Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আফ্রিদি বিপজ্জনক, কিন্তু আজ ভারতই ফেভারিট

বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারত নামছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ভাবনাটা থেকে কত রকম সম্ভাবনা উঠে আসে! এই লড়াইটা ক্রিকেটে হালফিলে খুব বিরল। কিন্তু দুটো টিমেই যা প্রতিভা, ভাবতে বসলে মাথাটা কেমন গুলিয়ে যায়। এই যুদ্ধে যে টিম হারবে, তাদের মোকাবিলা করতে হবে ক্ষুব্ধ ভক্তদের, হয়তো গোটা দেশেরই। রাজনৈতিক নেতাদেরও। এই যুদ্ধে হারানোর এত কিছু আছে যে, দুটো টিমই জেতার একটা অদম্য খিদে নিয়ে নামবে।

রিচার্ড হ্যাডলি
শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারত নামছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ভাবনাটা থেকে কত রকম সম্ভাবনা উঠে আসে! এই লড়াইটা ক্রিকেটে হালফিলে খুব বিরল। কিন্তু দুটো টিমেই যা প্রতিভা, ভাবতে বসলে মাথাটা কেমন গুলিয়ে যায়। এই যুদ্ধে যে টিম হারবে, তাদের মোকাবিলা করতে হবে ক্ষুব্ধ ভক্তদের, হয়তো গোটা দেশেরই। রাজনৈতিক নেতাদেরও। এই যুদ্ধে হারানোর এত কিছু আছে যে, দুটো টিমই জেতার একটা অদম্য খিদে নিয়ে নামবে।

দুটো টিমের কেউই হারের লজ্জার সামনে পড়তে চাইবে না। কিন্তু প্লেয়াররা যদি নিজেদের সেরাটা দিয়ে জেতার সব রকম চেষ্টা করেও হারে, তা হলে সেই পরাজয়ে কোনও লজ্জা আমি দেখি না। খেলাধুলোয় তো হার-জিত লেগেই আছে। মাঝে মাঝে হারের ব্যবধান এত কম থাকে যে, ব্যাট বা বল হাতে একটা দারুণ পারফরম্যান্স বা ফিল্ডিংয়ের দুর্দান্ত একটা নিদর্শন চূড়ান্ত ফলাফল ঠিক করে দিতে পারে।

তবে ক্রিকেট যতই খেলা হোক, এই বিশ্বকাপ ম্যাচটা দুটো টিমের কাছে যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক, নির্দিষ্ট এই ম্যাচটার সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে। যেমন, গোটা একটা দেশের গর্ব। যেমন, জয়ের সম্মান আর গরিমা। আমার মনে হয়, দুটো টিমই একে অন্যের ক্রিকেটারদের সম্মান করে। অনেকে হয়তো বন্ধুও। তবে ম্যাচে লড়াইটা দারুণ হবে। আর আশা করব সেটা ক্রিকেটের স্পিরিটে খেলা হবে।

অতীতে ভারত-পাক কত বার একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলেছে, কে সবচেয়ে বেশি জিতেছে এ সবের কোনও মানে নেই। আসল হল, নির্দিষ্ট দিনের পারফরম্যান্স। এই ম্যাচের আর একটা গুরুত্ব হল, কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য দু’পয়েন্ট তোলা। এই ম্যাচ যারা জিতবে, তাদের শুরুটা তো ভাল হবেই। সঙ্গে একটা ছন্দও পেয়ে যাবে, তাতে টিমের আত্মবিশ্বাসটা তৈরি হয়। আর যারা হারবে, তারা প্রথমেই বেশ পিছিয়ে যাবে। সাতটা টিমের দুটো গ্রুপ থেকে শেষ আটের আগে ছিটকে যাবে তিনটে করে টিম। টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে তাই জিতে পয়েন্ট তুলে রাখা খুব দামি একটা ব্যাপার।

দুটো টিমের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সব প্লেয়ারের পক্ষেই খুব শক্তিশালী মোটিভেশন হিসেবে কাজ করবে। ম্যাচটা যদিও দেশ বনাম দেশ, তবু কয়েকটা ব্যক্তিগত যুদ্ধ নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ থাকবে। যেমন বিরাট কোহলি বনাম ইউনিস খান, রোহিত শর্মা বনাম শেহজাদ, রায়না বনাম আফ্রিদি। সব প্লেয়ারই চাইবে বাকিদের চেয়ে বেশি ভাল পারফর্ম করতে, বাকিদের টপকে যেতে। আমাকে সবার চেয়ে ভাল হতে হবে, এই ইগোটাও কাজে আসবে। ব্যক্তিগত রেটিং, বাকিদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকার তৃপ্তি, এগুলোও কিন্তু সেরা পারফরম্যান্সটা বের করে আনে।

আমি এটা ভাল বুঝি কারণ আমি নিজেও লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে নামতাম। অনেক কিছুই আমাকে মোটিভেট করত। যার মধ্যে একটা হল ব্যক্তিগত স্ট্যাটিস্টিক্স। যা আমাকে নিজের পারফরম্যান্সের উপর ফোকাস করতে সাহায্য করত। যখন আমি উইকেট পাচ্ছি, তখন সব সময় ভাবতাম যে এটা আমার টিমকেও সাহায্য করছে। ভাবতাম, আমি আমার কাজটা ঠিকঠাক করে যাচ্ছি। যখন উইকেট পেতাম না বা খারাপ বল করতাম, তখন ছন্দ ফেরানোর প্রচণ্ড একটা চাপ থাকত। মিডিয়া, গ্যালারি আর ভক্তদের চাপ আমাকে বুঝিয়ে দিত, ফর্মে ফেরার জন্য হাতে সময় খুব কম। এটা কিন্তু প্লেয়ারের উপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। তার সামনে দুটো রাস্তা থাকে এক, চ্যালেঞ্জটা মেনে নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করা। আর দুই, সেটা না করতে পেরে টিম থেকে বাদ যাওয়া।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

এই ম্যাচটা শুরু হওয়ার আগে প্লেয়ার, ম্যানেজমেন্ট আর সাপোর্ট স্টাফের প্রচুর নার্ভাস এনার্জি খরচ হবে। সবাই নিজেদের মনের ভেতর খোঁজাখুঁজি করে নিজেদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করবে যে, টিম আর ব্যক্তিগত প্লেয়ারদের প্রস্তুতি একদম নিঁখুত হয়েছে। মনে-মনে প্রশ্নও উঠবে যে, এর চেয়েও ভাল করে কি কিছু করা যেত? সাফল্যের চিন্তা সবারই মাথায় ঘুরপাক খাবে। কিন্তু কেউ ভুল করলে তার সম্ভাব্য ফল হতে পারে ব্যর্থতা। প্লেয়ারদের পক্ষে সত্যিই খুব কঠিন সময়।

এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাই মানসিক কাঠিন্য খুব জরুরি। এ সব বাধাবিপত্তি কাটিয়ে একটা ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিতে। বা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে বিপক্ষকে আর ফিরতে না দিয়ে। গুরুত্বহীন সময়েও এই ম্যাচটায় প্রচণ্ড চাপ থাকে। তবে দর্শকদের কাছে সব সময়ই ভারত-পাক যুদ্ধ উপভোগ্য। যারা ক্রিকেট দেখে, তারা সবাই জানে দু’দেশের কাছে এই ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটার উপর সব কিছু নির্ভর করে থাকে।

তা এই ম্যাচের আগে একেবারেই ফর্মে নেই ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শেষ দু’মাসে ওদের কোনও জয় নেই। বিশ্বকাপের ওই একটা প্রস্তুতি ম্যাচ বাদ দিলে। টিমের আত্মবিশ্বাস হয়তো এই মুহূর্তে কম। কিন্তু এটা বিশ্বকাপ, আর ভারত গত বারের চ্যাম্পিয়ন। সব প্লেয়ার, সব টিম এই টুর্নামেন্টটা শুরু করে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে, শূন্য রান আর উইকেট নিয়ে। এখানে সবাই সমান। এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কোথায় কী হয়েছে, এখন সে সব অর্থহীন। এখন সময় হল নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে পারফর্ম করার। এখন সময় হল নায়ক হয়ে ওঠার, বিশ্বমঞ্চে নিজের আবির্ভাব ঘোষণা করার, আর নিজের প্লেয়ার রেটিং বাড়িয়ে নেওয়ার।

ভারতীয় টিমে কত জন ম্যাচ জেতানো প্লেয়ার! ওদের ব্যাটিং দুর্দান্ত শক্তিশালী। বাকি টিমগুলোর চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। রোহিত, ধবন, কোহলি, রাহানে, রায়না, ধোনি সবাই দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান। ওদের রেকর্ড প্রমাণ করে দিচ্ছে, এই বিশ্বকাপে ওরা প্রচুর রান করবে। ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, অস্ট্রেলীয় পরিবেশে ওদের বোলাররা যথেষ্ট ধারাবাহিক না। ব্যাটসম্যানদের আউট করতে গেলে বলটা যে লাইন-লেংথে ফেলে যেতে হবে, সেটা ওরা করতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। গত কয়েক মাসে এই ব্যাপারটা ওদের খুব ভুগিয়েছে।

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ফর্মও দারুণ কিছু নয়। শেষ বারোটা ওয়ান ডে-তে এসেছে মাত্র দুটো জয়। তার উপর কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার চোটের জন্য টিমে নেই। আর সইদ আজমলের না থাকাটা ওদের কাছে বিরাট ধাক্কা। আজমল বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার আর ম্যাচউইনার। এই ম্যাচে পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার শাহিদ আফ্রিদি। ওয়ান ডে-তে চারশো উইকেট আর ৮০০০ রানের প্রথম মালিক হওয়ার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আফ্রিদি। ও সত্যিই দুর্দান্ত পারফর্মার আর ম্যাচউইনার। ওর দ্রুত লেগ ব্রেক আর গুগলি তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আর ওর পাওয়ার হিটিং মাত্র কয়েকটা ওভারে ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারে, পাকিস্তানকে জিতিয়ে দিতে পারে। যে কোনও বিপক্ষের কাছে ও বিপজ্জনক। ওর খেলায় বিনোদনের প্রচুর উপাদান আছে। আর আফ্রিদি নিজেও প্রচারের আলোটা উপভোগ করে। বিশ্বকাপই তো ওর পারফর্ম করে দেখানোর সেরা মঞ্চ!

অ্যাডিলেড ওভাল মাঠটা আগে ছবির মতো সুন্দর ছিল। এখন নতুন গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড হয়ে যাওয়ায় একেবারে রাজকীয় স্টেডিয়াম হয়ে গিয়েছে। যা শুনছি, ম্যাচটা হাউসফুল হবে। প্রচুর দেশপ্রেমী দর্শক থাকবে, যাদের চিত্‌কার ওদের নায়কদের তাতিয়ে দেবে। তবে হালফিলে ফর্ম যা-ই থাক, বহু প্রতীক্ষিত এই ম্যাচে ভারতই কিন্তু ফেভারিট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

world cup 2015 afridi pakistan richard hadlee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE