Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
গ্লাসগোয় শেষ দিন

এত দিনে গলা থেকে কাঁটাটা নামল: কাশ্যপ

সিঙ্গাপুরের প্রতিদ্বন্দ্বীর রিটার্নটা কোর্টের বাইরে পড়তেই আনন্দে লাফানো শুরু। লাফাতে লাফাতেই জার্সি খুলে তাতে চুমু খাওয়া। যখন আবিষ্কৃত হল তাঁর কাঁধ জুড়ে জাতীয় পতাকার ত্রিবর্ণে রঞ্জিত অভিনব ট্যাটু। কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দকে জড়িয়ে ধরা। দর্শকদের কাছ থেকে তেরঙা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দৌড়।

সোনাজয়ী কাশ্যপ এবং ব্রোঞ্জজয়ী গুরুসাইকে (ডান দিকে) নিয়ে কোচ গোপীচন্দ।

সোনাজয়ী কাশ্যপ এবং ব্রোঞ্জজয়ী গুরুসাইকে (ডান দিকে) নিয়ে কোচ গোপীচন্দ।

সংবাদ সংস্থা
গ্লাসগো শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

সিঙ্গাপুরের প্রতিদ্বন্দ্বীর রিটার্নটা কোর্টের বাইরে পড়তেই আনন্দে লাফানো শুরু। লাফাতে লাফাতেই জার্সি খুলে তাতে চুমু খাওয়া। যখন আবিষ্কৃত হল তাঁর কাঁধ জুড়ে জাতীয় পতাকার ত্রিবর্ণে রঞ্জিত অভিনব ট্যাটু। কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দকে জড়িয়ে ধরা। দর্শকদের কাছ থেকে তেরঙা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দৌড়। স্বপ্নের দিনে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তাঁর পারুপল্লি কাশ্যপের। ছোটবেলা থেকে যে স্বপ্ন বোনা শুরু তার সেলিব্রেশনটা তো জমাটিই হবে! সাইনা নেহওয়াল চোট নিয়ে দেশে বসে। তবু কমনওয়েলথ গেমসে ব্যাডমিন্টন সোনা!

“এত বড় মাপের গেমসে সোনা জেতাটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। ছোটবেলা থেকে এই দিনটার স্বপ্ন দেখছি,” কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার পর বলে দেন কাশ্যপ। ২৭ বছরের হায়দরাবাদি ব্যাডমিন্টন তারকার কেরিয়ারে সেরা সাফল্য।

ডাবলসে রুপো জ্বালা-অশ্বিনীর।

চার বছর আগে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। তার দু’বছর পর লন্ডন অলিম্পিকে পদক না পেলেও ব্যাডমিন্টনে প্রথম ভারতীয় পুরুষ হিসাবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছিলেন। আর রবিবার গ্লাসগোয় সিঙ্গাপুরের এক নম্বর তারকা ডেরেক ওয়াং-কে উত্তেজক ফাইনালে ২১-১৪, ১১-২১, ২১-১৯ হারিয়ে আন্তর্জাতিক গেমসের ইতিহাসে প্রথম সোনা জেতার উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে না পেরে কাশ্যপ বললেন “শনিবার ফাইনালে উঠতে না পারার ফাঁড়া কাটাতে পেরে গতকাল থেকেই ফাইনালের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম। জয়টা আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।” সেটা আরও সত্যি মনে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াংয়ের পারিবারিক ব্যাডমিন্টন ঐতিহ্য দেখলে। ওয়াংয়ের বাবা ‘সি গেমসে’ ব্যাডমিন্টনে সোনাজয়ী সিঙ্গাপুরের শেষ প্লেয়ার। মা-ও দেশের হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলেছেন।

অন্য দিকে, বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় মহারাষ্ট্রের ভাশি-তে জন্মানো পারুপল্লি কাশ্যপ পরিবারের সঙ্গে যখন যেখানে থেকেছেন, সেখানকার সেরা ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে খেলাটার পাঠ নিয়েছেন। হায়দরাবাদে এগারো বছর বয়সে মহম্মদ আরিফের কাছে তো, দু’হাজার সাল থেকে চার বছর বেঙ্গালুরুতে প্রকাশ পাড়ুকোনের কাছে। পরে আবার ২০০৫-এ হায়দরাবাদে ফেরা ইস্তক পুল্লেলা গোপীচন্দের কাছে। তাঁর ধারণা, বেঙ্গালুরুতে থাকার সময় হাঁপানি রোগে ধরেছিল। এতটাই বেশি যে খেলোয়াড়জীবন নিয়েই সংশয় তৈরি হয়। প্রচণ্ড মনের জোর ও চিকিৎসায় সেরে উঠলেও এখনও প্রতি বছর এক বার ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়ে ফিট সার্টিফিকেট ‘ওয়াডা’ বা বিশ্ব ডোপ প্রতিরোধ সংস্থায় জমা দিয়ে তবেই কোর্টে নামার যোগ্যতা পেতে হয় তাঁকে। হয়তো সে জন্যই তাঁর ‘মোটিভেশনাল কোটস্’ হল, ‘জীবন সুতোয় ঝুলছে। বাকিটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।’ বলেন, “ওয়াডায় জমা দেওয়া সার্টিফিকেটটা কঠিন সব মেডিক্যাল টেস্ট দিয়ে নিতে হয় আমাকে। কিন্তু এ ছাড়া অন্য উপায় নেই। এটাই জীবন। যেটা আমাকে মেনে নিতেই হবে।”আন্তর্জাতিক সার্কিটে ধারাবাহিক পারফর্ম করলেও (যে জন্য বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১৪) বড়সড় কৃতিত্ব অধরা থাকাটা কাঁটা হয়ে উঠেছিল কাশ্যপের কাছে। এত দিনে সেটা গলা থেকে নামল। বলেছেন, “সোনা জিততে হবে মাথায় রেখেই নেমেছিলাম। নিজের আর দেশের জন্য খুব খুশি আমি।” কাশ্যপের হাত ধরেই গ্লাসগোয় শেষ দিন ১৫ নম্বর সোনা জেতা ছাড়াও ভারত হকিতে রুপো (বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০-৪ হার), ব্যাডমিন্টনেই পুরুষ সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ (গুরুসাই দত্ত) ও মেয়েদের ডাবলসে রুপো (জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা) জিতেছে।

ছবি এপি, পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

glasgow commonwealth games
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE