Advertisement
E-Paper

ময়দানে খেলার মাঝেই মৃত্যু তরুণ ক্রিকেটার সোনু যাদবের

ইকবালপুর লেনের ৪২/এইচ/৪০ বাড়ির বাসিন্দা সোনু বুধবার সকালে বাড়ি থেকে খেলতে বেরিয়েছিলেন ময়দানের উদ্দেশে। আসার সময় পাড়ার বন্ধুদের বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার চুটিয়ে হোলি খেলবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫০
 মর্মান্তিক: বাইশ বছরের সোনুর মৃত্যুতে শোক ময়দানে। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: বাইশ বছরের সোনুর মৃত্যুতে শোক ময়দানে। নিজস্ব চিত্র

খেলার মাঝেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন কলকাতা ময়দানের তরুণ ক্রিকেটার সোনু যাদব। বুধবার সকালে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বাটা ক্লাবের মাঠে।

ইকবালপুর লেনের ৪২/এইচ/৪০ বাড়ির বাসিন্দা সোনু বুধবার সকালে বাড়ি থেকে খেলতে বেরিয়েছিলেন ময়দানের উদ্দেশে। আসার সময় পাড়ার বন্ধুদের বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার চুটিয়ে হোলি খেলবেন। কিন্তু বালিগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের বাইশ বছরের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের সেই ইচ্ছা আর পূরণ হল না।

বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় ময়দানে বাটা মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সোনু। স্থানীয় ক্রিকেটে দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব বালিগঞ্জ স্পোর্টিংয়ে খেললেও এ দিন ওই ক্লাবের কোনও ম্যাচ বা অনুশীলন ছিল না। সোনুর সঙ্গেই বাটা মাঠে হাজির ছিলেন তাঁর বন্ধু নীরজ কুমার। তিনি পরে বলেন, ‘‘সকালে যখন মাঠে এল, তখনও কিছু বুঝতে পারিনি। লস্যি খেয়ে ব্যাট করতে গিয়েছিল। তখন ১৪ ওভার চলছে। আউট হয়ে ফিরে এসেই মাঠের বাইরে পড়ে যায় সোনু। চোখেমুখে জল দিতে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু তার পরেই আবার পড়ে যায় মাটিতে। সে সময় ওর চোখ বুজে গিয়েছিল। ডাকলে সাড়া দিচ্ছিল না।’’ এর পরেই দ্রুত ট্যাক্সিতে তুলে সোনুকে নিয়ে যাওয়া হয় সিএবি-র মেডিক্যাল ইউনিটে। সেখানে হাজির চিকিৎসক ডা. আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘সিএবি-তে নিয়ে আসার পরে ওই ক্রিকেটারের হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই দ্রুত ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।’’

এর পরেই সোনুকে তাঁর বন্ধুরা সিএবি-র অ্যাম্বুল্যান্সেই নিয়ে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক ভাবে, তাঁদের অনুমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই হয়তো মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ দিন ময়নাতদন্ত না হওয়ায় বুধবার রাতে হাসপাতালের মর্গেই রাখা হয়েছে মৃত ক্রিকেটারকে।

খবর পেয়েই দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন প্রয়াত এই ক্রিকেটারের বাবা রমেশ যাদব ও দুই ভাই সন্দীপ ও অমরজিৎ। ছুটে আসেন বালিগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সচিব আশিস সেনগুপ্ত ও কোচ উদয়ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্লাবের কয়েক জন ক্রিকেটার। হাসপাতাল চত্বরেই ঘটনার আকস্মিকতায় কেঁদে ফেলেন তাঁরা। ইকবালপুরের বাসিন্দা হলেও সোনুদের আদি বাড়ি বিহারের সিওয়ানে। খবর পেয়ে সেখান থেকে কলকাতার দিকে রওনা দেন সোনুর মা লক্ষ্মীদেবী। হাসপাতালেই পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, ‘‘সিএবি-র মেডিক্যাল ইউনিটে যখন কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না, তা হলে সেখানে গিয়ে সময় নষ্ট করা হল কেন? কেন প্রথমেই হাসপাতালে আনা হল না?’’

এ দিন বিকেলে ইকবালপুরে সোনুর পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল গোটা এলাকা শোকে মুহ্যমান। এক চিলতে ঘরের খাটে সোনুর ক্রিকেট সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখা। পাড়ার লোকেদের দাবি, কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না সোনুর। ছোট থেকেই খেলাধুলো করতেন বলে বাবা অর্থকষ্টের মধ্যেও ক্রিকেট খেলা শিখিয়েছিলেন তাঁকে। এ বারই খিদিরপুর কলেজ থেকে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তিনি।

সিএবির যুগ্ম সচিব অভিষেক ডালমিয়া দুঃখপ্রকাশ করেন এই ঘটনায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মাঠে এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আমরা পর্যবেক্ষক ও আম্পায়ারদের সিপিআর (কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন) প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ ছাড়াও ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার চিন্তা-ভাবনাও করছে সিএবি। ’’

Death Cricket Cricketer Maidan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy