Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্বপ্নের ফাইনাল চায় ক্রিকেট-বিশ্ব, সতর্ক কোহালিরা

সকালে ওয়েস্ট লন্ডনে চব্বিশ তলা বহুতলে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ামাত্র গোটা ইংল্যান্ডে যেন আতঙ্কের আবহ ফিরে এসেছে। ম্যাঞ্চেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে আত্মঘাতী জঙ্গিহানা দিয়ে যা শুরু হয়েছিল।

মহড়া: প্রস্তুতি চলছে কোহালির। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নামার আগের দিন বার্মিংহামে। ছবি: এএফপি

মহড়া: প্রস্তুতি চলছে কোহালির। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নামার আগের দিন বার্মিংহামে। ছবি: এএফপি

সুমিত ঘোষ
বার্মিংহাম শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০৫:০২
Share: Save:

কী বলা হবে একে? অভিশপ্ত ইংল্যান্ড?

সকালে ওয়েস্ট লন্ডনে চব্বিশ তলা বহুতলে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ামাত্র গোটা ইংল্যান্ডে যেন আতঙ্কের আবহ ফিরে এসেছে। ম্যাঞ্চেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে আত্মঘাতী জঙ্গিহানা দিয়ে যা শুরু হয়েছিল। ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার তিরিশ বছরের ওপর ম্যাঞ্চেস্টারে বসবাস করছেন। তাঁরও মনে হচ্ছে, এমন আতঙ্কের চোরাস্রোত তিনি কখনও এই শহরে দেখেননি।

লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসের ঘটনা সেই আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিছুটা থিতু হতে না হতেই আবার লন্ডনের বহুতলে আগুন। বিখ্যাত সেই ফিল্মের অনুকরণে যাকে বলা হচ্ছে লন্ডনের ‘টাওয়ারিং ইনফার্নো’। বার্মিংহামেও দেখা গেল সকলে ভয়াবহ আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল খেলছিল কার্ডিফে। কিন্তু কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্স নয়, বেশি নজর ছিল ওয়েস্ট লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের ওপর। কে জানত বহুতলের আগুনেই শেষ হবে না ইংল্যান্ডের মানুষের আতঙ্ক!

সকালের ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভূমিকম্প। টুর্নামেন্টের রেটিংয়ে সম্ভবত সব চেয়ে নীচের দিকে থাকা পাকিস্তান উড়িয়ে দিল হট ফেভারিট ইংল্যান্ডকে। সকালেই বলাবলি হচ্ছিল, ক্রিকেট শাপমোচন ঘটাতে পারে। অইন মর্গ্যান, বেন স্টোকসদের হাতে কাপ দেখলে যদি ইংল্যান্ডের মানুষের মুখে হাসি ফেরে। কে জানত, সেই আশাও বিলীন হয়ে যাবে বিকেলের মধ্যে।

যদিও ক্রিকেটবিশ্বে গত কয়েক দিন ধরেই আওয়াজ উঠেছে, ভারত-পাক ফাইনাল লাও। দু’টো দল সেমিফাইনালে ওঠায় সেই আওয়াজ আরও তীব্র হয়েছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা যদিও এমন সম্ভাবনার কারণ দেখেননি। তাঁরা ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। লর্ডসে ভারতীয় দূতাবাসের দেওয়া পার্টিতে বিরাট কোহালিও বলেন, সকলে ভারত-ইংল্যান্ড ফাইনাল আশা করছে।

ইংল্যান্ডের আতঙ্কের মতো বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে শোক। বুধবার ধসে সেখানকার প্রচুর মানুষ প্রাণ হারান। যে জন্য আজ, বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালে কালো ব্যাজ পরে নামবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। সেমিফাইনালের আগে কোহালিকে দেখে অবশ্য সতর্ক, নিয়ন্ত্রিত মনে হচ্ছে। ভারত অধিনায়ক এমনকী, ফেভারিট তকমার মধ্যেও যাচ্ছেন না। উল্টে বাংলাদেশকে বিপজ্জনক দল হিসেবে বর্ণনা করলেন। বলে দিলেন, ‘‘নিজেদের দিনে ওরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেরা আটটি দল খেলে। বাংলাদেশ তাদের মধ্যে এক জন মানেই ওরা দারুণ ক্রিকেট খেলছে, এটা পরিষ্কার।’’

আরও বললেন, বাংলাদেশের হাতে দক্ষ ক্রিকেটার আছে। তাঁরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। বোঝা গেল, ক্রিকেট দুনিয়ায় যতই ভারত-পাক ব্লকবাস্টার ফাইনালে দাবি উঠে যাক, কোহালি এখনই সেই পৃথিবীতে ঢুকতে চান না। একেই ভারত-পাক মানেই বাড়তি চাপের ব্যাপার। তার ওপর সেমিফাইনাল খেলতে নামার আগে আগ বাড়িয়ে সেই টেনশনের গহ্বরে ঢুকতে চান না ভারত অধিনায়ক।

এমনকী, পাক অধিনায়ক সরফরাজ আমেদ পর্যন্ত এমন অভাবনীয় ভাবে ফাইনালে পৌঁছেও বেশি কিছু বলতে চাননি ভারত-পাক নিয়ে। ম্যাচের পরে নাসের হুসেন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ফের কি ভারত-পাক ফাইনালই আশা করছেন? সতর্ক সরফরাজ বললেন, ‘‘দু’টো দলই ভাল খেলছে। আমরা যে কারও জন্য তৈরি।’’

হুঙ্কার: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে উইকেট নিয়ে হাসান আলি। বুধবার কার্ডিফে প্রথম সেমিফাইনালে। ছবি: গেটি ইমেজেস

কে বলবে, ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পরে এই সরফরাজকেই তীব্র সব বাউন্সারের সামনে পড়তে হয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালে ওঠাটা ক্রিকেটের সেরা কামব্যাকগুলোর একটা হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। নাসেরকে চটপটে ভঙ্গিতে যখন সরফরাজ বলছিলেন, ‘‘ভারতের কাছে হারার পরে ছেলেদের বলেছিলাম, আমাদের সব ক’টা ম্যাচই নক-আউট। সে ভাবেই খেলতে হবে,’’ তার কিছুক্ষণ আগেই কোহালি-রা এজবাস্টন থেকে প্র্যাকটিস সেরে বেরিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠক সেরে বেরনোর সময় কোহালিকে এক বার দেখা গেল প্রেস কনফারেন্স রুমের টিভি-র সামনে দাঁড়াতে। এখানেই তো প্রথম ম্যাচের পর বিজয়ী অধিনায়ক হিসেবে এসেছিলেন কোহালি। আর পরাভূত পাক অধিনায়ক সরফরাজ সে দিন সাংবাদিক সম্মেলন করতেও আসতে পারেননি। তাঁর হয়ে ব্যাট করতে এসে পাক মিডিয়ার তীব্র বাউন্সারের মুখে পড়েছিলেন বিদেশি কোচ আর্থার।

কোহালি জানেন, ক্রিকেটের মতোই অনিশ্চয়তায় মোড়া তাঁদের ঘিরে প্রতিক্রিয়া। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগেই যেমন অস্ট্রেলিয়ায় চারটে টেস্ট সেঞ্চুরি করা তাঁকে নিয়ে বীরপুজো চলছিল। সিডনিতে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পরে জনতার রোষের মুখে তিনি একা নন, পড়তে হয়েছিল বান্ধবী অনুষ্কা শর্মাকেও।

এক সাংবাদিক এ দিন জিজ্ঞেস করলেন, পরপর তিনটে বিশ্ব মানের টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলছে ভারত। এই ধারাবাহিকতার কারণ কী? কোহালি বললেন, ‘‘স্যার, ভাল লাগল শুনে যে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠাকেও কৃতিত্বের ধরা হয়।’’ মনে হল, দু’বছরের ওপর হয়ে গিয়েছে। তবু সিডনির সেই হারে অনুষ্কার পোস্টার পোড়ানোটা যেন এখনও মেনে নিতে পারেননি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE