খোদ আইসিসি-র দরবারে এ বার নালিশ জানানো হলেও নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের গতি অব্যাহত। সরকারি ভাবে বিসিসিআই-এর কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকলেও আইসিসি-র প্রথম চেয়ারম্যান পদের দিকে এগিয়ে চলেছেন তিনি। দুবাইয়ে দু’দিনের সভায় আইসিসি বোর্ডও শ্রীনির বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে কোনও আপত্তি জানাল না। এখন জুনে মেলবোর্নে আইসিসি-র বার্ষিক কনফারেন্সে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার অপেক্ষায় শ্রীনি। তা পেলেই বসে পড়বেন ক্রিকেট দুনিয়ার হট সিটে। আদালত ছাড়া আর কারও তাঁকে রোখার ক্ষমতা নেই।
শ্রীনিকে আইসিসি-র সভায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য বিসিসিআই-এর বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছিলেন যিনি, সেই আদিত্য বর্মা এ দিন আবার আইসিসি-র কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট অ্যালান আইজাকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে আইসিসি বোর্ড থেকে শ্রীনিকে বরখাস্ত করার অনুরোধ জানান আদিত্য। আইসিসি প্রেসিডেন্ট এই চিঠি পেয়েছেন কি না, তা জানা না গেলেও এ দিন আইসিসি বোর্ডের সভায় শ্রীনির চেয়ারম্যান হওয়ার প্রশ্নে কোনও আপত্তি ওঠেনি। বরং সিদ্ধান্ত হয়, ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে বোর্ডের সভায় যে প্রস্তাবগুলি নেওয়া হয়েছিল, যেগুলির জন্য গঠনতন্ত্রে সংশোধনের কোনও প্রয়োজন নেই। সে সব সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হবে এবং জুনে কাউন্সিল মিটিংয়ে সেগুলি পেশ করা হবে। এর মধ্যে যে প্রস্তাবগুলির জন্য গঠনতন্ত্রে সংশোধন প্রয়োজন, সেগুলি জুনের ওই সভায় শীলমোহর লাগানোর জন্য পেশ করা হবে। শ্রীনিবাসনের চেয়ারম্যান হওয়া এই দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত প্রস্তাবগুলির মধ্যেই পড়ে।
অর্থাৎ শ্রীনিবাসনের চেয়ারম্যান হওয়ার রাস্তা জুনের আগে একশো ভাগ পরিষ্কার হচ্ছে না। যদি জুনের সভার আগে সুপ্রিম কোর্ট শ্রীনির বিরুদ্ধে কোনও রায় দেয়, তা হলে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার গঠনতন্ত্র ও কোড অব এথিক্স অনুযায়ী শ্রীনিকে আইসিসি-র বোর্ড থেকে সরে যেতে হবে। চেয়ারম্যান হওয়া তো দূরের কথা। কাউন্সিল সভায় যদি কোনও পূর্ণ সদস্য দেশের প্রতিনিধি আপত্তি তোলেন, তা হলে অবশ্য তাঁকে জবাবদিহি করতে হতে পারে। মুচলেকাও দিতে হতে পারে। তবে দোষী সাব্যস্ত না হলে কোনও ভাবেই তাঁকে আটকানো যাবে না।
এ দিন আদিত্য বর্মা আইসিসি-র ওই দু’টি ধারা (কোড অব এথিক্সের ২.১ ও গঠনতন্ত্রের ৪.১১ এফ) উদ্ধৃত করেই অ্যালান আইজ্যাককে অনুরোধ করেন, “আইসিসি-র নিয়ম অনুযায়ী এবং ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তী রায়কে সম্মান জানাতে শ্রীনিবাসনকে বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দিতে না দেওয়ার অনুরোধ করছি।” তাতে আখেরে কোনও লাভ হয়নি। কারণ, যতক্ষণ না শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে, ততক্ষণ আইসিসি থেকে তাঁকে কেউ সরাতে পারবেন না। ওই দুই ধারাতেও সে রকমই উল্লেখ রয়েছে।
আইসিসি-র সভায় এ দিন টেস্ট চ্যালেঞ্জ প্রবর্তন করার সিদ্ধান্ত হল। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সবার নীচে থাকা দল ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপজয়ী দল প্রতি চার বছর অন্তর চার টেস্টের সিরিজ খেলবে। প্রথমটি হবে ২০১৮-য়। ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম বা এফটিপি তুলে দেওয়ার যে প্রস্তাব হয়েছিল, তাতেও বদল আনার নতুন প্রস্তাব হল এ দিন। ২০২৩ পর্যন্ত এফটিপি প্রচলনের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে জুনের সভায় সিদ্ধান্ত হবে। ২০১৬-য় ভারতে যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে, তার ফর্ম্যাটেও কোনও বদল না করার সুপারিশ হল এ দিন। আইসিসি-র ক্রিকেট কমিটিতে গ্যারি কার্স্টেনের জায়গায় অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেম্যান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ওটিস গিবসনকে আনারও সিদ্ধান্ত হল এ দিন।