উচ্ছ্বাস: পেনাল্টি থেকে গোল করার পরে হ্যারি কেন। ছবি: রয়টার্স
হ্যারি কেনকে মঙ্গলবারের পর ‘পেনাল্টি কেন’ নাম দিয়ে দিতে পারে ব্রিটিশ মিডিয়া।
সোনার বুটের দৌড়ে থাকা টটেনহ্যাম তারকা কেনের সাত গোলের চারটেই পেনাল্টি থেকে। কেন যখন পেনাল্টি মারতে যাচ্ছেন তখন দেখা গেল চোট নিয়ে মাঠের বাইরে বসে থাকা হামেস রদ্রিগেস মাথা ঠুকছেন ফেন্সিংয়ের জালে। চোখের কোণে জল। ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর জেতা সোনার বুট এ বার নিয়ে যাচ্ছেন হ্যারি, সেটা তার ভাল লাগার কথাও নয়।
কিন্তু টাইব্রেকারে এরিক ডায়ারের কিকটা কলম্বিয়ার গোলে আছড়ে পড়তেই কেন যেভাবে দু’হাত মুঠি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তা তাঁকেই মানায়। পুরো ইংল্যান্ড দল যখন মাঠের মধ্যে আছড়ে পড়ছে একে অন্যের উপর তখন দেখা গেল রদ্রিগেজকে কাঁদতে।
কার্লোস স্যাঞ্চেজ যে ভাবে বক্সে টেনে ফেলে দিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ককে তাতে পেনাল্টি বাধা ছিলই। কলম্বিয়ার ফুটবলাররা একযোগে প্রতিবাদ করলেও এতটাই নিশ্চিত ছিলেন রেফারি যে ভার-এর সাহায্যও নেননি। কিন্তু ম্যাচের শেষ মিনিটে ইয়ারি মিনার গোল বাঁচিয়ে রেখেছিল কলম্বিয়াকে। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতে গেল অবশ্য। শেষ আটে পড়ল সুইডেনের সামনে।
প্রেস বক্সে বসে থাকা ব্রিটিশ মিডিয়ার লোকজন দেখলাম এখন কেন অন্ত প্রাণ হয়ে গিয়েছেন। কার সঙ্গে যে তুলনা করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তাদের কেউ কেউ কেনের খেলার স্টাইল অনেকটা যুরগেন ক্লিন্সম্যানের মতো বলছেন। দারুণ ফিনিশার। ফোকাসড। ভাল অধিনায়ক। নানা বিশেষণ দিচ্ছিলেন ওঁরা। ২০১৬-র ইউরো কাপে কেনের ব্যর্থতার পর তাঁকে ছিঁড়ে খেয়েছিল মিডিয়া। সেই রাগে বিশ্বকাপ চলার সময় সোশ্যাল মিডিয়া বয়কট করেছেন হ্যারি কেন। সাত কোটি ফলোয়ার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও। কেন অবশ্য কৃতিত্ব পেতে পারেন আরও একটি কারণে তিনি পেনাল্টি নষ্ট করেননি লিয়োনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো। সেটা দেখিয়েই ‘কেনই এখন বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার’ বলা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সংযত রাশিয়ায় মাতোয়ারা ভারত
রাতে ম্যাচ, কিন্ত সকাল থেকেই স্পার্টার্ক স্টেডিয়াম সংলগ্ন মেট্রো স্টেশন দিয়ে গান করতে করতে চলেছেন ‘কলম্বিয়ান আর্মি’র নানা দল। হলুদে হলুদে ছেয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। অনেকটা সর্ষেখেতের মতো দেখতে লাগছিল স্টেডিয়ামের বাইরের অঞ্চলটা। তুলনায় হ্যারি কেনের দলের সমর্থকদের ভিড় কম। এমনিতে ইংল্যান্ডের দাঙ্গাবাজ ফুটবল সমর্থকদের রুখতে রুশ প্রশাসন টুনার্মেন্ট শুরুর দিন থেকেই সতর্ক। আজ ম্যাচের আগে আরও টের পাওয়া গেল সেটা। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। একটু বেচাল দেখলেই দু’পক্ষের সমর্থকদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ব্যান্ড বাজাতে বাজাতে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের একদল সমর্থক যাচ্ছিলেন হইহই করে। তাদের দেখেই ভুভুজেলা বাজাতে শুরু করলেন একদল কলম্বিয়ার সমর্থক। ঝামেলা প্রায় লাগে লাগে। মাঠের মধ্যেও সেই আগুনে মেজাজ ছিল অব্যহত। আঙুল তুলে তেড়ে যাওয়া থেকে মাথা দিয়ে পেটে ঢুঁসো, কিছুই বাদ গেল না। কায়রেন ট্রিপিয়ার, দালে আলিদের সঙ্গে হুয়ান মোজিকা, হুয়ান কুইন্তেরো সুযোগ পেলেই নানা কায়দায় মারপিট করেছেন। তবে ‘ভার’-এর কল্যাণে রেফারি তাদের সামলেছেন।
স্পাটার্ক স্টেডিয়ামে এ বারের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। তাই টিকিটের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। এতটাই যে, বেশ কয়েক জন কলম্বিয়ান মহিলা সমর্থককেও দেখা গেল, ‘‘টিকিট থাকলে দিন, যে কোনও মূল্যে কিনব’’ প্ল্যাকার্ড বুকে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নানা জায়গায়। হাতে টিকিট নেই অথচ চলে এসেছেন রাশিয়ায়, দেশের প্রতি কী আবেগ! পাঁচ বার দু’দল মুখোমুখি হয়েছে এ পর্যন্ত অথচ একবারও কলম্বিয়া জেতেনি। জানা সত্ত্বেও গ্যালারি ভিড় জমিয়েছেন জোসে পেকারম্যানের দলকে সমর্থন করতে। অথচ ম্যাচের শুরুতেই তাদের ধাক্কা খেতে হয়েছে দলের মহাতারকা হামেস রদ্রিগেস চোটের জন্য মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায়। যে কলম্বিয়ান সুন্দরীরা হামেসের নাম লেখা জার্সি পরে এসেছিলেন মাঠে তাদের চোখে তখন জল। কলম্বিয়ার কোচ পেকারম্যান যখন আর্জেন্টিনায় নিজের দেশে কোচিং করাতেন তখন তাঁকে চাণক্য বলা হত। এ দিন তিনি শেষ আটে যাওয়ার জন্য দলে চমকপ্রদ কয়েকটি বদল করলেন। মাঝমাঠে উইলিয়াম বরিস আর জেফারসন লাম্বাকে এনে ডাবল পিভট করে দিলেন তিনি। লক্ষ্য একটাই জর্ডন হেন্ডারসনকে খেলতে না দেওয়া। তাতে কিছুটা সফল হলেও রাহিম স্টার্লিং, ট্রিপিয়াররা শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ নিয়ে গেলেন টাইব্রেকারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy