Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘সেরা দু’টো দলই খেলছে ফাইনালে’

সবার কথা মাথায় রেখেই বলছি, সেরা দু’টো দলই রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে  খেলছে। না, সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দু’টো দল— বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ডের কথা আমি ভুলিনি।

ভরসা: ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মদ্রিচ। ফাইল চিত্র

ভরসা: ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মদ্রিচ। ফাইল চিত্র

জ়িকো
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:২৭
Share: Save:

এই বিশ্বকাপ কিন্তু ন্যায় বিচারের বিশ্বকাপ। খুব কম বিশ্বকাপেই এ রকম ঘটতে দেখা যায়।

সবার কথা মাথায় রেখেই বলছি, সেরা দু’টো দলই রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে। না, সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দু’টো দল— বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ডের কথা আমি ভুলিনি। এ সব ক্ষেত্রে আমার মাপকাঠি হল, মাঠের পারফরম্যান্স। আর সেই মাপকাঠিতে বিচার করে বলছি, বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ড ওদের চেয়ে ভাল দলের কাছে হেরেই ছিটকে গিয়েছে।

আমি কখনওই নায়ক পুজোয় বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, ফুটবল হল একটা দলগত খেলা আর যেখানে পুরো দলটা ভাল খেলবে, সেখানেই সাফল্য আসবে। কোনও এক জন ফুটবলারের পক্ষে একা ম্যাচ জেতানো সম্ভব নয়। আর ঠিক সে জন্যই মেসি, রোনাল্ডো, নেমার, অ্যাজার, লুকাকু এবং হ্যারি কেন-কে ছিটকে যেতে হল। অনেকেই হয়তো অন্য কথা বলতে পারেন, কিন্তু আমি বলব, যোগ্যতা ছিল না বলেই এই দলগুলো ছিটকে গিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। এ বার আঁতোয়া গ্রিজম্যান বা লুকা মদ্রিচের পালা। অন্য দিকে তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে রোমেলু লুকাকু এবং কেনের লড়াইটা হবে সোনার বুটের জন্য। সত্যি, কী চূড়ান্ত নাটকীয়তা দেখা যাচ্ছে এই বিশ্বকাপে!

প্রথম সেমিফাইনালের কথায় আসি। বেলজিয়াম কিন্তু শুরুটা ভাল করেছিল। কিন্তু ফুটবলে রণনীতি তৈরি করার সময় একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। ম্যাচটাকে প্রতি অর্ধে ১৫ মিনিটের তিনটে ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। কোচকে তার পরে ঠিক করতে হবে, কোন পর্বে আক্রমণে যেতে হবে, কোন পর্বে একটু রক্ষণাত্মক খেলতে হবে। আমার ধারণা, বেলজিয়ামের কোচ এবং সহকারী কোচ রবের্তো মার্তিনেস এবং থিয়েরি অঁরি একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছিলেন। তাই খেলার গতির বিরুদ্ধে গোলটা খাওয়ার পরে বেলজিয়ামের মধ্যে আর সে রকম রসদ ছিল না পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার। ফ্রান্সও খুশি মনে রক্ষণ সামলানোর ওপর জোর দিয়েছে।ফুটবলে কিন্তু শুধু প্রতিভা থাকলে বা বল দখলে এগিয়ে থাকলেই ম্যাচ জেতা যায় না। অনেক কিছুই নির্ভর করে কী ভাবে রণনীতি তৈরি হচ্ছে, তার ওপর। আর এখানেই কোচের ভূমিকা। ঠিক মতো বিশ্লেষণ করে, বিপক্ষের শক্তি মেপে ছক তৈরি করতে হয়। বিপক্ষের ফাঁদে পা দিয়ে, প্রত্যাশিত ফুটবল খেললে কোনও লাভ হয় না। ইংল্যান্ড যেন ঠিক সেই ভুলটাই করল। আমি বুঝলাম না, ৬৫ মিনিটের পরে ঠিক কী হল। ওই সময়ের পর থেকে ইংল্যান্ড ভীষণ রকম গুটিয়ে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা কোনও ভাবে সময় কাটিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু তখনও দু’টো পর্ব (১৫ মিনিটের হিসেবে) বাকি ছিল। ইংল্যান্ড যে ভাবে শুরু করেছিল, যে ভাবে প্রথমে গোল দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল, তার পরে ওদের উচিত ছিল, আরও একটা গোল দিয়ে ম্যাচটা শেষ করে দেওয়া। কিন্তু গ্যারেথ সাউথগেটের দল সেই রাস্তায় হাঁটল না।

প্রথম সেমিফাইনালে মাঝমাঠের রাশ প্রথম দিকে বেলজিয়ামের হাতেই ছিল। উল্টো দিকে রক্ষণে জমিয়ে বসে ফ্রান্স ওদের খেলতে দেয়। কেভিন দে ব্রুইন ও অ্যাজার যাতে প্রতি-আক্রমণে উঠতে না পারে, সেটা দেখাই ছিল ফ্রান্সের লক্ষ্য। এটাকে কিন্তু আমি নেতিবাচক ফুটবল বলব না। ফ্রান্সও সময় বুঝে আক্রমণে উঠেছে। পল পোগবা যে পাসটা কিলিয়ান এমবাপেকে বাড়িয়েছিল, সেটা থেকে গোল হতেই পারত। থিবো কুর্তোয়া সতর্ক থাকায় বেঁচে যায় বেলজিয়াম।

আরও পড়ুন: এক ঝাঁক উদ্বাস্তুর লড়াইয়ের ছবিটাই রাশিয়ার বড় প্রাপ্তি

দিদিয়ে দেশঁর কৌশলটাও খুব পরিষ্কার ছিল। খেলার গতি কমিয়ে, মাঝমাঠে ভিড় বাড়িয়ে, বেলজিয়ামকে ওয়ান টাচ খেলা থেকে আটকে দেওয়া। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ঠিক এই ছকটাই নিয়েছিল বেলজিয়াম। সেমিফাইনালে ওদের ওষুধটাই বেলজিয়ামকে ফেরত দিল ফ্রান্স। বেলজিয়াম প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল ১৬ মিনিটে। যখন দে ব্রুইনের পাস থেকে বল পেয়ে অ্যাজার একটুর জন্য বাইরে মারে। এর কয়েক মিনিট পরে আবার একটা সুযোগ তৈরি করেছিল অ্যাজার। যখন বাঁ দিকে থেকে এসে দুরন্ত একটা শট নিয়েছিল গোল লক্ষ্য করে। অল্পের জন্য বলটা ভারান-কে ছুঁয়ে বাইরে চলে যায়। এই দু’টো ঘটনার মধ্যেই সম্ভবত ইঙ্গিত ছিল যে, দিনটা বেলজিয়ামের হতে যাচ্ছে না।

আমি দু’টো ব্যাপারের ওপর আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এক, এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বেশির ভাগ গোলই এসেছে সেট পিস থেকে। শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ফিল্ড গোল প্রায় হয়নি (দয়া করে পানামা এবং টিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে গোলগুলো ধরবেন না)। কাউকে আঘাত দিতে চাই না, কিন্তু এই তথ্যটা অনেক কিছু বলে দিচ্ছে ইংল্যান্ডের নতুন ‘পোস্টার বয়েজ’ হ্যারি কেন, জেসে লিনগার্ড, ডেলে আলিদের সম্পর্কে। দুই, ক্রোয়েশিয়া এই নিয়ে পর পর তিনটে ম্যাচ খেলল, যেগুলো অতিরিক্ত সময়ে গিয়েছে। এই ব্যাপারটা কিন্তু ফ্রান্সের পক্ষে যেতে পারে। একটা দিন বাড়তি বিশ্রাম পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে বেশি তরতাজা থাকবে ফ্রান্স। কিন্তু তা সত্ত্বেও মদ্রিচরা যদি আর একটা ম্যাচ জিততে পারে, তা হলে আমরা নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাব। দেখা যাক কী হয়।

তবে লেখার শেষে আরও এক বার বলতে চাই, ফাইনালের দু’টো দলকে নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। যোগ্য দলই ফাইনালে গিয়েছে। আর সেটাই হল আসল কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE