রাজকোটে প্রথম দিন পৃথ্বী শ-র টেস্ট অভিষেক দেখা যদি হয় এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয় দিন আরও একটা দুর্দান্ত ইনিংস খেলে মন ভরিয়ে দিলেন বিরাট কোহালি। রাজকোটের কঠিন পরিবেশ অনুযায়ী এক কার্যকরী ইনিংস দেখালেন ভারত অধিনায়ক। যাঁর দ্রুততা ও ধারাবাহিকতা অবিশ্বাস্য।
৬৬ ইনিংসে ২৪টি শতরান করেছিলেন স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। যা দ্রুততম। বিরাটের সেই ২৪তম শতরান করলেন ১২৩ ইনিংসে। ব্র্যাডম্যানের পরেই ভারত অধিনায়ক। চলতি বছরে এটি বিরাটের চতুর্থ শতরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নিজের দ্বিতীয় শতরান করার ফাঁকে চলতি বছরে এক হাজার রানও পূর্ণ করে নিলেন। গত বছর বিরাট টেস্ট ক্রিকেটে করেছিলেন ১০৫৯ রান। তার আগের বছর ১২১৫ রান। ওয়ান ডে ও টেস্ট মিলিয়ে এই মুহূর্তে বিরাটের শতরানের সংখ্যা ৫৯। টেস্টে ২৪। একদিনের ক্রিকেটে ৩৫। যে অবিশ্বাস্য গতিতে বিরাট এগোচ্ছেন, তাতে দ্রুত সচিনের একশো সেঞ্চুরির মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলতেই পারেন তিনি। আর সে জন্যও হয়তো বেশি সময় লাগবে না ওঁর।
বিরাট এ দিন শতরান করলেন ধীর গতিতে। স্ট্রেট ড্রাইভে প্রথম চার মারলেন ১৭টি বল খেলার পরে। মারমুখী মেজাজে সে ভাবে ওঁকে দেখা যায়নি। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। বিরাট ও ঋষভ পন্থ জুটিতে ১৩৩ রান তুলেছে ভারত। যার মধ্যে ঋষভ করেন ৯২ রান। বিরাটের সংগ্রহ ৩৭ রান। এর কারণ, হিসেবে আমার মনে হয়, বিরাট কোহালির মতো ব্যাটসম্যান চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন সব সময়। এটাই যদি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় হত, তা হলে হয়তো ফের সেই আক্রমণাত্মক বিরাটকেই দেখা যেত। একেই রাজকোটের গরম ও নিষ্প্রাণ উইকেট, তার ওপর এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই মোটিভেশন না থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বুঝে কী দায়িত্বসম্পন্ন ব্যাটিং-ই না করলেন ভারত অধিনায়ক! এই ইনিংস দেখে পৃথ্বীর মতো ভবিষ্যতের তারকাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
শুক্রবার রাজকোটে খেলা দেখার সময় এক বন্ধু রসিকতা করে বলছিলেন, যে কোনও টেস্ট ম্যাচে প্রথম দু’দিনে ব্যাটে ও বলে নজর কাড়তে সচরাচর দেখা যায়, দু’টো দলের ক্রিকেটারদের। কিন্তু ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টেস্টে এখনও পর্যন্ত ব্যাটে ও বলে কৃতিত্ব দেখাল একটাই দল—ভারত।
আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন এই ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছিলেন গ্রিনিজ, হেইন্স, রিচার্ডস, লয়েডের মতো ব্যাটসম্যানরা। সঙ্গে মার্শাল, গার্নার, রবার্টস, হোল্ডিংদের পেস ব্যাটারি! সেখানে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিছকই একটা ক্লাব দলের মতো ক্রিকেটার নিয়ে এসেছে এ বার। যে দলের সঙ্গে আমাদের সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনাই হয় না।
দ্বিতীয় দিনে বিরাট কোহালি ছাড়াও সেঞ্চুরি করলেন রবীন্দ্র জাডেজাও (১৩২ বলে ১০০ অপরাজিত)। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে সমান কার্যকরী। এ বার সেই পারফরম্যান্স টেস্ট ক্রিকেটেও তুলে এনেছেন জাডেজা। টেস্ট ক্রিকেটে ওঁর লড়াইটা আর অশ্বিনের সঙ্গে। কিন্তু এ ভাবে টেস্ট ম্যাচে ব্যাট করে গেলে দ্রুত অলরাউন্ডার হিসেবে দলে জায়গাটা পাকা করে নেবেন জাডেজা।
সব শেষে আসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সম্পর্কে। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ছাড়া সর্বোচ্চ মানের বোলারই চোখে পড়ল না। জেসন হোল্ডার ও কেমার রোচ এই টেস্টে না থাকায় দলটার বোলিং আক্রমণ নির্বিষ। দেবেন্দ্র বিশুর এক মাত্র অস্ত্র মাঝে মাঝে গুগলি দেওয়া। আর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্ট ম্যাচে দাঁড়ানোর মনোভাবটাই তো নেই।