সেরিনা। শনিবার উইম্বলডনে।
নিয়মিত গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলেছি ষাটের দশকে। তার পর থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর হতে চলল নিয়মিত উইম্বলডন দেখছি। নিজের খেলোয়াড় জীবনে মার্গারেট কোর্ট থেকে শুরু করে পরে দর্শক জীবনে একে একে বিলি জিন কিং, ক্রিস এভার্ট, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, স্টেফি গ্রাফ, মোনিকা সেলেস, মারিয়া শারাপোভা, উইলিয়ামস বোনদের— মেয়েদের টেনিসের বহু অসাধারণ চ্যাম্পিয়নকে স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
শনিবার অল ইংল্যান্ডের সেন্টার কোর্টে সেরিনা উইলিয়ামস ফাইনালে অ্যাঞ্জেলিক কের্বারকে ৭-৫, ৬-৩ হারিয়ে ওর সাত নম্বর উইম্বলডন জিতে গ্র্যান্ড স্ল্যামের ওপেন যুগে স্টেফি গ্রাফের সবচেয়ে বেশি ২২টা মেজর জেতার অনবদ্য নজির ছুঁয়ে ফেলল। ম্যাচটা শেষ হওয়ামাত্র খুব স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কয়েকটা ফোন পেলাম— সেরিনা-ই কি মেয়েদের অলটাইম গ্রেট?
দেখুন, প্রথমেই বলব, এ ভাবে সর্বকালের সেরা প্লেয়ার বাছা সম্ভব নয়। যে কোনও খেলাতেই। যেমন টেনিসে পঞ্চাশ বছর কেন, পঁচিশ-তিরিশ বছর আগের সময়ের কোর্ট, তার বাউন্স, বলের ওজন, র্যাকেট, তার স্পিড, টেনশনের সঙ্গে এখনকার সরঞ্জামের বিরাট তফাত। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই যে সেরিনার স্ট্রোকে এত অবিশ্বাস্য পাওয়ার, এক-এক সময় প্রায় পুরুষ টেনিস প্লেয়ারের শটের জোরের সমান, সেটা কি ও মার্টিনা-এভার্টের সময়ের কাঠের র্যাকেটে পারত? আবার কেউ পাল্টা প্রশ্ন তুলতে পারে, স্টেফির সেই ভয়ঙ্কর ফোরহ্যান্ড ড্রাইভগুলো কি আগের তুলনায় এখনকার বেশি ভারী বলে ওকে মারতে দেখা যেত? তা ছাড়া, সেরিনার কৃতিত্বকে এতটুকু অসম্মান না করেও একটা কথা বলব। স্টেফির সময় মেয়েদের টেনিসে সর্বোচ্চ লেভেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেরিনার সময়ের তুলনায় বেশি ছিল। এভার্ট থেকে শুরু করে নাভ্রাতিলোভা, কোর্টে দুর্ভাগ্যজনক ছুরিকাঘাতের আগে পর্যন্ত সেলেস, সাবাতিনি, আরান্থা সাঞ্চেজ, ডাভেনপোর্ট, এমনকী টিনএজার মার্টিনা হিঙ্গিস— কী সব রাইভ্যালরি ছিল স্টেফির! সেরিনা-যুগে ওর সঙ্গে যার প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিডিয়ায় গত এক যুগ ধরে সবচেয়ে বেশি প্রচার পাচ্ছে সেই শারাপোভার বিরুদ্ধে হেড-টু-হেডে ও এগিয়ে ১৭-২। একটা ‘গ্রেট’ রাইভ্যালরিতে একজন তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষকে শেষ হারিয়েছে ২০০৪!
স্টেফির যদি ২২টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম থাকে তো ওর সমসাময়িক এভার্ট-মার্টিনার গ্র্যান্ড স্ল্যামও ১৮টা করে। সেলেস ৯টা। পরিসংখ্যান-ই বলে দিচ্ছে, কামড়াকামড়িটা কত বেশি ছিল তখন। আর সেরিনার ২২-এর পরে বর্তমান মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ওর দিদি ভেনাসের ৯টা। শারাপোভা ৫। লড়াই কোথায়? বিশেষ করে শেষ তিন-চার বছরে! স্টেফির ব্যাকহ্যান্ড একটু দুর্বল ছিল। সেরিনা আবার লো-রিটার্নের সামনে বেশ সমস্যায় পড়ে। হ্যাঁ, সেরিনার মতো পাওয়ারফুল গেম মেয়েদের টেনিসে আগে কখনও আসেনি। ওর মতো একইসঙ্গে শক্তিশালী আর ফিট শরীরও মেয়েদের টেনিস আগে কখনও দেখেনি। এ দিনও ফাইনালে স্টেফির দেশেরই মেয়ে বাঁ হাতি কের্বার যথেষ্ট ভাল খেলল। তবু স্ট্রেট সেটে হেরে গেল সেরিনার ভয়াবহ সার্ভের দাপটে। দু’টে সেটেই একবার ৪-৪, আর অন্য বার ৩-৪ স্কোরে নিজের সার্ভে ১৫-৪০ পিছিয়ে পড়েছিল সেরিনা। দু’বারই পরপর তিনটে করে ‘এস’ মেরে গেমটা শেষমেশ ধরে রাখল। গোটা টুর্নামেন্টে সেরিনার প্রথম সার্ভের সাফল্য ৮৩ শতাংশের বেশি।
স্টেফি শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিল তিরিশ বছর বয়সে। সেখানে সেরিনা চৌত্রিশ পেরিয়ে পঁয়ত্রিশ ছুঁইছুঁই। আরও দু’বছর খেললে অবাক হব না। সেক্ষেত্রে ও মার্গারেট কোর্টের সব মিলিয়ে (ওপেন যুগের আগে-পরে) ২৪টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ডও ভেঙে দেবে বলেই মনে হয়। এ দিন টিভি কমেন্ট্রিতে জন ম্যাকেনরোকে বলতে শুনলাম, ‘‘সেরিনার খেলায় এত বেশি হৃদয়, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর ইচ্ছাশক্তি থাকে যে, যখন ও নিজের সেরা ফর্মে থাকে না তখনও জেতার কোনও না কোনও একটা উপায় ঠিক বার করে নিতে পারে।’’
একেবারে ঠিক কথা। দু’হাজার ষোলোয় সেরিনাকে অলটাইম গ্রেট বলতে দ্বিধা হতে পারে আমার। কিন্তু কে বলতে পারে, সেরিনা যে দিন অবসর নেবে সে দিন আমাকে নিজের কথা গিলতে হবে কি না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy