Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশি ডিফেন্ডার না নিয়ে সনি কেন, উঠে গেল প্রশ্ন

ডার্বি সেরার ট্রফিটা নিয়ে যখন ‘স্টেনগান সেলিব্রেশন’ করার কায়দায় জবি জাস্টিন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, তখন সনি নর্দেকে দেখা গেল মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসছেন মাঠ থেকে।

বিষণ্ণ: সনি নর্দে। নিজস্ব চিত্র

বিষণ্ণ: সনি নর্দে। নিজস্ব চিত্র

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

ডার্বি সেরার ট্রফিটা নিয়ে যখন ‘স্টেনগান সেলিব্রেশন’ করার কায়দায় জবি জাস্টিন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, তখন সনি নর্দেকে দেখা গেল মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসছেন মাঠ থেকে।

বহু দিন পর বাঙালির দু’ভাগ হয়ে যাওয়া ম্যাচের ক্যানভাসে বিদেশি বনাম বিদেশি নয়, স্বদেশি জবির সঙ্গে বিদেশি সনির লড়াইটাই ছিল প্রধান আকর্ষণ। সেই দ্বৈরথের শেষে দেখা যাচ্ছে, বড় ম্যাচে হাইতি মিডিয়োর মাথা নত না করার রেকর্ড পুরোপুরি ধুলিসাৎ। উল্টো দিকে পর পর দু’টি আই লিগ ডার্বিতে গোল করে চমকে দিলেন কেরলের যে ছেলেটি, তিনি তো গত বছর ছিলেন খালিদ জামিলেরই ছাত্র। খালিদ তাঁকে খেলাতেন না, বসিয়ে রাখতেন রিজার্ভ বেঞ্চে। আরও একটা মনে রাখার মতো ঘটনা হল, সনির মতো তারকাকে যিনি রবিবারের যুবভারতীতে প্রায় পকেটবন্দি করে ফেললেন, সেই নাছোড় লালরাম চুলোভাকেও তো নিজের হাতে তৈরি করেছেন এই খালিদই।

জবি এবং চুলোভা—তাঁর দুই প্রাক্তন ছাত্রের আসাধারণ দক্ষতার কাছেই কার্যত হারার পর স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত হননি মোহনবাগান কোচ। তাঁর নিজের ঢঙেই বলে দেন, ‘‘দু’জনই ভাল খেলোয়াড়। ফুটবল মাঠে এ সব হয়ই। কোচ, ফুটবলার অদলবদল হয়। সনিও কিন্তু ভাল খেলেছে। হারের সব দায় আমার। ফুটবলাররা সবাই ভাল খেলেছে।’’

কোচ তাঁর দলের ফুটবলারদের আড়াল করতে চাইলেও এ দিন ডার্বি হারার পর মোহনবাগান শিবিরে ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, আনফিট সনির বদলে কেন কোনও বিদেশি স্টপার নিলেন না কর্তারা? আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল যে দুটি গোল করেছে, দু’টি ক্ষেত্রেই দায়ী সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডাররা। বিশেষ করে জবির গোলের সময় তাঁর গায়ে লেগে থাকার কথা স্টপার কিংসলে ওবুমেনেমের। কিন্তু কর্নার থেকে উড়ে আসা বল নিজেদের গোল বক্সে পড়ার সময় ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র স্ট্রাইকারের গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি কিংসলে। দলের নাইজিরিয়ান স্টপারের পারফরম্যান্সের লেখচিত্র যে পড়তির দিকে, তা জানার পরও আর এক স্টপার না নিয়ে সনিকে নেওয়া হয়েছিল দলে। দেড় কোটির হাইতি মিডিয়ো পুরো মরসুমে কী দিলেন, তা নিয়ে ম্যাচের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই শুরু হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: এর পরে খেতাবের স্বপ্ন আর অধরা নয়

ঠিক এই জায়গাতেই অনেকটা এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। দুই বিদেশি ডিফেন্ডার বিশ্বকাপার জনি আকোস্তা আর স্প্যানিশ বোরখা গোমেজকে স্টপারে রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। দিপান্দা ডিকা এবং হেনরি কিসেক্কাকে তাঁরা সামলালেন পালা করে। বড় শরীর আটকাতে লম্বা চেহারার গাট্টাগোট্টা ফুটবলার ব্যবহার করলেন আলেসান্দ্রো। নিখুঁত রণনীতি। এবং তিনি সফল।

খেলা শুরুর আগেই স্মোক-বম্বের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। লাল-হলুদের সেই ধোঁয়ায় মিশল আবিরও। পুলিশের কড়াকড়ি সত্ত্বেও দু’পক্ষের গ্যালারিতেই পালা করে ফাটল শব্দবাজি। লিগের নিয়মে এ জন্য জরিমানা দিতে হতে পারে সংগঠক মোহনবাগানকে।

প্রায় ষাট হাজারের যুবভারতীতে ষাট শতাংশ ছিলেন আলেসান্দ্রোর দলের সমর্থক। ম্যাচ শুরুর আগে অনুশীলন করতে নেমেই পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে বাইরে চলে যান মাঝমাঠের ব্লকার ইউতা কিনোয়াকি। ইউতার চলে যাওয়াটা খালিদের গত সাত দিনের তৈরি রণনীতিই পুরোটা ঘেঁটে দেয়। ম্যাচ শুরুর আগে এই ধাক্কায় পিছিয়ে পড়ে মোহনবাগান। ফলে ৪-৫-১ এর বদলে প্ল্যান বি-র শরণাপন্ন হতে বাধ্য হলেন মোহনবাগান কোচ।

সামনে ডিকার সঙ্গে জোড়া স্ট্রাইকারে হেনরিকে নামাতে বাধ্য হন তিনি। দুই স্টপারের সামনে দাঁড়িয়ে ইউতা বরাবরই একটা রক্ষণের পর্দা তৈরি করে রাখতেন। তিনি না থাকায় সুবিধা পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। খালিদ অবশ্য বললেন, ‘‘ইউতা ম্যাচ শুরুর মুখে চলে যাওয়াটা দুর্ঘটনা। ফুটবল মাঠে এ রকম হতেই পারে। দু’টো সামান্য ভুলে দু’টো গোল হয়েছে। দোষ শুধু রক্ষণের নয়, সবার। শুরুতেই দিপান্দা ডিকার সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করাটাই টার্নিং পয়েন্ট।’’

ম্যাচের পরে সনি বা মোহনবাগান কর্তারা কেউই কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। খালিদের সাংবাদিক সম্মেলন চলার সময়ই মাথা নিচু করে টিম বাসে ও গাড়িতে উঠে পড়লেন তাঁরা। রেফারির নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সনি, ডিকারা মাঠে হইচই করলেও খালিদ বা কেউই কোনও অভিযোগ করেননি। কোচ বললেন, ‘‘পরে ভিডিয়ো দেখে বলতে পারব রেফারি ঠিক না ভুল ছিলেন। আমি অনেক দূরে ছিলাম।’’ তর্ক করার জন্য দলের ফিজিয়োকে রেফারি শ্রীকৃষ্ণ মাঠ থেকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তা নিয়েও কেউ কোনও কথা বললেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE