Advertisement
E-Paper

রাশিয়ার ময়দানে আজ টিনটিন বনাম অ্যাসটেরিক্স

আজ রাতে প্রথম সেমিফাইনাল। মুখোমুখি ফ্রান্স-বেলজিয়াম। ফ্রান্সের পক্ষে রয়েছে ইতিহাস। বেলজিয়ামের পক্ষে রয়েছে সাম্প্রতিক ফর্ম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ১৩:৫৬
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জাদু শরবতের তাকত বনাম মগজাস্ত্র— টিনটিন বনাম অ্যাসটেরিক্স— এই দুইয়ের লড়াই-ই আজ চাক্ষুষ করতে চলেছে দুনিয়া। যেন সেন্ট পিটার্সবার্গের বিরাট গোলপোস্টের একদিকে দুর্গ আগলে দাঁড়িয়ে বেলজিয়ামের বাসিন্দা টিনটিন আর গোলের লক্ষ্যে ফরাসি অ্যাসটেরিক্স! ভারতীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটায় রেফারির বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে যাবে যেন এই দু’জন!

বেলজিয়ামের শিল্পী জর্জ রেমি ওরফে আর্জের সৃষ্ট ‘টিনটিন’ কমিক স্ট্রিপ হিসেবে গোটা বিশ্বে বিপুল জনপ্রিয়। ১৯২৯-এ প্রথম প্রকাশের পর হু হু কেটেছে বই। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, প্রচুর প্রাণশক্তি আর গল্পের মাঝে মাঝে কমিক রিলিফের মতো ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও ক্যাসাবিয়াঙ্কার উপস্থিতি-ই মন কেড়েছে সকলের।

অন্য দিকে রনে গোসিনির লেখা এবং আলবেয়ার ইউদেরজোর ছবিতে ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত ফরাসি ভাষার জনপ্রিয় কমিক স্ট্রিপ অ্যাসটেরিক্স। এখানে রোমান সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় অ্যাসটেরিক্স ও তার বন্ধু ওবেলিক্স। ‘ড্রুড’ বা পুরোহিতের বানানো এক ধরনের জাদুর শরবতই তাদের শক্তির উৎস।

টিনটিন-অ্যাসটেরিক্সের মধ্যে জনপ্রিয়তার যুদ্ধ তো আগেই ছিল, এ বার অঙ্কের মারপ্যাঁচে এই দুই চরিত্রকেই যেন আজ লড়িয়ে দিচ্ছেন ফুটবল বিধাতা। ইতিহাস আর বর্তমানের এই যুদ্ধেরই সাক্ষী থাকতে চলেছে দুনিয়া।

এমবাপে না লুকাকু, কে বাজিমাত করবেন আজ?

ইতিহাস বনাম বর্তমান ফর্ম! চুম্বকে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম সেমিফাইনাল আবার ঠিক এটাই। ফ্রান্সের পক্ষে রয়েছে ইতিহাস। আর বেলজিয়ামের পক্ষে রয়েছে সাম্প্রতিক ফর্ম।

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা ফরাসিদের বড় শক্তি। সেবারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দিদিয়ের দেশঁই এবারের কোচ। এর পরও একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স। সেটাও বেশিদিন আগে নয়, ২০০৬ সালে। বেলজিয়াম সেখানে একবারও ওঠেনি ফাইনালে। এতদিনের সেরা সাফল্য হল, ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা। সেবার তৃতীয়ও হওয়া যায়নি। তৃতীয় স্থানের ম্যাচে হারতে হয়েছিল ফ্রান্সেরই কাছে। পরিসংখ্যান বলছে, বড় প্রতিযোগিতায় তিনবারের দেখায় ফ্রান্সই জিতেছে প্রতিবার। যার মধ্যে বিশ্বকাপেই দু’বার। ইতিহাস তাই ফরাসিদের পক্ষেই।

অন্যদিকে, বেলজিয়ামের পক্ষে রয়েছে বর্তমান ফর্ম। টানা ২৪ ম্যাচ হারেনি রেড ডেভিলসরা। ফ্রান্স অপরাজিত রয়েছে শেষ নয় ম্যাচে। সাম্প্রতিক রেকর্ডের বিচারে বেলজিয়াম এখানেই এগিয়ে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শেষ তিন ফ্রেন্ডলি ম্যাচেও অপরাজিত থেকেছে বেলজিয়াম। তিন বছর আগে শেষ দেখায় জিতেছিল তারা। এই পরিসংখ্যানও স্বস্তি দেবে ইডেন অ্যাজারদের। মোট ৭৩ বারের দেখায় এগিয়ে বেলজিয়ামই। জয় ৩০ ম্যাচে। ফ্রান্স জিতেছে ২৪ ম্যাচে।

কোনও ফুটবল বিশেষজ্ঞই অবশ্য আন্দাজ করতে পারেননি প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে এই দুই প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু দুরন্ত ফুটবলে সবাইকে চমকে দিয়েছে এই দুই দল। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছে ফ্রান্স। আর নেমারের ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছে বেলজিয়াম। দুই দলই চমকপ্রদ ফুটবল খেলছে। ফ্রান্স তবু বিশ্বকাপের শুরুতে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। বেলজিয়ামের উঠে আসা তাই আরও অবাক করে দেওয়ার মতো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রান্স বনাম বেলজিয়াম ম্যাচে মূল লড়াই হবে মাঝমাঠে। পল পোগবা, মাতুইদি আর একটু নিচে খেলা কঁতে ফ্রান্সের প্রধান ভরসা। একদম সামনে থাকবেন জিহু। এমবাপে আর গ্রিজম্যান তাঁর পিছনে। গ্রিজম্যান নিশ্চিত ভাবেই উঠে-নেমে খেলবে, বল বাড়াবে সামনে। আবার বেলজিয়ামের মাঝমাঠও কত শক্তিশালী তা বোঝা গিয়েছে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। সামনে লুকাকুকে রেখে ইডেন অ্যাজার, দে ব্রুইন থাকেন পিছনে। মাঝমাঠে ফেলাইনি, উইতসেল, শাদলি। দুর্দান্ত টক্কর হওয়ারই কথা।

এই ম্যাচ দুই কোচের শাণিত ফুটবল মস্তিষ্কের লড়াইও। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রবার্তো মার্তিনেস ফুটবলবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন লুকাকু ও দে ব্রুইনকে অন্যভাবে ব্যবহার করে। পাঁচ ম্যাচে ১৪ গোল করে ফেলেছে বেলজিয়াম। যাতে বোঝা যাচ্ছে রেড ডেভিলস-রা কতা বিপজ্জনক। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেলজিয়াম রক্ষণ ততটা শক্তপোক্ত নয়। যদিও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ভিনসেন্ট কোম্পানিরা লড়াই দিয়ে সব ঘাটতি ঢেকে দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ‘গ্রিজম্যানের থেকে এগিয়ে রাখছি লুকাকুকে’

ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁ আবার নিজে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ছিলেন। তাই সর্বোচ্চ আসরের চাপ তাঁর থেকে ভালো কেউ জানেন না। কোচ হিসেবে দলে একতা এনেছেন। ফ্রান্স মানেই অতীতে নানা বিবাদ দেখা যেত। এবার একজোট দেখাচ্ছে। নিজে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হওয়ায় দেশঁ ডিফেন্স জমাট করেছেন। আবার আক্রমণেও এনেছেন তীক্ষ্ণতা।

দুই দলের দুই গোলরক্ষকও ভরসা হয়ে উঠেছেন। ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস বনাম বেলজিয়ামের কুর্তোয়া, এই লড়াইও উপভোগ্য হতে চলেছে। গোল করার জন্য ফ্রান্সের প্রধান ভরসা এমবাপে। বেলজিয়ামের সেখানে লুকাকু। এমবাপে বনাম লুকাকুর মধ্যেও তাই চলবে একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আরও পড়ুন: ফাইনালে উঠতে আক্রমণই অস্ত্র দুই কোচের​

FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Eden Hazard
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy