২১
আইপিএল-এর প্রথম ম্যাচে কেকেআর-এর বিরুদ্ধে ১৬ বলে ৬ রান করেছিলেন। সেই ম্যাচ আইপিএল ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে ম্যাকালামের ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রানের সুবাদে। ২০০৯ সালের পরে তাঁকে আর আইপিএল খেলতে দেখা যায়নি।

আইপিএল-এর প্রথম ম্যাচে কেকেআর-এর বিরুদ্ধে ১৬ বলে ৬ রান করেছিলেন। সেই ম্যাচ আইপিএল ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে ম্যাকালামের ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রানের সুবাদে। ২০০৯ সালের পরে তাঁকে আর আইপিএল খেলতে দেখা যায়নি।

১৯ ২১
চলতি বছরের মার্চে তিনি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলের এবং কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ব্যাটিং কোচ হয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ বছরের জুনে উত্তরাখণ্ড দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

চলতি বছরের মার্চে তিনি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলের এবং কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ব্যাটিং কোচ হয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ বছরের জুনে উত্তরাখণ্ড দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

২০ ২১
জীবনের প্রতি বাঁকে জাফরের পাশে ছিলেন তাঁর পরিবার এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তথাকথিত সাফল্য না পেলেও পরিবারের কাছে তিনিই স্বপ্নপূরণের কারিগর।

জীবনের প্রতি বাঁকে জাফরের পাশে ছিলেন তাঁর পরিবার এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তথাকথিত সাফল্য না পেলেও পরিবারের কাছে তিনিই স্বপ্নপূরণের কারিগর।

২১ ২১
অবসর গ্রহণের পরে জাফর এখন অনেক বেশি সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরে আলোচনা চলে নেটমহলে।

অবসর গ্রহণের পরে জাফর এখন অনেক বেশি সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরে আলোচনা চলে নেটমহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE