প্র্যাকটিসে হঠাৎ চোট কাতসুমির। শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে কাতসুমির। বরফ হাতে ছুটছেন স্বয়ং ওডাফা ওকোলি!
ক্রিস্টোফারের পরের পর ভুলে চোখে-মুখে কোনও বিরক্তির ছাপ নেই। উল্টে একবারের জায়গায় দশবার তাঁকে শুধরে দিচ্ছেন করিম বেঞ্চারিফা।
ইচেকে কাটিয়ে গোল করেও উচ্ছ্বাস নেই ওডাফার। উল্টে কোথায় ভুল হচ্ছে, সেটা আবার তাঁর দেশওয়ালি বন্ধুকে আলাদা করে ডেকে দেখিয়ে দিচ্ছেন বাগানের গোলমেশিন!
ইদানিং মোহনবাগানের দলগত সংহতি নিয়ে ময়দানে নানা বিতর্ক হলেও, শনিবারের দৃশ্যপটে তার ছিটেফোঁটা প্রভাব নেই। বরং রবিবারের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইউনাইটেড ম্যাচের আগে বাগানের কোচ-অধিনায়ক যেন প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকায়।
রবিবার ম্যাচের পরেই সাত দিনের ছুটিতে সিঙ্গাপুর উড়ে যাচ্ছেন করিম। তবে বিমানে পা দেওয়ার আগে বাগানের অবনমন-ভূত তাড়াতে মরিয়া মরক্কান কোচ। আই লিগের যা পরিস্থিতি তাতে, চ্যাম্পিয়নশিপের চিত্রটা পরিষ্কার না হলেও, কোন দলে অবনমনের আশঙ্কা জোরালো হবে, সেটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে ‘সুপার সানডে’-তে। করিম তাই ইউনাইটেড-বধ করে বাগানকে ‘সুরক্ষিত দেশের বাসিন্দা’ বানিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে চাইছেন। যাতে শুধু মোহনবাগানই নয়, নিজেও চাপমুক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। বাগান কোচের কথায়, “অবনমনের বোঝা নিয়ে আর শেষ ম্যাচ পর্যন্ত ঘুম নষ্ট করতে চাই না। যে করেই হোক রবিবার তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করতে চাই। যাতে নববর্ষের উৎসবটা বাগান-সমর্থকরা আনন্দে কাটাতে পারে।”
সবচেয়ে মজার ব্যাপার, অবনমন-আশঙ্কার মধ্যেই মোহনবাগানের সামনে আবার ইতিহাস গড়ার হাতছানি। যা শুনলে অনেকেই হয়তো আঁতকে উঠতে পারেন! কিন্তু ঘটনা হল, রবিবারের ম্যাচে ইউনাইটেডকে তিন গোলে হারাতে পারলেই পাঁচশো গোলের ক্লাবে নাম লিখিয়ে ফেলবে মোহনবাগান। আই লিগে যে নজির গড়ার কৃতিত্ব শুধু চার্চিল (৬১৮), ইস্টবেঙ্গল (৫৬৮) ও ডেম্পোর (৫২৭) আছে। মোহনবাগান এমন একটা ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে শুনে ওডাফার মন্তব্য, “ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে আমি সব সময়ই দলকে এগিয়ে রেখেছি। তিন গোল আমার পা থেকে না এলেও, অন্যদের দিয়ে করানোর চেষ্টা করব।”
তবে বাগানের অবনমন-মুক্তি আর ইতিহাস গড়ার রাস্তায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে চৈত্রের চড়া গরম। সমস্যাটা অবশ্য দু’দলেরই। ভরা দুপুরে ম্যাচ খেলা তো আর মুখের কথা নয়। তাই করিম ও ইউনাইটেড কোচ সুব্রত দু’জনেই একমত, “এত গরমে উচ্চমানের খেলা সম্ভব নয়। রবিবারের ম্যাচে ক্লান্তিকে যে হার মানাতে পারবে, সেই জিতবে।” কিন্তু গরমের পাশাপাশি করিমের আরও একটা বড় চিন্তার নাম যে সুব্রত ভট্টাচার্য। ময়দানে মরক্কান কোচের সবচেয়ে বড় সমালোচক! আর হয়তো সে জন্যই আই লিগের প্রথম পর্বে এলকোর ইউনাইটেডকে ৪-০ হারালেও রবিবারে ইউনাইটেডকে অন্য দৃষ্টিতে দেখছেন করিম। “৪-০ হোক কিংবা ১-০, আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়া নিয়ে কথা। তবে কল্যাণীতে এত সহজে সেটা পাওয়া যাবে না।” সুব্রতর নাম না করেই যুক্তি বাগান কোচের।
মোহনবাগানের মতোই অবনমন-আশঙ্কা বেলোদের শিবিরেও। ২২ ম্যাচে যেখানে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দশে ওডাফারা, সেখানে এক ম্যাচ কম খেলে ২২ ইউনাইটেড। সুব্রতর আরও অসুবিধা, লালকমল-তপনদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের চোট। তুলনায় এখন বাগানে সে রকম কোনও চোট-আঘাতের সমস্যা নেই। সুব্রত বলছিলেন, “ওডাফাকে আটকাতে পারলেই আর কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু ওকে আটকানোর জন্য যে মাল-মশলার দরকার, সেটা আমার টিমে কোথায়? তবু শেষ মিনিট পর্যন্ত হাল ছাড়ব না।” প্রসঙ্গত, আই লিগে করিম বনাম সুব্রতর পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, মোট ৯ ম্যাচ ৫ বার জিতেছে মরক্কান কোচ। দু’বার বাগানের ‘ঘরের ছেলে’ বাবলু। বাকি দু’ম্যাচ ড্র। সব মিলিয়ে কল্যাণীতে আজ অবনমন-বাঁচানোর লড়াই জমজমাট।
করিম জিতলে সুরক্ষিত বাগান। সুব্রত জিতলে ইউনাইটেড।
রবিবারে আই লিগ
• মোহনবাগান : ইউনাইটেড স্পোর্টস (কল্যাণী, ২-৩০)
• মহমেডান : রাংদাজিদ (যুবভারতী, ৩-০০)
• মুম্বই এফসি : চার্চিল ব্রাদার্স (পুণে, ৭-০০)
• স্পোর্টিং ক্লুব : সালগাওকর (মারগাও, ৫-০০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy